ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের ব্লু গোস্ট মিশন ১ একটি বিশেষ মিশন, যা নাসার কমার্শিয়াল লুনার পে-লোড সার্ভিসেস (সিএলপিএস) প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে চাঁদে পাঠানো হয়েছে। মিশনটি ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়।
৪৫ দিন মহাকাশে ভ্রমণের পর, ল্যান্ডারটি ২ মার্চ, ২০২৫ তারিখে মন্স লা হাইরে, মারে ক্রিসিয়াম অঞ্চলের কাছে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করবে। অবতরণের ভিডিও সরাসরি দেখা যাবে ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে।
ব্লু গোস্ট মিশন ১-এর প্রধান লক্ষ্য হলো ১০টি বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত যন্ত্র চাঁদের পৃষ্ঠে স্থাপন করা। এই যন্ত্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করবে, যা ভবিষ্যতে চাঁদে মানব মিশনের প্রস্তুতির জন্য সাহায্য করবে।
গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে লিস্টার (লুনার ইনস্ট্রুমেন্টেশন ফর সাবসারফেস থার্মাল এক্সপ্লোরেশন উইথ র্যাপিডিটি): এটি চাঁদের অভ্যন্তরীণ তাপ প্রবাহ পরিমাপ করবে এবং এলপিভি (লুনার প্ল্যানেটভ্যাক)। এটি চাঁদের মাটি সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হবে।

অবতরণের ভিডিও সরাসরি দেখা যাবে ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে, ছবি: ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস
অবতরণের পর, ব্লু গোস্ট প্রায় ১৪ পৃথিবী দিন (একটি চন্দ্র দিবস) ধরে কাজ করবে। এই সময়ে, এটি চাঁদের মাটির গঠন বিশ্লেষণ করবে, ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করবে এবং সৌর বায়ুর সাথে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের মিথস্ক্রিয়া পরীক্ষা করবে। এই তথ্য ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এই মিশনের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হলো, ব্লু গোস্ট চাঁদ থেকে একটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণের উচ্চ-সংজ্ঞা চিত্র ধারণ করবে। এই ঘটনা ঘটে যখন পৃথিবী চাঁদের দৃষ্টিকোণ থেকে সূর্যকে ঢেকে ফেলে।
এছাড়াও, এটি লুনার হরাইজন গ্লো নামে পরিচিত একটি বিশেষ ঘটনা রেকর্ড করবে, যা ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো ১৭-এর নভোচারী ইউজিন সার্নান প্রথমবার দেখেছিলেন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই আলো চাঁদের মাটির সূক্ষ্ম ধূলিকণার কারণে তৈরি হয়, যা সূর্যালোকের সাথে বিক্রিয়া করে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেসের সিইও, জেসন কিম, মিশনের সফলতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেছেন যে, তাদের রকেট ইঞ্জিন ডিজাইনের অভিজ্ঞতা ব্লু গোস্টের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য প্রপালশন সিস্টেম তৈরি করতে সহায়তা করেছে।
ব্লু গোস্ট মিশন ১ নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রামের অংশ, যা চাঁদে দীর্ঘমেয়াদী মানব উপস্থিতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই মিশন চাঁদে বাণিজ্যিক অনুসন্ধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতে মানুষকে চাঁদে বসবাস ও কাজ করার সুযোগ করে দিতে সাহায্য করবে।
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস