Home বিজ্ঞান যন্ত্র এখন শেখে, ভাবে, সিদ্ধান্ত নেয়!

যন্ত্র এখন শেখে, ভাবে, সিদ্ধান্ত নেয়!

তাসনিম তাবাসসুম
৩২ views

একটি ছবির দিকে তাকালেন, সঙ্গে সঙ্গে চিনে ফেললেন এটা একটা বিড়াল। লাল রঙের ফলটি দেখেই বুঝলেন আপেল। কিংবা কারো কণ্ঠস্বর শুনেই বুঝলেন কে কথা বলছে। এসবই মানব মস্তিষ্কের ক্ষমতা। এই সক্ষমতাকে অনুকরণ করেই তৈরি হয়েছে নিউরাল নেটওয়ার্ক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এ আই) এক জাদুকরী প্রযুক্তি।

মনোবিজ্ঞান ও কগনিটিভ সায়েন্স কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে মৌলিক ভূমিকা পালন করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শুরুর গল্পের নায়ক হলেন হ্যারি পিটস এবং অ্যালান ট্যুরিংয়। ১৯৪৩ সালে প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ধারণাটি দেন তাঁরা। সঙ্গে কিছু মৌলিক তাত্ত্বিক কাজও করেন। কিন্তু নিউরাল নেটওয়ার্কিং এর ভিত্তি গড়ে দেন যে ব্যক্তি আজ জানবো তাঁর গল্প। 

১৯৫৭ সালে যুক্তরাষ্টের বাফেলো শহরের এক বিজ্ঞানী ফ্র্যাঙ্ক রোজেনব্লাট এমন একটি যন্ত্র বানাতে চাইলেন যেটি নিজ থেকে শিখতে পারবে। কোনো ভুল করলে তা নিজে শুধরাতে পারবে। তিনি ভাবলেন অনেকবার ভুল করতে করতে মেশিন নিশ্চয়ই শিখতে পারবে। আর ধীরে ধীরে কমবে ভুলের পরিমাণ। এমনটা হলে বিজ্ঞানী প্রমাণ করতে পারবেন যে মেশিন শিখছে। ধারণাটি চমৎকার, কিন্তু করবেন কীভাবে? 

রোজেনব্লাট ভাবলেন, যন্ত্রকে দিয়ে কোনো কিছু শেখানোর প্রথম ধাপ হবে যন্ত্রকে একটি বৃত্ত ও চতুর্ভুজ বোঝানো। মানব মস্তিষ্কের নিউরনের মতো কাজ করে এমন একটি গাণিতিক মডেল তিনি তৈরি করলেন। নাম দিলেন পার্সেপট্রন। এটি একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক মডেল, যা একটি সংখ্যা নিয়ে কাজ করতে পারে। এটি সহজেই দুটি শ্রেণিকে আলাদা করতে পারে। 

2 3

আজকের যুগের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছে এই নিউরাল নেটওয়ার্কের হাত দিয়েই, ছবি: কর্নেল ক্রনিকালস

আজকের যুগের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছে এই নিউরাল নেটওয়ার্কের হাত দিয়েই। মানব মস্তিষ্ক ভুল থেকে ধীরে ধীরে যেভাবে শেখে, সেভাবে যন্ত্রটি শিখতে পারে। যন্ত্রটি ভুলগুলো থেকে নিজের ভুল শুধরে নেয়, প্যারামিটারগুলো পরিবর্তন করেও নিতে পারে।

রোজেনব্লাট নিউরাল নেটওয়ার্কের যে বিশেষ ধরনটি তৈরি করেছিলেন, তা মূলত এক স্তরের। পরে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, যন্ত্রকে শেখানো জন্য এক স্তর যথেষ্ট নয়, বরং অনেক স্তর দিয়ে শেখাতে হবে। এছাড়া পরে বিজ্ঞানীরা ব্যাকপ্রোপাগেশন নামে এক ধরনের ফিডব্যাক লুপ প্রয়োগ করেন। এর ফলেই আজকের দিনের কৃত্রিম বু্দ্ধিমত্তা সফল হয়েছে।

রোজেনব্লাট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র তৈরির কাজে ইস্তফা দিয়ে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা কীভাবে কাজ করে, তা জানার জন্য ইঁদুর নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। তাঁর হাতে তৈরি মার্ক পারসেপট্রনস যন্ত্রটি বর্তমানে ওয়াশিংটনের স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। 

বলা যায় তাঁর হাত দিয়েই যন্ত্রে বুদ্ধি প্রয়োগের প্রথম কাজটি সম্পন্ন হয়। আশি-নব্বইয়ের দশকে এসে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারলেন, রোজেনব্লাট কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিলেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। বর্তমানে আমরা এআই এর যে এতো সাবলীল ও সর্বজনীন ব্যবহার দেখছি তার পিছের নায়ক ফ্র্যাঙ্ক রোজেনব্লাট। 

সূত্র: বিবিসি ও ভিশনারি মাৰ্কেটটিং 

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ