ভালোবাসা অন্ধ। কোনো ধরনের নিয়ম অনুসরণ করে না। আর প্রথাগত কোনো আচার-আচরণ দিয়ে একে ব্যাখ্যাও করা যায় না। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ঘটেছে ভারতের গুজরাট প্রদেশে। প্রিয় সুজুকি ওয়াগান গাড়ি বিক্রি বা ময়লার ভাগাড়ে না ফেলে বরং জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান করে সেটিকে কবর (সমাধি) দিয়েছেন ব্যবহারকারী।
গুজরাটের পাদারসিঙ্গা গ্রামের ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী সঞ্জয় পোলারা। প্রায় ১৮ বছর ধরে ব্যবহার করেছেন সুজুকি ওয়াগন আর গাড়িটি। যেদিন এটি ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে আসেন, এরপর তার আর্থিক ভাগ্য দ্রুত বদলাতে শুরু করে। এজন্য পোলারা পরিবার এটিকে নাম দিয়েছে ‘লাকি কার’। কিন্তু যন্ত্রের জীবন লম্বা সময় সার্ভিস দেওয়ার পর এখন বিকল হওয়ার পথে।
তবে সুজুকির মালিক এটিকে বিক্রি বা ভাগাড়ে নয়, বরং সৌভাগ্যের বন্ধু হিসেবে প্রাপ্ত মর্যাদা দিতে চেয়েছেন। এজন্য রীতিমতো পাড়াপড়শি ডেকে ব্যাপক অনুষ্ঠানের আয়োজন করো হয়। অনুষ্ঠান বলতে গাড়িটিকে সমাধি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পোলারা পরিবার। আর গাড়ির বিদায়ী অনুষ্ঠানকে প্রাণ দিতে দাওয়াত দেওয়া হয় এক হাজার ৫শ’ অতিথিকে। এজন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় খরচ হয় ৫,৩৭,২৭১ টাকা (৪৫০০ ডলার)।
একজনকে চিরবিদায় জানাতে যা যা প্রয়োজন এর সবকিছুই করেন তারা। কোনো কিছুরই কমতি রাখা হয়নি প্রিয় গাড়ির শেষ বিদায় অনুষ্ঠানে। গাঁধা ফুলের মালা পরানোর পাশাপাশি গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো হয় গাড়িটিকে। এরপর ১৫ ফুট গর্তের ভেতর ক্রেন দিয়ে অতি যত্নে সমাধি দেয়া হয় গাড়িটিকে। অবশ্য এর আগে বিদায়ী মিছিল, প্রার্থনা আর শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। তাতে যোগ দেন আগত অতিথিরা।
১৫ ফুট গর্তের ভেতর ক্রেন দিয়ে অতি যত্নে সমাধি দেয়া হয় গাড়িটিকে, ছবি: ইন্ডিয়া টিভি
সুজুকি ছাড়াও অডি রয়েছে সুরাটের নির্মাণ ব্যবসায়ী সঞ্জয় পোলারার। এরপরও কেন এই গাড়ির প্রতি ভালোবাসা সে সম্পর্কে জানান, গাড়িটি যন্ত্র থেকেও আরও বেশি কিছু। আমার সাফল্য যাত্রার বন্ধু এটি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উদাহরণ রেখে যেতেই আমরা এটিকে সম্মান জানিয়েছি। এজন্য বিক্রি করার পরিবর্তনে এটিকে সমাধি দিয়ে সম্মান জানিয়েছি।
মজার ব্যাপার হলো গাড়ির প্রতি এমন ভালোবাসা সঞ্জয়ই প্রথম দেখাননি। এর আগে ২০১৭ সালে উরুগুয়ের কৃষক আলসিডেস রাভেল তার ফোর্ড এফ-৩৫০ গাড়িকে কবর দেন। তিনি ৪৮ বছর ব্যবহার করেছিলেন ওই গাড়ি। এ ছাড়া মৃত স্বজনের সঙ্গে তার প্রিয় গাড়িকে কবর বা সমাধি দেওয়ার উদাহরণও আছে।
বিজিনেস টুডে থেকে অনূদিত
