ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম ও ফ্রান্সে ব্যবহারযোগ্য ই-সিগারেট বা ডিসপোজেবল ভ্যাপ বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই পথে হাঁটার প্রস্তুতি নিচ্ছে আয়ারল্যান্ডও। এবার একই পথে হাঁটছে ব্রিটেনও। ভ্যাপ বিক্রি ও সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। আজ রোববার (১ জুন) থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে এই আইন।
ব্রিটেনের পরিবেশবিষয়ক জুনিয়র মন্ত্রী মেরি ক্রে বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পরিবেশ দূষণ ঠেকাতেই ই-সিগারেট বন্ধের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। এই ভয়ংকর ই সিগারেট দীর্ঘদিন ধরে আমাদের শিশুদের নিকোটিনে আসক্ত করেছে, রাস্তাঘাটে ভ্যাপের আবর্জনা ছড়িয়ে দিয়েছে। এখন সময় হয়েছে এগুলোকে বিদায় জানানোর।’
নতুন আইনের আওতায়, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে প্রথমবারে ২০০ পাউন্ড জরিমানা, আর বারবার আইন লঙ্ঘন করলে হতে পারে দুই বছরের কারাদণ্ড। ই-সিগারেট বা ডিসপোজেবল ভ্যাপ ২০২১ সালে ব্রিটেনে জনপ্রিয়তা পায়, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের মধ্যে। নানা ধরনের আকর্ষণীয় ফ্লেভার যেমন মিন্ট, ম্যাঙ্গো, তরমুজ ও চকলেট এই পণ্যের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়িয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০ লাখ ডিসপোজেবল ভ্যাপ ফেলে দেওয়া হয়েছে, যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
ডিসপোজেবল ভ্যাপ ২০২১ সালে ব্রিটেনে জনপ্রিয়তা পায়, ছবি: অ্যাঁশ ডট ওআরজি
স্বাধীন সংস্থা ‘ম্যাটারিয়াল ফোকাস’ জানিয়েছে, এসব ভ্যাপ থেকে বছরে প্রায় ৪০ টন লিথিয়াম নষ্ট হচ্ছে, যা দিয়ে চালানো যেত ৫ হাজার বৈদ্যুতিক গাড়ি। এ ছাড়া, ফেলে দেওয়া ভ্যাপ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিও রয়েছে বলে সতর্ক করেছে ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি সুইপ।
স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা অ্যাকশন অন স্মোকিং অ্যান্ড হেলথ জানায়, নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই ভ্যাপের ব্যবহার কমেছে। ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ডিসপোজেবল ভ্যাপ ব্যবহারের হার ২০২৪ সালে যেখানে ছিল ৫২ শতাংশ, ২০২৫ সালে তা নেমে এসেছে ৪০ শতাংশে।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের ১১ শতাংশ নিয়মিত ভ্যাপ ব্যবহার করেন, যা প্রায় ৫৬ লাখ মানুষ। আর ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোরদের মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ ৮০ হাজার। তবে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কিছু সমালোচনাও রয়েছে। অনেকে বলছেন, এতে নিকোটিন গ্রহণ কমবে না, বরং অবৈধ ও অনিরাপদ ভ্যাপের প্রবাহ বাড়তে পারে।
যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৃহৎ অনলাইন ভ্যাপ রিটেইলার ‘ভ্যাপ ক্লাব’-এর পরিচালক ড্যান মারচেন্ট বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র বিক্রয় বন্ধ করবে, ব্যবহার নয়। ফলে কালোবাজারে অনিরাপদ পণ্য ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়বে।’
তবে সরকার জানিয়েছে, ই-সিগারেট নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ধূমপান ছাড়তে সহায়ক বিকল্প ভ্যাপ পণ্য বাজারে পাওয়া যাবে, যাতে প্রাপ্তবয়স্কদের নিকোটিন ত্যাগে সহায়তা করা যায়।
সূত্র: বিবিসি ও এএফপি
