‘কফিলের ছেলের জন্য সান্ডার বিরিয়ানি’ – এই লাইনটি এখন সবার মুখে মুখে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকেও হাজার হাজার মিমস শেয়ার করছে সবাই, যার মুখ্য বিষয় সান্ডার বিরিয়ানি। কিন্তু, কে এই সান্ডা? হুট করে তার এত জনপ্রিয়তার কারণই বা কী?
এই প্রাণিটি আলোচনায় এসেছে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি ব্লগারের ভিডিও থেকে। তাদের মধ্যে কিছু সৌদি প্রবাসী শ্রমিক যারা সৌদি কফিল (যার অধীনে একজন প্রবাসী কাজ করেন) এবং তার পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের নানা দৃশ্য তুলে ধরেন। এসব ভিডিও থেকেই কাঁটাযুক্ত লেজওয়ালা লিজার্ড বা সান্ডা আলোচনায় আসে।
কিছু ভিডিওতে দেখা যায় প্রবাসীরা মরুভূমিতে সান্ডা ধরছেন। সংগ্রহের পর রান্না করে তা পরিবেশন করছেন। সৌদি মরুভূমির বেদুঈন বা স্থানীয় গোষ্ঠীর মানুষ সান্ডা ধরে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। কেউ কেউ সান্ডার বিরিয়ানিও রান্না করেন।
প্রবাসীদের দেয়া তথ্যমতে, সান্ডার মাংস মে মাসের দিকে বেশ রসালো হয়। কারণ মরুভূমির খাবার খেয়ে এ সময় প্রাণিগুলো হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে। প্রবাসীদের পোস্ট করা ভিডিও এবং রিলসে দেখা যায় তাদের কফিল ও স্বজনরা বেশ আয়েশ করে সান্ডা খাচ্ছেন।
কেমন প্রাণি সান্ডা
‘সান্ডা’ কোনো নির্দিষ্ট প্রাণির নাম নয়। মরু অঞ্চলে বাস করা এই গোত্রের বেশ কয়েকটি প্রজাতিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। আরবি ভাষায় একে বলা হয় ‘দব’। মরুভূমিতে বসবাসকারী এই গোত্রের লিজার্ডদেরই সাধারণভাবে ‘সান্ডা’ বলা হয়।
সান্ডা আসলে স্পাইনি টেইলড লিজার্ড বা কাঁটাযুক্ত লেজওয়ালা টিকটিকি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Uromastyx। এটি Agamidae (অ্যাগামিডি) গোত্রের অন্তর্গত এবং এর এক ডজনেরও বেশি প্রজাতি রয়েছে।
সান্ডার মাথা চওড়া ও শরীর মোটা, গড় দৈর্ঘ্য ২৫-৩০ সেন্টিমিটার (১০-১২ ইঞ্চি)। সান্ডা শক্ত ও মোটা লেজযুক্ত টিকির মতো প্রাণি, যেটির লেজে কাঁটার মতো কাঠিন্য থাকে, যা একে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এদের দেহ সাধারণত হলুদ, বাদামী, ধূসর বা সবুজাভ হতে পারে, পরিবেশ ও প্রজাতি অনুযায়ী রঙ পরিবর্তিত হয়।
সান্ডা সাধারণত মরুভূমি, শুষ্ক প্রান্তর ও পাথুরে ভূমিতে বাস করে। এটি দক্ষিণ এশিয়া (ভারত, পাকিস্তান), মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় বেশি দেখা যায়।

দেখতে ভয়ানক হলেও এরা বেশ নিরীহ গোছের প্রাণি, ছবি: এটুজেড এনিমালস
কী খায় সান্ডা?
দেখতে ভয়ানক হলেও এরা বেশ নিরীহ গোছের প্রাণি। সান্ডা মূলত নিরামিষভোজী (herbivore)। তারা গাছপালা, শুষ্ক ঘাস, গুল্ম ইত্যাদি খেয়ে বাঁচে। তবে কোনো কোনো প্রজাতি মাঝে মাঝে কীটপতঙ্গও খেতে পারে।
ঔষধি ব্যবহারের ভ্রান্ত ধারণা
দক্ষিণ এশিয়ায় সান্ডার তেল বা ‘সান্ডা তেল’ নিয়ে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে এটি যৌন শক্তি বাড়াতে সহায়ক — যদিও এই দাবি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। এই কারণে অনেক সময় সান্ডাকে অবৈধভাবে শিকার করা হয়, যা তাদের সংরক্ষণে হুমকি।
আইন ও সংরক্ষণ
অনেক দেশে সান্ডা সংরক্ষিত প্রাণি। এদের হত্যা বা পাচার অবৈধ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। বন্যপ্রাণি আইন অনুযায়ী এই প্রজাতিকে সুরক্ষা প্রদান করা হয়।
মজার বিষয় হলো- কিছু প্রজাতির সান্ডা দীর্ঘ সময় পানি না খেলেও বেঁচে থাকতে পারে। গর্ত খুঁড়ে বাস করে এরা সূর্যালোক পছন্দ করে — তাই দিনের বেলা গরম পাথরে রোদ পোহায়। বিপদের সময় পাথরের খাঁজে আশ্রয় নেয় ও সেখান থেকে গাছের পাতা, ফলমূল ও মাঝে মাঝে ছোট পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে।
সান্ডা খাওয়া যাবে কী না এই নিয়ে তুমুল আলোচনা সমালোচনা চলছে ফেসবুকে। তবে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকলে কিংবা সন্দেহজনক উপায়ে প্রস্তুতকৃত খাবার এড়িয়ে চলাই উত্তম।
তথ্য: ব্রিটানিকা ও আরব নিউজ