যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) টুল ব্যবহার করে বোটক্স ও ঠোঁট ফিলার নিয়ে জনমত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জনসাধারণের মতামত যাচাই এবং তার ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় সরকারি কর্মকর্তাদের যে সময় ও শ্রম ব্যয় হয়, তা কমিয়ে আনতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্কটিশ সরকারের এক গণপরামর্শ কার্যক্রমে প্রাপ্ত মন্তব্যসমূহ বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয় ‘কনসাল্ট’ (Consult)। এটি একটি এআই টুল। কর্মকর্তারা বলছেন, এটি ছিল দেশের ইতিহাসে এই ধরনের প্রথম প্রয়োগ এবং যার ফলাফলও ছিল আশাব্যঞ্জক।
পরীক্ষামূলকভাবে ‘কনসাল্ট’ টুলটি ২,০০০টি মতামত বিশ্লেষণ করে এবং প্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে প্রধান প্রধান বিষয়বস্তু শনাক্ত করে তা শ্রেণিবদ্ধ করে। বিশেষজ্ঞরা যাচাই করে দেখেছেন, এআই-এর ফলাফল মানুষের বিশ্লেষণের সঙ্গে প্রায় অভিন্ন।
সরকারি কর্মকর্তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তির ব্যবহারে কোটি কোটি পাউন্ড সাশ্রয় হবে এবং প্রশাসনিক ব্যয় অনেকটাই হ্রাস পাবে। প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, এই প্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগে প্রায় ২০ মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় হতে পারে।
এই টুলটি ‘হাম্পফ্রি’ (Humphrey) নামে একটি বৃহত্তর এআই প্রকল্পের অংশ, যার নাম রাখা হয়েছে ১৯৮০ এর দশকের জনপ্রিয় ব্রিটিশ সিটকম ‘ইয়েস, মিনিস্টার-এর চরিত্র ‘স্যার হাম্পফ্রি অ্যাপেলবি’র নামে। এই সিরিজে সরকারি আমলাতন্ত্রের জটিলতা এবং অতিরিক্ত প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে বিদ্রুপ করা হতো, আর সেই থেকেই এই নামকরণ।
যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তি সচিব পিটার কাইল জানান, কনসাল্ট টুলের সফল পরীক্ষার ফলে খুব শিগগিরই এটি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কাজে লাগানো হবে। তিনি বলেন, ‘হাম্পফ্রি প্রজেক্ট আমাদের প্রশাসনিক ব্যয় কমাতে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনমত দ্রুত ও সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করবে।’
তিনি আরও জানান, এআই প্রযুক্তির বিস্তৃত ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য সরকার সামগ্রিকভাবে ৪৫ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত সাশ্রয়ের আশা করছে। এআই ব্যবহার করে যেভাবে জনমত যাচাই করা হচ্ছে, তা শুধু সময় সাশ্রয় করছে না, বরং নীতিনির্ধারকদের জন্য আরও নির্ভুল তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ খুলে দিচ্ছে।
এই উদ্যোগ যুক্তরাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিশেষত, স্বাস্থ্যসেবা ও নন-সার্জিকাল কসমেটিক পদ্ধতির মতো সংবেদনশীল বিষয়ে জনমতের বিশ্লেষণ এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে আরো কার্যকর ও স্বচ্ছ হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের এআই টুল আরও অনেক সরকারি কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ান