ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারত। মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানের একাধিক জায়গায় হামলা চালিয়েছে দেশটি। এরইমধ্যে পাকিস্তান সরকার আট জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে।
হামলা নিয়ে ভারতের বক্তব্য, পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিগুলোকে টার্গেট করা হয়েছিল। বহু ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’। যার লক্ষ্য ছিল বাহাওয়ালপুর শহর। এই শহরে হামলার কথা স্বীকার করেছে পাকিস্তানও। দেশটির দাবি, বাহাওয়ালপুরে ভারতের হামলায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৩১ জন।
লাহোর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে বাহাওয়ালপুর শহর পাকিস্তানের দ্বাদশ বৃহত্তম শহর। এখানে রয়েছে জইশ-ই-মোহাম্মদের শক্ত ঘাঁটি। ‘জামিয়া মসজিদ শুভান আল্লাহ্’ ক্যাম্পাসে রয়েছে জইশের সদর দপ্তর। এটি উসমান-ও-আলি ক্যাম্পাস নামেও পরিচিত। ১৮ একর জমি জুড়ে এই ক্যাম্পাস বিস্তৃত। জইশের প্রতিষ্ঠাতা মৌলানা মাসুদ আজহার বাহাওয়ালপুরের বাসিন্দা। আর এই ক্যাম্পাসেই থাকেন তিনি।
২০০২ সালে সরকারি ভাবে জইশ-ই-মোহাম্মদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তা কেবল খাতায়কলমে। পাকিস্তানের এই ক্যাম্পাসে বসে বিনা বাধায় কাজ করত জইশ জঙ্গিরা। জামিয়া মসজিদ শুভান আল্লাহ্ মসজিদে মাদ্রাসা জইশ-ই-মোহাম্মদের তহবিলে চলে। ২০১১ সাল পর্যন্ত এটি একটি সাধারণ ভবন ছিল। ২০১২ সালে একে বৃহৎ প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পরিণত করা হয়। এই মাদ্রাসায় ৬০০-র বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।
১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর কাঠমান্ডু থেকে দিল্লিগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান অপহরণ করেছিল পাঁচ হরকাত-উল-মুজাহিদিন জঙ্গি। তাতে ১৯০ জন যাত্রী ছিলেন। বিমানটি আফগানিস্তানের কান্দাহার দিয়ে ঘোরানো হচ্ছিল। সেই সময় তা অপহরণ করা হয়। ভারত সে সময় মাসুদ আজহার, ওমর শেখ এবং মুস্তাক জারগার নামের তিন জঙ্গিকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। এই মাসুদ ১৯৯৪ সাল থেকে ভারতের জেলে বন্দি ছিলেন। আফগান জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিলেন তিনি।
ভারত মুক্তি দেওয়ার পর ২০০০ সালে তিনিই জইশ-ই-মোহাম্মদ গঠন করেন। ভারতে একাধিক ছোটবড় সন্ত্রাসবাদী হামলার নেপথ্যে ছিল এই সংগঠন। এ ছাড়া বহওয়ালপুরের কিছু কিছু জায়গায় অপর পাকিস্তানি সংগঠন লস্কর-ই- তৈয়বার জঙ্গিরাও সক্রিয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের সঙ্গেও এই শহরের যোগ রয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। এরপরেই পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ নেয় ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছিলেন, ভারত এই হামলার যোগ্য জবাব দেবে। তিনি সেনাবাহিনীকেও পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তানে হামলা চালাল ভারত।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস ও আনন্দ বাজার