ব্যক্তিগত আয় ও পারিবারিক আয়-ব্যয়ের হিসাব ইউক্রেনের জনগণের কাছে প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ২০১৯ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে জেলেনস্কির আর্থিক স্বচ্ছতা অব্যাহত রয়েছে। সম্পদের হিসাব প্রকাশকে তার দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে দাবি করেছে তার প্রশাসন।
জেলেনস্কির পরিবার মোট ১ কোটি ৫৩ লাখ রিভনিয়া (ইউক্রেনের মুদ্রা) আয় করেছে; যা প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার মার্কিন ডলারের সমান। গত বছরের তুলনায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের আয় বৃদ্ধির কথাও জানানো হয়েছে।
তার মোট আয়ের যে হিসাব প্রকাশিত হয়েছে; তার মধ্যে ২ লাখ ৭ হাজার ডলার আয় হয়েছে সরকারি বন্ড বিক্রি করে। বাকি আয়ের মধ্যে ছিল প্রেসিডেন্টের বেতন, ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদ ও ব্যক্তিগত সম্পদ ভাড়া থেকে প্রাপ্ত অর্থ।
আগের বছরের তুলনায় জেলেনস্কির আয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ হল তাদের পারিবারিক মালিকানায় থাকা স্থাবর সম্পদ ভাড়া। যুদ্ধের সময় আংশিকভাবে স্থগিত থাকা ভাড়ার অর্থ পাওয়ার কারণেই এই বৃদ্ধি ঘটেছে। ঘোষণাপত্রে জেলেনস্কির বেতন ও ব্যাংকে জমা পুঁজির সুদসহ আয়ের উৎসগুলোও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ঘোষণাপত্রে প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারের সদস্যদের বছরে আয়ের পরিমাণ ছিল ১.২৪ কোটি ইউক্রেনীয় রিভনিয়া ২০২৩ সালে প্রেসিডেন্টের পরিবারের সম্পদ, বাড়ি বা যানবাহনে কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে ভাষণ দিচ্ছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি, ছবি: দ্য স্ট্রেইট টাইমস
২০২৩ সালে জেলেনস্কি ও তার পরিবারের সদস্যরা ৩ লাখ ১৬ হাজার ৭০০ ডলার আয়ের হিসাব পেশ করেছিলেন। ২০২২ সালে জেলেনস্কির বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার ইউক্রেনীয় রিভনিয়া বা ৩ লাখ ৬ হাজার ডলারে। এর আগের বছর ২০২১ সালে আয় ছিল ৩৭ লাখ রিভনিয়া। সেই হিসেবে এক বছরে তার আয় বেড়েছিল তিন গুণেরও বেশি।
অতীতের ঘোষণাপত্রে তার প্রেসিডেন্ট থাকার মেয়াদের সময়কালে আয়ের ওঠানামা দেখা যায়। ২০২১ সালে জেলেনস্কি ও তার পরিবার প্রায় ২ লাখ ৮৫ হাজার ডলার আয়ের কথা জানায়। এই আয়ের প্রায় অর্ধেকই এসেছে ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করে।
২০২৪ সালের ঘোষণাপত্রে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, গত বছরের মতো চলতি বছরেও গাড়ি-বাড়ির মালিকানার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি তার।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের মাটিতে প্রথম বার হামলা চালায় রাশিয়া। যুদ্ধের সময়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বেশ কিছু সরকারি বন্ড বিক্রি করে ও নিজস্ব সম্পত্তির বাড়তি ভাড়া আদায় করে অতিরিক্ত আয় করেছিলেন।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে নিজ কার্যালয়ে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, ছবি: আনাদুলু এজেন্সি
২০২২ সালে রাশিয়া যখন ইউক্রেন আক্রমণ করে, তখন তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ২ কোটি ডলার। বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে তাকে ধনকুবের বলে ঘোষণা করা হলেও সেই দাবি সংক্রান্ত তথ্য পেশ করা হয়নি। পরবর্তীতে ‘ফোর্বস মিডল ইস্ট’-এর একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘ধনকুবের’ হওয়া থেকে অনেকটাই দূরে রয়েছেন জেলেনস্কি।
ইউক্রেনে জেলেনস্কির একটি ফ্ল্যাট ছিল যার মূল্য প্রায় ১০ লাখ ডলার। ২০১৯ সালে জেলেনস্কি ইতালির ফোর্ট দে’মারমিতে একটি ভিলা কিনেছিলেন। ভিলাটি প্রায় ৪০ লাখ ডলারে ক্রয় করেছিলেন তিনি। ২০২০ সালে সেটি বিক্রি করে দেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেলেনস্কি আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারি বেতন পান। সেই বেতনের পরিমাণ অন্যান্য দেশের প্রেসিডেন্টের বেতনের তুলনায় কম। তার মাসিক বেতন প্রায় ২৮,০০০ ইউক্রেনীয় রিভনিয়া।
রাজনীতি, দেশ চালানোর বাইরে ব্যক্তি জেলেনস্কির চরিত্র বেশ বর্ণময়। জীবনের শুরুতে রাজনীতির সঙ্গে তার কোনও সংযোগই ছিল না। বরং সৃজনশীল দুনিয়াই তাকে টেনেছিল। পেশা হিসাবে অভিনয়কে বেছে নিয়েছিলেন।

পারিবারিক আয়ের হিসাব ঘোষণা করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি , ছবি: দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস
১৯৭৮ সালের ২৫ জানুয়ারি ইউক্রেনের এক ইহুদি পরিবারে জন্ম হয় তার। মধ্য ইউক্রেনের ক্রিভি রিহ শহরে তার বেড়ে ওঠা। তার বাবা আলেকজান্ডার জেলেনস্কি পেশায় অধ্যাপক ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তার মা রিমা জেলেনস্কি ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার।
আইন নিয়ে পড়াশোনা করা জেলেনস্কি কিয়েভ ন্যাশনাল ইকোনমিক ইউনিভার্সিটি থেকে আইন নিয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। আইন নিয়ে পড়াশোনা করলেও এ পেশা নিয়ে এগোননি তিনি। ইউক্রেনের প্রথম ইহুদি প্রেসিডেন্ট তিনি। এক সময় টিভির পর্দায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের চরিত্রে অভিনয় করা জেলেনস্কি সত্যি সত্যিই দেশটির প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠেন।
দুর্নীতি রোধ করতে ও আর্থিক স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ২০১৪ সালে ইউক্রেনে চালু হয়েছিল সম্পদ ঘোষণা। সরকারি কর্মকর্তাদের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে দেশটিতে।
এই আয়-ব্যয়ের হিসাব দেশবাসীর সামনে প্রকাশ করলেন প্রেসিডেন্টও। পারিবারিক সম্পদ, আয়, ব্যয় ও অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের হিসাবটি সম্প্রতি ঘোষণা করেছে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়।
সূত্র: দ্য কিয়েভ ইন্ডেপিডেন্ট, এমএসএন ও মানি কন্ট্রোল