ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে নতুন করে শুরু হওয়া সামরিক অভিযান ও ত্রাণ প্রবেশে বিধিনিষেধ বন্ধ না করলে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্সের নেতারা।
গত শুক্রবার ইসরায়েল গাজায় নতুন সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেয়। এরপর সোমবার প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল পুরো গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেবে। এদিকে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা আগেই গাজায় আসন্ন দুর্ভিক্ষের বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
গতকাল সোমবার (১৯ মে) ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বেসামরিক জনগণকে জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদানে ইসরায়েল সরকারের অস্বীকৃতি আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করেছে, যা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের যেকোনো উদ্যোগের বিরোধিতা করি। পরিস্থিতি না বদলালে আমরা সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞাসহ পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করব না।’
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ব্রিটেনের বিরোধীদলীয় নেতা কিয়ের স্টারমার, কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মার্ক কার্নি এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্রো।
এই হুঁশিয়ারির প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, ‘লন্ডন, অটোয়া ও প্যারিসের নেতারা ৭ অক্টোবরের গণহত্যার ঘটনায় হামলাকারীদের পুরস্কৃত করতে চাইছেন এবং এ ধরনের আরও হামলাকে উৎসাহ দিচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল পুরোপুরি বিজয়ের আগ পর্যন্ত আত্মরক্ষামূলক অভিযান চালিয়ে যাবে।’
তিনি দাবি করেন, যুদ্ধ থামাতে হলে গাজায় আটক সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করতে হবে এবং গাজা ভূখণ্ডকে ‘অসামরিক অঞ্চল’ ঘোষণা করতে হবে।
এরই মধ্যে মার্চের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজায় ওষুধ, খাদ্য ও জ্বালানির প্রবেশ আটকে রেখেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির চাপ প্রয়োগ করতেই তারা এ কৌশল নিচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
পশ্চিমা তিন নেতা তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে আমরা সবসময় সমর্থন করি, কিন্তু গাজায় বর্তমান সামরিক অভিযান সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’
তারা বলেন, ‘নেতানিয়াহু সরকার গাজায় যে মর্মান্তিক পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার পক্ষে আমরা দাঁড়াতে পারি না।’ একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির উদ্যোগকেও তারা সমর্থন জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন তিন নেতা। হামাস এই বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এটি আন্তর্জাতিক আইন পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আক্রমণে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। প্রায় গোটা গাজা অঞ্চলই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবিক সংকটে পড়েছেন।
পাকিস্তানের বেসরকারি বিমান সংস্থা এয়ার-সিয়াল বাংলাদেশে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছে। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এ অনুমোদন দিয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবির ভূঁইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য আমরা এয়ারসিয়ালকে অনুমোদন দিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠিয়েছি।’
নিয়ম অনুযায়ী এয়ার-সিয়ালকে এখন বাংলাদেশে একটি জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) নিয়োগ করে ফ্লাইট স্লটের জন্য আবেদন করতে হবে। কর্তৃপক্ষ জানায়, এয়ার-সিয়াল শুধু বাংলাদেশ-পাকিস্তান রুটেই ফ্লাইট পরিচালনা করবে না, বরং মধ্যপ্রাচ্যসহ আন্তর্জাতিক রুটে ট্রানজিট সুবিধাও দেবে।
পাকিস্তানের শিয়ালকোট ভিত্তিক এয়ার-সিয়াল ২০১৫ সালের আগস্টে যাত্রা শুরু করে। তাদের ছয়টি এয়ারবাস রয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাই জিন্নাহ-কে করাচি-ঢাকা রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন দেয় বেবিচক।
বাংলাদেশের পাকিস্তানস্থ হাইকমিশনার মো. ইকবাল হুসেইন বলেন, অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে এয়ারসিয়াল দুই মাসের মধ্যেই ঢাকা রুটে ফ্লাইট চালু করতে পারবে।
তিনি জানান, ফ্লাই জিন্নাহ বর্তমানে তাদের বিমান বহর সম্প্রসারণের কাজ করছে। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা পিআইএ ২০১৮ সালে আর্থিক ক্ষতি ও যাত্রীসংখ্যা কমে যাওয়ায় বাংলাদেশে তাদের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয়।
সূত্র: সিএনএন