ইলেকট্রিক কার সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছেন, বাংলাদেশে ‘ইভি’র (ইলেকট্রিক কার) দেখা না পাওয়া গেলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে যানবাহন থেকে কার্বন নির্গমন কমাতে অনেকেই ব্যবহার করছেন ইভি।
এরই মাঝে নতুন জিরো-এমিশন গাড়ির আগমন ঘটেছে। হাইড্রোজেন ফুয়েল-সেল চালিত এই গাড়ি থেকে কার্বনের জায়গায় জলীয় বাষ্প নির্গত হয়। এই গাড়ি কিছুটা ইভির মতো হলেও নির্দিষ্ট কিছু পার্থক্যের কারণে এটি যেকোনো গাড়ি থেকে আলাদা।
হাইড্রোজেন গাড়ি কি?
হাইড্রোজেন ফুয়েল-সেল ভেহিকেল (সংক্ষেপে HFCV) চাকার ঘূর্ণনের জন্য এক ধরণের বৈদ্যুতিক মোটর ব্যবহার করে যা ইভিতে ব্যবহার করা হয়। এটি বড়, ভারী ব্যাটারি দিয়ে নয় বরং একটি ফুয়েল-সেল স্ট্যাক দিয়ে চালিত হয়, যেখানে বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন (H2) একটি ঝিল্লির মধ্য দিয়ে যায়, বাতাস থেকে অক্সিজেনের সাথে মিশে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যা চাকা ঘোরায়। একই সাথে জলীয় বাষ্পক উৎপন্ন করে।
হাইড্রোজেন জ্বালানি নয় বরং শক্তির বাহক। কারণ HFCV চালকরা ‘হাইড্রোজেন ফুয়েলিং স্টেশনে’ তাদের যানবাহনের কার্বন-ফাইবার উচ্চ-চাপের ট্যাঙ্কগুলিকে রিফিল করে। এর জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট সময় লাগে।
হাইড্রোজেন মহাবিশ্বের সবচেয়ে সহজলভ্য উপাদান। কিন্তু হাইড্রোজেন বিশুদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায় না। এটি খুব দ্রুত অন্যান্য উপাদানের সাথে মিলিত হয়। যেকোনো কিছুর সাথে আবদ্ধ হওয়ার প্রবণতাই হাইড্রোজেনকে ভালো একটি শক্তির বাহক বানায়। যানবাহনের জন্য বিশুদ্ধ হাইড্রোজেন তৈরি করতে প্রাকৃতিক গ্যাসের (CH4) মতো একটি যৌগকে বিশুদ্ধ হাইড্রোজেনে ভাঙতে প্রচুর শক্তি লাগে। হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের মাধ্যমে চালিত হয়। হাইড্রোজেন দ্রুত অক্সিজেনের সাথে মিলিত হওয়ার সাথে সাথে বিদ্যুতের আকারে সেই শক্তি ফিরিয়ে দেয়। নিষ্কাশন পাইপ থেকে শুধুমাত্র জলীয় বাষ্প নির্গত হয়।
(H2) একটি ঝিল্লির মধ্য দিয়ে যায়, বাতাস থেকে অক্সিজেনের সাথে মিশে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
হাইড্রোজেন যেভাবে জ্বালানির কাজ করে
হাইড্রোজেন ও ইভি গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা একই রকম। এগুলো দ্রুতগামী নয়, নেই কোনো ট্রান্সমিশন। গাড়িতে রিজেনারেটিভ ব্রেকিং থাকার ফলে এটি ধীর হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে নষ্ট শক্তি পুনরুদ্ধার করতে পারে।
হাইড্রোজেন জ্বালানি সেলগুলো স্থির পাওয়ার আউটপুটে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। এটি তাদের ব্যাকআপ পাওয়ার ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। কিন্তু গাড়ির গড় বিদ্যুতের চাহিদা একটি ক্রম অনুসারে পরিবর্তিত হয়। সমতল রাস্তায় একটি যানবাহন স্থির গতিতে রাখতে ১৫ কিলোওয়াট (২০ হর্সপাওয়ার) প্রয়োজন হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক বিক্রিত হাইড্রোজেন গাড়ির পাওয়ার ডিমান্ড ৯০ কিলোওয়াট (১২০ হর্সপাওয়ার)৷ কিন্তু দ্রুত গতিতে হাইওয়েতে চালানোর জন্য এটি যথেষ্ট নয়। তাই কিছু হাইড্রোজেন কার কোম্পানি (অন্যান্য HFCV নির্মাতাদের মতো) একটি উচ্চ-ভোল্টেজ কম-ক্ষমতার ব্যাটারি যোগ করে, যা পেট্রল-ইলেকট্রিক হাইব্রিড যানবাহনে ব্যবহৃত হয়।
হাইড্রোজেন ফুয়েল-সেল চালিত এই গাড়ি থেকে কার্বনের জায়গায় জলীয় বাষ্প নির্গত হয়।
হাইড্রোজেন গাড়ি কি নিরাপদ?
HFCV অন্য যেকোনো গাড়ির মতোই নিরাপদ। এর উচ্চ-চাপের ট্যাঙ্কগুলি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে সর্বোচ্চ গতির ক্র্যাশ প্রতিরোধ করতে পারে। হাইড্রোজেন কার নিয়ে সংশয়বাদীরা ১৯৩৭ সালের হিন্ডেনবার্গ বিস্ফোরণের উল্লেখ করে। কিন্তু দুর্ঘটনায় গাড়ির বাকি অংশ ধ্বংস হয়ে গেলেও হাইড্রোজেন ট্যাঙ্ক এবং এর হার্ডওয়্যারগুলোর ক্ষতি হবে না। আজ পর্যন্ত বিক্রি হওয়া HFCV-গুলোতে কোনো দুর্ঘটনা বা মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।
হাইড্রোজেন ফুয়েল-সেল চালিত এই গাড়ি থেকে কার্বনের জায়গায় জলীয় বাষ্প নির্গত হয়।
হাইড্রোজেন ফুয়েল-সেল যানবাহনের সুবিধা-অসুবিধা
HFCV-এর ব্যাটারিতে ইলেকট্রিক গাড়ির মতোই কিছু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো মসৃণ ও শব্দহীন। টেলপাইপ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বা অন্যান্য ক্ষতিকারক নিষ্কাশন নির্গত করে না। চার্জিংয়ে খুব কম সময় লাগে। ৩০০ থেকে ৪০০ মাইল চলার জন্য জ্বালানি রিফিল করতে পাঁচ মিনিটের মতো সময় লাগে।
বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, হাইড্রোজেন জ্বালানির প্রাপ্যতা। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এখন ১০০টি হাইড্রোজেন স্টেশন থাকার কথা কিন্তু বাস্তবে সংখ্যাটি ৬০টিরও কম, এর কারণ হাইড্রোজেন জ্বালানি সংগ্রহ ও সরবরাহ করা বেশ ব্যয়বহুল।
হাইড্রোজেন গাড়ির ভবিষ্যত
পরিবেশ বান্ধব ও এই গাড়িটি ভবিষ্যতের জন্য বেশ উপযোগী হলেও বর্তমানে জ্বালানির অভাবে এটি একটি খরুচে বাহন। শৌখিন গাড়িপ্রেমীরা এটি কালেকশনে রাখার জন্য কিনতে পারে। তাছাড়া পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় বর্তমানে এর সার্ভিসিং সেবাও সময়মতো পাওয়া কষ্টসাধ্য। তবে হাইড্রোজেন জ্বালানির সরবরাহ বাড়ালে HFCV বাজারের সেরা বৈদ্যুতিক গাড়ি হওয়ার ক্ষমতা রাখে।
বর্তমানে কয়েকটি কোম্পানি হাইড্রোজেন গাড়ি বিক্রি করছে। এর মধ্যে টয়োটা মিরাই ও হুন্দাই হল HFCV নিয়ে কয়েক বছর ধরে বাজারে রয়েছে। অন্যান্য সংস্থাগুলি হাইড্রোজেন গাড়ি তৈরি করছে, তবে সেগুলো বিক্রির জন্য এখনও বাজারে আসেনি।
