গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ২০২১ সালে মিয়ানমারের ক্ষমতার দখল নেয় সামরিক জান্তা। এই ঘটনার মাধ্যমে বহুধা সমস্যার জালে আটকে পড়েছে দেশটি। এর মধ্যে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে গৃহযুদ্ধে জড়িয়েছে গণতন্ত্রপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। হতাহত ছাড়াও এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখো মানুষ, যার বিরূপ প্রভাব পড়েছে কৃষিতে। যুদ্ধের কারণে চাষবাস করতে না পেরে জীবন বাঁচাতে এখন আফিম চাষ করছেন বাস্তুচ্যুত কৃষকরা।
যুদ্ধের জন্য বাস্তুচ্যুত হন শান রাজ্যের মোয়ে বে গ্রামের কৃষক অং হলা। বর্তমানে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন রাজ্যটির পেকন শহরে। তিনি জানান, যে ধরনের শস্য আগে চাষ করতেন তা নতুন স্থানে লাভজনক নয়। কিন্তু পপি চাষ সে তুলনায় ভালো। এ জন্য জীবন বাঁচাতে পপি চাষ করছি।

কারেন রাজ্যের সীমান্ত এলাকার পপি ক্ষেতে কাজ করছেন বাস্তুচ্যুত এক ব্যক্তি, ছবি: টিএক্সএন
তিনি আরও জানান, সবাই মনে করে বড় লোক হওয়ার জন্য পপি (আফিম) চাষ করছি। কিন্তু বাস্তবতা হলো শুধু বাঁচার জন্য এটি করছি। যদি আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকত সেও এটাই করত, যা আমি করছি। হেরোইনের মূল উপাদান উৎপাদনের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে অং জানান, এটির আয় আমাকে অনাহার থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
আফিম উৎপাদনে আগে আফগানিস্তানের পেছনে থাকলেও বর্তমানে এক নম্বরে রয়েছে মিয়ানমার। জাতিসংঘের ড্রাগস এন্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি) জানায়, ২০২৩ সালে আফগানিস্তানকে টপকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আফিম উৎপাদনকারী হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে দেশটি। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক হিসেবে দেশটির এই খাতের বাজার ৫৮৯ মিলিয়ন থেকে ১ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

শান রাজ্যের নামপাক্তা গ্রামের একটি পপি ক্ষেত, ছবি: দ্য হিন্দু
আয় থাকায় ক্রমে পপি চাষ বাড়ছে দেশটিতে। নানান ধরনের শস্য, বিন কার্ড, সবজি ও টমেটোর থেকেও বেশি লাভ হয় আফিম চাষে। ইউএনওডিসি জানায়, প্রক্রিয়া শেষে এক কেজি আফিম বিক্রি হয় ৩০০ ডলার।
৪৮ বছর বয়সী অং নাইং জানান, জীবনযাপন কঠিন হয়ে যাওয়ায় পপি চাষ বেড়েছে। যারা গ্রামে থাকতে পারছে না, তারা পালিয়ে এসে জঙ্গলে পপি ক্ষেতে কাজ করছে। আর এখানে কাজ করা অধিকাংশ কৃষকই বাস্তুচ্যুত।

স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক হিসেবে আফিম বিক্রিতে দেশটির বাজার ৫৮৯ মিলিয়ন থেকে ১ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ছবি: এনডিটিভি
জাতিসংঘের কোর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স বলছে, সংঘাতপূর্ণ স্থান থেকে পালিয়ে গিয়ে পপি ফার্মে কাজ করা কোনো সমাধান নয়। বরং এতে বাড়ছে ঝুঁকি। এ পর্যন্ত ৩৫ লাখ মানুষ হয়েছে বলেও জানিয়েছে এই সংস্থাটি। অং নাইং জানান, মাথার ওপর সব সময় উড্ডয়ন করে সামরিক বিমান। আমরা ভয় আর শঙ্কা নিয়ে কাজ করি পপি ক্ষেতে। এখানে নিরাপদ নই আমরা।
জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চার বছর ধরে চলা সংঘাতে দেশটি নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন। এর মধ্যে অন্যতম এক গোষ্ঠীর সঙ্গে আরেক গোষ্ঠীর সংঘাত, দারিদ্রতা ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি। এ অবস্থায় সশস্ত্র গোষ্ঠী, সীমান্ত মিলিশিয়া ও সামরিক বাহিনী ব্যস্ত স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও লাভজনক মাদকের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে।
সূত্র: এনডিটিভি, দ্য ইরাবতি ও ফ্রান্স২৪