Home বিশ্ব নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আনছেন ট্রাম্প, কী এই গোল্ডেন ডোম

নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আনছেন ট্রাম্প, কী এই গোল্ডেন ডোম

২২ views

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেমন হতে যাচ্ছে সেই বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য নকশা বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের মেয়াদের শেষের দিকে তা কার্যকর করবেন ট্রাম্প।

জানুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের মাত্র কয়েকদিন পরই ট্রাম্প জানিয়েছিলেন ওই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পেছনে তার উদ্দেশ্য হলো ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ আকাশপথে আসা সব ‘নেক্সট জেনারেশন থ্রেট’- এর সঙ্গে মোকাবিলা করা।

নতুন বাজেট বিলে প্রাথমিকভাবে আড়াই হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। যদিও সরকার অনুমান করেছে যে কয়েক দশক ধরে এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় হবে।

এর আগে, কর্মকর্তারা সতর্ক করেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে ব্যবস্থা রয়েছে তা সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের কাছে থাকা ক্রমবর্ধমান অত্যাধুনিক অস্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার মতো নয়। গোল্ডেন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশ পথে আসা ‘পরবর্তী প্রজন্মের’ হুমকিকে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে বলে জানানো হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এই প্রকল্পের তদারকি করবেন স্পেস ফোর্সের জেনারেল মাইকেল গুয়েটলিন। বর্তমানে স্পেস ফোর্সের স্পেস অপারেশনের ভাইস চিফ জেনারেল গুয়েটলিন।

গোল্ডেন ডোম ১

গোল্ডেন ডোমের আদ্যেপান্ত উপস্থাপন করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প , ছবি: বিবিসি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার সাত দিনের মাথায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিরক্ষা বিভাগকে এমন এক ব্যবস্থার পরিকল্পনা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন, যা আকাশপথে চালানো হামলাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই জাতীয় হামলা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘সবচেয়ে বিপর্যয়কর হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

মঙ্গলবার ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই সিস্টেমে ভূমি, সমুদ্র ও মহাকাশে ‘পরবর্তী প্রজন্মের’ প্রযুক্তি থাকবে। এই তালিকায় রয়েছে মহাকাশ-ভিত্তিক সেন্সর ও ইন্টারসেপ্টর। কানাডা এই ব্যবস্থার অংশ হতে চেয়েছিল বলেও তিনি জানিয়েছেন।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন সফরের সময় কানাডার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিল ব্লেয়ার জানিয়েছিলেন যে, কানাডা ‘ডোম প্রজেক্ট’-এ অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে এর পেছনে যথার্থ ‘কারণ রয়েছে’ এবং এটা ‘দেশের স্বার্থে’।

তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, “ওই অঞ্চলে কী ঘটছে তা কানাডার জানা দরকার এবং আর্কটিকসহ আসন্ন হুমকি সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।”

গোল্ডেন ডোমের বিষয়ে ট্রাম্প জানিয়েছেন যে ওই সিস্টেম ‘বিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র বা মহাকাশ থেকে লঞ্চ করা ক্ষেপণাস্ত্রকেও বাধা দিতে পারবে।’

এই ব্যবস্থা কিছুটা ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ থেকে অনুপ্রাণিত। ইসরায়েল ২০১১ সাল থেকে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে আয়রন ডোম ব্যবহার করেছে।

ট্রাম্প 1

ওভাল অফিসে গোল্ডেন ডোমের নকশা চূড়ান্তের ঘোষণা দিচ্ছেন ট্রাম্প, ছবি: রয়টার্স

তবে গোল্ডেন ডোম এর তুলনায় বহুগুণ বড় হবে এবং তা বিস্তৃত রেঞ্জের হুমকিকে মোকাবিলা করার জন্য ডিজাইন করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

গোল্ডেন ডোম যেসব হুমকিকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে তার মধ্যে রয়েছে হাইপারসনিক অস্ত্র, যা শব্দের গতির চেয়ে দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম। ‘ফ্র্যাকশন্যাল অরবিটাল বোম্বার্ডমেন্ট সিস্টেম’ বা ফোবসও রয়েছে। ফ্র্যাকশন্যাল অরবিটাল বোম্বার্ডমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে মহাকাশ থেকে ওয়ারহেড নিক্ষেপ করা সম্ভব।

এসব হুমকির দিকে ইঙ্গিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “এগুলো সব আকাশেই নিষ্ক্রিয় করা হবে। এর সাফল্যের হার ১০০% এর খুব কাছে।”

এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, গোল্ডেন ডোমের লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রকে এমন সুযোগ করে দেওয়া যেন ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের আগে, আকাশে থাকা অবস্থায়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে সেগুলোকে থামানো যায়। এই বহুমুখী সিস্টেম কেন্দ্রীয় কমান্ডের আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই কর্মসূচির জন্য প্রাথমিকভাবে আড়াই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোট অঙ্ক গিয়ে দাঁড়াবে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে। প্রাথমিক আড়াই হাজার কোটি ডলার আসবে তার ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অন ট্যাক্স’ থেকে যদিও ওই বিল এখনও পাশ হয়নি।

কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস অবশ্য অনুমান করেছে যে ওই খরচ আরও অনেক বেশি হতে পারে। তাদের অনুমান গোল্ডেন ডোমের শুধুমাত্র মহাকাশ-ভিত্তিক অংশের জন্যই ২০ বছরে ৫৪ হাজার ২০০কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে পারে সরকার।

পেন্টাগনের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে তা রাশিয়া ও চীনের ডিজাইন করা নতুন ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো নয়।

ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেছেন, “বর্তমানে কোনও ব্যবস্থা নেই। আমাদের কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের ক্ষেপণাস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে- কিন্তু সেখানে কোনও ব্যবস্থাপনা নেই…এমনটা (গোল্ডেন ডোমের মতো) আগে কখনও হয়নি।”

ট্রাম্প বলেন, “আমরা সত্যিকার অর্থেই সেই কাজটি সম্পন্ন করতে যাচ্ছি, যা প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ৪০ বছর আগে শুরু করেছিলেন। এর মাধ্যমে আমেরিকার ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি চিরতরে শেষ হবে।”

গোল্ডেন ডোম

গোল্ডেন ডোম রিগ্যানের কৌশলগত প্রতিরক্ষা উদ্যোগের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত করবে, ছবি: ইন্ডিয়া টুডে

তবে মহাকাশভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কার্যকারিতা, খরচ ও এটি কি নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করবে—এসব বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন থেকে গেছে। ডেমোক্র্যাট সদস্যরাও এই প্রকল্পে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্পেসএক্স বর্তমানে এই প্রকল্পের প্রধান প্রযুক্তি সরবরাহকারী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ডেমোক্র্যাটদের দাবি, ইলন মাস্ক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একজন বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। তিনি প্রেসিডেন্টের প্রচারে বড় অঙ্কের অর্থ অনুদান দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে তার কোম্পানির দরপত্র প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকা নিয়ে স্বার্থের সংঘাতের শঙ্কা রয়েছে।

এই বিষয়ে ডেমোক্র্যাট দলের ৪২ জন আইনপ্রণেতা যৌথভাবে একটি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তারা চিঠিতে লিখেছেন, “গোল্ডেন ডোম চুক্তির ওপর যদি ইলন মাস্ক কোনও ধরনের অন্যায্য প্রভাব খাটান, তবে এটি হবে স্বার্থের সংঘাতের নিয়ম ভঙ্গ করার আরও একটি উদাহরণ।”

মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি এই প্রশ্নের উত্তর দেননি যে কোন কোন কোম্পানি এই প্রকল্পে অংশ নেবে। বরং তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই প্রকল্প যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে শিল্পখাতকে উৎসাহিত করবে। এর মধ্যে রয়েছে আলাস্কা, ইন্ডিয়ানা, ফ্লোরিডা ও জর্জিয়া।

গোল্ডন ডোম ৪

প্রস্তাবিত অর্থায়ন অনুমোদিত না হলে ‘পুরো প্রকল্পের সময়সীমা শেষ হয়ে যাবে, ছবি: রয়টার্স

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক এক ব্রিফিংয়ের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি “নিখুঁত ও পরিশীলিতভাবে বাড়বে” কারণ চীন ও রাশিয়া মার্কিন প্রতিরক্ষার “ফাঁকগুলো কাজে লাগাতে” নিজেদের সিস্টেমগুলোর ডিজাইন করতে তৎপর।

তবে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা অর্থায়ন নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। চলতি মাসে কংগ্রেসনাল বাজেট কার্যালয় গোল্ডেন ডোমের জন্য দুই দশকে ৮৩ হাজার ১০০ কোটি ডলার খরচ হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছে।

এদিকে এখন পর্যন্ত রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা তাদের বিস্তৃত ১৫ হাজার কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা প্যাকেজে গোল্ডেন ডোমের জন্য প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসে এই বাজেট পাস করানো রিপাবলিকানদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য হবে।

প্রস্তাবিত এই অর্থায়ন অনুমোদিত না হলে ‘পুরো প্রকল্পের সময়সীমা শেষ হয়ে যাবে’, নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন প্রকল্পটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এক শিল্প খাত নির্বাহী।

সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স ও ইন্ডিয়া টুডে

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ