শরিয়াহ আইন মেনে চুলের ছাঁট ও দাঁড়ি না কামানোয় বহু মানুষকে আটক করেছে আফগানিস্তানের নৈতিক পুলিশ। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো ধরনের যাছাই-বাছাই ছাড়া ইচ্ছেমতো মানুষকে আটক করে নৈতিক পুলিশ। ছয় মাস আগে পুরুষরা কিভাবে চুল ছাঁটবে আর দাঁড়ি লম্বা রাখবে সেই বিষয়ে নির্দেশনা দেয় পাপ ও পুণ্য মন্ত্রণালয়। তবে নিয়ম অনুযায়ী তা না করায় অনেককে আটক করা হয়েছে। সঙ্গে আটক হয়েছেন নাপিতরা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রমজান মাসে নামাজ আদায় বাধ্যতামূলক করে আদেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এই আদেশ পালন করা হচ্ছে কি না তা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করে পুলিশ। অনেকে মসজিদে নামাজ পড়তে না যাওয়ায় তাদের আটক করা হয়।

কাবুলের শাহ ডো শমশিরা মসজিদে প্রবেশের আগে মুসল্লিদের তল্লাশি করছে তালেবান সদস্যরা, ছবি: নিউ ইয়র্ক পোস্ট
গত আগস্টে নারীদের চলাফেরা, পোশাক, পুরুষদের চুল ছাঁটা ও অন্যান্য কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বেশ কিছু আদেশ দেয় মন্ত্রণালয়। এ বিষয়গুলো তদারকির জন্য রয়েছে সাড়ে তিন হাজার পুরুষ পরিদর্শক।
এদিকে এই ধরনের আইনের কারণে আটক হচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাদের মধ্যে যেমন পুরুষ আছেন তেমনি রয়েছেন নারীও। এতে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা। কারণ নিষেধাজ্ঞার কারণে আয় কমছে। বিশেষ করে নাপিত, হেয়ার ড্রেসার, দর্জি ও বিয়ের অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশনের কাজে যুক্ত মানুষদের।

হেলমান্দ প্রদেশে নাপিতদের দাঁড়ি কামানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তালেবান, ছবি: নিউ ইয়র্ক পোস্ট
২০২১ সালের আগস্টে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে তালেবান। এবার ক্ষমতায় বসেই নারীদের জনসম্মুখ থেকে অদৃশ্য করে দিয়েছে গোষ্ঠীটি। ষষ্ঠ শ্রেণির পর নিষিদ্ধ করা হয়েছে নারীদের লেখাপড়া। আর কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাদের চাকরির অধিকারও।
এই ধরনের আইন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলছে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে। এতে দেশটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণায় বলছে, শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে নারীদের নিষিদ্ধ করায় বছরে দেশটির ক্ষতি হবে এক দশমিক চার বিলিয়ন ডলার।
তবে এ নিয়ে চিন্তিত নন তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দাজা। সদ্য সমাপ্ত ঈদুল ফিতরের আগে এক বার্তায় তিনি জানান, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে এটা প্রয়োজন। কারণ এমন আইন ভবিষ্যত প্রজন্মকে ভুল বিশ্বাস ও অনৈতিক অভ্যাস থেকে রক্ষা করবে।
সূত্র: দ্য ন্যাশনাল ও দ্য ইনডেপেন্ডেন্ট