মানুষের মতোই প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারে ইঁদুর। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও এমনটিই দাবি করছেন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালযয়ের গবেষকরা।
গবেষণায় দেখা গেছে ইঁদুররা সংজ্ঞাহীন সঙ্গীদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ প্রদর্শন করে। ইঁদুরদের ডেক্সমেডেটোমিডিন দিয়ে অজ্ঞান করা হয় এবং দেখা যায়, অন্যান্য ইঁদুররা তাদের নিবিড় পরিচর্যা করে। এই আচরণটি মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অ্যামিগডালা হল মস্তিষ্কের সেই অংশ যা ভয়, আবেগ এবং প্রেরণার সাথে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এর নামের অর্থ “বাদাম” কারণ এটি বাদাম আকৃতির। যদি আপনি এমন কিছু দেখেন যা আপনাকে ভয় দেখায়, তাহলে আপনার অ্যামিগডালা আপনার শরীরকে আতঙ্কিত হতে কমান্ড দিতে পারে।
এই অ্যামিগডালর নির্দেশেই ইঁদুর সতর্ক হয়ে জ্ঞানহীন সঙ্গীর পরিচর্যা করে। ফলে সংজ্ঞাহীন ইঁদুররা দ্রুত চেতনা ফিরে পায়। অ্যামিগডালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ইঁদুররা অজ্ঞান সঙ্গীদের কাছে গিয়ে তাদের মাথা ও মুখমণ্ডলে পরিচর্যা করে, যা সঙ্গীর চেতনা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। ইঁদুর যখন তারা অন্য কোন ইঁদুরকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পায়, তখন কিছু ইঁদুর তাদের সঙ্গীকে থাবা দিয়ে, কামড়ে এমনকি জিভ টেনে তাদের শ্বাসনালী পরিষ্কার করে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করে। এই আবিষ্কার ইঙ্গিত দেয় যে প্রাণীজগতে যত্নশীল আচরণ আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি সাধারণ হতে পারে।
মানুষের মতো অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে অজ্ঞান সঙ্গীদের সাহায্য করার প্রমাণ সীমিত এবং প্রধানত কিছু প্রাইমেট ও সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে দেখা যায়। তবে, ইঁদুরের মধ্যে এই ধরনের আচরণ নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষার মাধ্যমে আগে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি।
ইঁদুর অজ্ঞান সঙ্গীদের সাহায্য করতে সবসময় আগ্রহী, ছবি: মেডিকেল এক্সপ্রেস
“অজ্ঞান সঙ্গীদের প্রতি সহায়তামূলক আচরণের স্নায়বিক ভিত্তি” শীর্ষক এই গবেষণায়, গবেষকরা ডেক্সমেডেটোমিডিন দ্বারা সৃষ্ট অজ্ঞান অবস্থায় থাকা সঙ্গীদের প্রতি ইঁদুরের প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন করেন। পরীক্ষায় দেখা যায়, ইঁদুররা জাগ্রত সঙ্গীর তুলনায় অজ্ঞান সঙ্গীর মাথা ও মুখমণ্ডলে বেশি সময় ধরে পরিচর্যা করে। এই পরিচর্যার তীব্রতা সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পায় এবং এটি সহায়তাকারী বা প্রাপক ইঁদুরের লিঙ্গ দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
পরীক্ষায় আরো দেখা গেছে ইঁদুররা অজ্ঞান সঙ্গীদের সাথে মেলামেশা করতে, অর্থাৎ তাদের সাহায্য করতে বেশি আগ্রহী, যা নতুনত্ব বা স্থির বস্তুর প্রতি আকর্ষণ দ্বারা প্রভাবিত হয় না। এছাড়া, ইঁদুররা দৃশ্যমান সংকেত ছাড়াই সঙ্গীর অজ্ঞান অবস্থা সনাক্ত করতে সক্ষম।
এই গবেষণার ফলাফল ইঁদুরের মধ্যে সহানুভূতিশীল আচরণের স্নায়বিক ভিত্তি সম্পর্কে নতুন ধারণা প্রদান করে এবং ভবিষ্যতে মানুষের সহানুভূতি ও সামাজিক আচরণের স্নায়বিক প্রক্রিয়া বুঝতে সাহায্য করবে।
সূত্র: নিউ সাইন্টিস্ট ও মেডিকেল এক্সপ্রেস
