নিজেদের ঘোষিত নীতিমালা থেকে সরে এসেছে টেক জায়ান্ট গুগল। এতোদিন সার্চ ইঞ্জিন প্রতিষ্ঠানটি অস্ত্র তৈরি ও নজরদারিতে এআই ব্যবহার না করবে না বলে জানালেও সম্প্রতি সেই অবস্থান বদল করেছে। ৪ ফেব্রুয়ারি নতুন নীতিমালায় এআই নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি।
২০১৮ সালে প্রথম এআই নীতিমালা প্রণয়ন করে গুগল। তখন সার্বিক ক্ষতির কারণ হতে পারে, বিশেষ করে অস্ত্র তৈরি ও ‘আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিমালা’ লঙ্ঘন করে নজরদারিতে ব্যবহার হতে পারে এমন কোনো এআই প্রযুক্তি তৈরি করবে না তারা। নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার সম্পর্কিত’ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘দায়িত্বশীলভাবে’ এআই প্রযুক্তি তৈরি করবে তারা। সরাসরি না-ও করা হয়নি। কৌশল ব্যবহার করেছে গুগল। ধারণা করা হচ্ছে, এআই উন্নয়নে চীনের সাম্প্রতিক সাফল্যকে ইঙ্গিত করেই এ কথা বলেছেন তারা।
গুগল ডিপমাইন্ডের প্রধান ডেমিস হাসাবিস ও গবেষণা ল্যাবসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যানিকা সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে লিখেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক দেশগুলো এআই উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবে। যা স্বাধীনতা, সমতা ও মানবাধিকারের মতো মৌলিক মূল্যবোধের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।’
২০২৮ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ড্রোন হামলার লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিত করতে এআই ব্যবহারের একটি প্রকল্পে কাজ করে গুগল। এর প্রতিবাদস্বরূপ কোম্পানির কিছু কর্মী পদত্যাগ ও হাজারো কর্মী একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করলে প্রথমবারের মতো এআই নীতিমালা প্রকাশ করে সংস্থাটি। সেই বছর এআই নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ার পেন্টাগনের সঙ্গে ১০ বিলিয়ন ডলারের আরেকটি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে গুগল।
তবে নীতিমালায় পরিবর্তন এমন এক সময়ে এসেছে যখন প্রতিষ্ঠানটির সিইও সুন্দর পিচাই অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবং মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গকে নিয়ে ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সেই অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের পরিবারের পেছনেই ছিলেন এই প্রযুক্তি মুগলরা।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মসনদে বসার পরপরই সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একটি নির্বাহী আদেশ বাতিল করেন, যেখানে এআই উন্নয়নে কিছু সুরক্ষামূলক নির্দেশিকা প্রবর্তনের কথা বলা হয়েছিল। আদেশ অনুযায়ী, নতুন এআই প্রযুক্তি বাজারে আনার আগে কোম্পানিগুলোকে সেই প্রযুক্তির নিরাপত্তা পরীক্ষার ফলাফল সরকারকে দেখাতে হতো।
আসন্ন দশকে মানুষের সবচেয়ে বড় সঙ্গী ও হাতিয়ার হতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। এই প্রযুক্তি অসৎ উদ্দেশ্য—বিশেষ করে যুদ্ধ, অস্ত্র তৈরি ও জনগণের ওপর নজরদারিতে ব্যবহার করা হতে পারে—এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন প্রযুক্তি বিশারদরা।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ও আল জাজিরা