Home বিশ্ব মায়াময় কালো বালুর সৈকতে মুক্তার মেলা

মায়াময় কালো বালুর সৈকতে মুক্তার মেলা

মোহাম্মদ রবিউল্লাহ
৩৮ views

সাদা ও হলুদ বালুর সৈকত অনেকে দেখলেও কালো বালুর সৈকত খুব কম মানুষই দেখেছে। কালো বালুর সৈকত সাধারণত বালুর রঙ কালো বা ধূসর রঙের হয়। কালো বালুর উপরে ছোট ছোট শিলাখণ্ড, কোথাও দানবীয় ব্যাসল্ট রক। গোধূলির নরম আলো কালো সৈকতের উপরে যেন সোনালী জরির পাড় বিছিয়ে দেয়। মনে হয় যেন মুক্তার মেলা।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অতুলনীয় এই সৈকতগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত। সমুদ্রের ফেনাময় জলরাশি এই কুচকুচে কালো সৈকতে আছড়ে পড়ে, যেন সাদা-কালোর ক্যানভাস তৈরি করে।

হ্যালো বাংলাদেশ’র পাঠকদের জন্য রইল বিশ্বের চারটি কালো সৈকতের বর্ণনা।

সান্তিয়াগো বিচ, চিলি
সান্তিয়াগো বিচ চিলির একটি কালো বালুর সৈকত, যা দেশটির কেন্দ্রীয় উপকূলে অবস্থিত। এটি বিশেষভাবে আকর্ষণীয় কারণ এখানে আগ্নেয়গিরির লাভা থেকে তৈরি কালো বালু দেখা যায়, যা এই সৈকতটিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে। সান্তিয়াগো বিচের শান্ত পরিবেশ ও সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য পর্যটকদের কাছে শান্তিপূর্ণ গন্তব্য হিসেবে পরিচিত।

চিলি

সান্তিয়াগো বিচ চিলির একটি কালো বালুর সৈকত, ছবি: দিস রিমোট কর্ণার

সৈকতের কাছে রয়েছে কিছু জনপ্রিয় স্থান যেমন রেস্টুরেন্ট ও কফি শপ। যেখানে পর্যটকরা সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করতে করতে আরাম করতে পারেন। এছাড়া, এই সৈকতটি সমুদ্রের স্নোর্কেলিং ও সার্ফিংয়ের জন্যও জনপ্রিয়। প্রথমবার যারা এই সৈকতে আসেন এর আইকনিক দৃশ্য দেখে হবাক হয়ে যান। বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে প্রতি বছর লাখো দর্শনার্থী কালো বালুর এই সৈকতে ঘুরতে আসেন।

পুনালুউ বিচ, হাওয়াই
প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের একটি অঙ্গরাজ্য হাওয়াই। এর দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত পুনালুউ বিচ তার কালো বালুর জন্য বিখ্যাত। এটি একটি আগ্নেয়গিরির লাভা দ্বারা তৈরি, যা এক অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তৈরি করেছে। সৈকতটি শান্ত পরিবেশ ও বিশাল ঢেউয়ের জন্য জনপ্রিয়।

হাওয়াই

হাওয়াইয়ের পুনালুউ বিচ তার কালো বালুর জন্য বিখ্যাত, ছবি: ইলি ডেকোর ডটকম

যেখানে পর্যটকরা স্নোর্কেলিং ও সাঁতার কাটার জন্য আসেন। এছাড়াও সৈকতটি হাওয়াইয়ের প্রাণি জগতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কালো তিমি ও সামুদ্রিত কচ্ছপ দেখতে পাওয়া যায়। ব্যতিক্রমী তিমি ও কচ্ছপ দেখতে এখানে প্রতিদিনই ভিড় করেন ভ্রমণপিপাসুরা। প্রাকৃতিক এই লীলাভূমি দর্শনার্থীদের প্রতিনিয়ত আনন্দ দিয়ে যায়।

রেইনিসফিয়ারা বিচ, আইসল্যান্ড
আইসল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত রেইনিসফিয়ারা বিচ একটি অসাধারণ কালো বালুর সৈকত, যা আগ্নেয়গিরির লাভা প্রবাহের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। এই সৈকতের চারপাশে বিশাল আগ্নেয়গিরির পাথর ও নানা আকৃতির শিলা দেখতে পাওয়া যায়, যা এর আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ ছাড়াও সৈকতটি পেঙ্গুইনসহ অন্য প্রজাতির পাখির অভয়ারণ্য হিসেবেও পরিচিত। আটলান্টিক মহাসাগরের এই অংশে এক ধরনের ঢেউয়ের সৃষ্টি হয় যা ‘স্নিকার ওয়েভ’ হিসেবে পরিচিত; অনেকে ‘কিং অব ওয়েভও’ বলে থাকেন। এটিকে এক ধরনের ঘুমন্ত কিন্তু প্রচণ্ড বেগবান ঢেউয়ের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। ঘুমন্ত কারণ এই ঢেউ কখন যে সৃষ্টি হবে তা বলা মুশকিল।

আইসল্যান্ড

লাভা প্রবাহে সৃষ্টি হয়েছে আইসল্যান্ডের রেইনিসফিয়ারা বিচ ,ছবি: ইউএফএস ম্যাগাজিন

ছোট ছোট ঢেউগুলো একসঙ্গে হয়ে বিশাল ও প্রচণ্ড শক্তিশালী ঢেউয়ে পরিণত হয়ে সৈকতে আছড়ে পড়ে। সেখানে থাকা মানুষ বা অন্য যেকোনো কিছুকে মুহূর্তেই স্রোতের সঙ্গে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সবকিছু একদম চোখের নিমিষে ঘটে যায়; তাই কারো পক্ষে সাহায্য করা একদম অসম্ভব।

লাভা বিচ, ইন্দোনেশিয়া
আগ্নেয়গিরির লাভা প্রবাহের কারণে তৈরি হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত লাভা বিচ, এটি পুরোপুরি কালো বালুর সৈকত। দৃর্ষ্টিনন্দন সৈকতটি বালি দ্বীপের উত্তরে অবস্থিত। এখানে আগ্নেয়গিরির ধ্বংসাবশেষ থেকে তৈরি কালো বালি সৈকতের অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়।

বালি

নয়নাভিরাম ইন্দোনেশিয়ার কালো বালুর সৈকত, ছবি: ইলি ডেকোর ডটকম

এর আশপাশে অবস্থিত সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্য ও সমুদ্রের বিস্তীর্ণ দৃশ্য সৈকতটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলেছে। এটি ফ্লোরেস সাগরের একটি আগ্নেয়গিরির পাথরের স্তরযুক্ত ডাইভিং স্বর্গ হিসেবে খ্যাত। সৈকতের মনোরম পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের কাছে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

জনপ্রিয় কালো বালুর সৈকত
বিশেষত আগ্নেয়গিরির লাভা বা তুষারের অবশিষ্টাংশ থেকে সৃষ্টি হয় কালো বালুর সৈকত। হাওয়াই-আইসল্যান্ড-চিলি-ইন্দোনেশিয়া ছাড়াও নিউজিল্যান্ড, জাপানের কালো সৈকতও বেশ জনপ্রিয়। কালো বালির সৈকত সাধারণত আগ্নেয়গিরির লাভা প্রবাহিত হওয়ার পর সেগুলো ঠাণ্ডা হয়ে বালুর আকারে পরিণত হয়। বহু পর্যটক এ ধরনের সৈকতে শান্ত পরিবেশ উপভোগ করতে আসেন।

তথ্যসূত্র: ট্রিপ অ্যাপভাইজার ও ট্রাভেল গাই

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ