উগান্ডা দেশটির সাথে বাংলাদেশের খুব আহামরি সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমরা যে কোনও দুরবস্থার কথা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন করতে উগান্ডার নাম ব্যবহার করি অনেকেই। এবং এটা অনেকটা মজা করেই করে থাকি। পূর্ব আফ্রিকার সেই উগান্ডা ২০২৪ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে। প্রশ্ন হলো কিভাবে এই দেশটি এ পর্যায়ে এল? যে দেশে কোনো ক্রিকেট কাঠামো ছিলোনা! এমন কি ক্রিকেট সামগ্রীর একটা দোকানও ছিলোনা উগান্ডায়।
আফ্রিকার স্থলবেষ্টিত দেশটি ‘আফ্রিকার মুক্তা’ হিসেবেও পরিচিত, কফি চাষের জন্য বিশ্বব্যাপী সুনাম রয়েছে দেশটির। এ দেশ থেকে উঠে এসেছেন কজন ক্রিকেটার যারা ২০২৪ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলেছে। যা ছিল তাদের জন্য কল্পনার বাইরে। কারণ উগান্ডার ক্রিকেটাররা এমন একটা জায়গা থেকে উঠে এসেছেন, যেখানে ভালো নেট নেই অনুশীলনের জন্য। এমনকি উগান্ডার কাম্পালায় যে অনুশীলনের মাঠ, সেখানে একজন ফাস্ট বোলারের দৌড়ানোর মতো জায়গাও নেই। উগান্ডার ক্রিকেট ইতিহাসে কখনো কোনও জার্সিতে স্পন্সর ছিল না। এমনকি যাদের কাছে ক্রিকেট সামগ্রী ছিলনা, মাঠে তারা সতীর্থদের সাথে সামগ্রী শেয়ার করে ক্রিকেট খেলতেন। উগান্ডার ক্রিকেটারদের ক্রিকেট সামগ্রী কিনতেও যেতে হতো কেনিয়ায়। কারণ উগান্ডায় ক্রিকেট সামগ্রীর কোনও দোকান ছিলোনা।

পৃথিবীর অনেক দেশের মতো উগান্ডাতে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। তাও উগান্ডার ক্রিকেটের ইতিহাসও কিন্তু একেবারে সাম্প্রতিক নয়। অনেক দেশের মতোই ইংরেজরা উগান্ডায় নিয়ে গিয়েছিল ক্রিকেট। প্রথম ১৯৫১ সালে উগান্ডায় হয়েছিল প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, যদিও সে ম্যাচের রেকর্ড আর্কাইভে নেই। মূলত ‘মিনি ক্রিকেট’ ও স্কুল ক্রিকেটই উগান্ডার জাতীয় দলের সবচেয়ে বড় ‘পাইপলাইন’। ১৯৭৫ সালে প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেছিল পূর্ব আফ্রিকা নামে একটি দল, যে দলটি কেনিয়া, তানজানিয়া, জাম্বিয়া ও উগান্ডার খেলোয়াড়দের নিয়া গঠন করা হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি খেলেছে উগান্ডা। তবে সেখানে ছিল পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকা দলের অংশ হিসেবে। ১৯৯৮ সালে উগান্ডা আইসিসির সহযোগী সদস্যের মর্যাদা পায়। গত দশকের শুরুর দিকে বেশ সম্ভাবনা জাগিয়েছিল দলটি, সে সময় দক্ষিণ আফ্রিকার পর সে অঞ্চলে ক্রিকেটের দ্বিতীয় পরাশক্তি হয়ে উঠবে বলে ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু উগান্ডা এরপর হোঁচট খায় আবার। ২০০৪ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেললেও সিনিয়র পর্যায়ে বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসতে পারেনি তারা। মূলত উগান্ডার ক্রিকেট উত্থান শুরু হয় ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। এই সময়ে কোচ লরেন্স মাহাটলেইন, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার লক্ষ্যে উগান্ডা ক্রিকেট দলের সাথে কাজ করেন। এরপর দলটিকে প্রচুর ম্যাচ খেলানোর সুযোগ দেয়া হয়। ২০২১ সালের পর থেকে উগান্ডা পুরুষ আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে। এই সময়ের মাঝে উগান্ডা বেশিরভাগ ম্যাচ খেলেছে রুয়ান্ডা ও তানজানিয়ার বিপক্ষে। ২ বছরে ৫৯ ম্যাচে মাত্র ৮টিতে হেরেছে দলটি। সেই ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত সাবেক টেস্ট খেলুড়ে দেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি ম্যাচ জিতে ২০২৪ বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করে উগান্ডা। তাই এবারে আর মহাদেশীয় অঞ্চল না একেবারে দেশের নাম দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ইভেন্ট খেলেছে আফ্রিকার এ দেশটি। সেই কারণে ২০২৪ সালের বিশ্বকাপটা উগান্ডার ক্রিকেটারদের জন্য ছিল স্বপ্নের মতো। উগান্ডা ক্রিকেট দলের একটি ডাকনাম আছে, তা হলো ‘দ্য ক্রেইন্স’। উগান্ডার জাতীয় পাখির নাম ক্রেস্টেড ক্রেইন। সেই পাখির নামই তাদের ডাকা হয়।