দেশে আবারও বাড়ছে করোনার ঝুঁকি। নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ ও শঙ্কা। যদিও চিকিৎসকরা এখনই আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবুও বিশেষ সতর্কতার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার নতুন ধরনটি মূলত শিশু, বয়স্ক ও দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করছে। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে যক্ষ্মা, সিওপিডি বা অ্যাজমায় ভুগছেন, তাঁদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কম। ফলে কোভিডের মতো ভাইরাল সংক্রমণ তাদের ক্ষেত্রে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় তাঁদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন দ্রুত কমে যেতে পারে। যা মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
আমাদের দেশে এখনও যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা কম নয়। করোনা এবং যক্ষ্মা একসাথে হলে রোগ নিরাময় কঠিন হয়ে যায়। চিকিৎসাও হয় দীর্ঘমেয়াদি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। তবে যাদের আগে থেকেই শারীরিক জটিলতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পরা, হাত ধোয়ার অভ্যাস বজায় রাখা এবং প্রয়োজন ছাড়া ভিড় এড়িয়ে চলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
গবেষণায় কী বলছে তথ্য?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব রোগীর ফুসফুসের কর্মক্ষমতা আগেই হ্রাস পেয়েছে, তাদের শরীরে করোনাভাইরাস ঢোকার পর শরীর সহজে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না। কারণ, করোনা মূলত ফুসফুসেই আঘাত হানে। ফলে যাঁদের ফুসফুস দুর্বল বা আগে থেকেই সংক্রমিত, তাঁদের ক্ষেত্রে সংক্রমণের গতি ও জটিলতা দুই-ই বেড়ে যায়।
বক্ষব্যাধি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. নূর এ আলম খান জানিয়েছেন, বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। ফলে তারা নতুন কোনো ভাইরাস, বিশেষ করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
তিনি বলেন, বয়সভেদে ঝুঁকির মাত্রা ভিন্ন হলেও বয়স্ক, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতায় ভোগা রোগী, শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এমনকি সঠিক চিকিৎসা পেলেও অনেক ক্ষেত্রে এসব রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন না। বরং জটিলতা বাড়ে।

প্রকাশ্য স্থানে ধূমপানের অভ্যাস অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে, ছবি ; ভীষণ বাই প্রমিসেস
বাংলাদেশের বায়ুদূষণ এবং ধুলাবালির কারণে বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায় বলে জানান তিনি। ধূমপানের প্রবণতা এবং তা প্রকাশ্য স্থানে করার অভ্যাস অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে।
তিনি বলেন, করোনা পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়। এর চিকিৎসা হলো রোগ নিয়ন্ত্রণ, হাসপাতালে ভর্তির সময় কমিয়ে আনা এবং মৃত্যুঝুঁকি হ্রাস করা।
জীবনযাপনে পরিবর্তন জরুরি
ডা. মো. নূর এ আলম খান বলেন, বক্ষব্যাধি এক ধরনের ক্রনিক রোগ। এটি পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য নয়। বরং সারাজীবন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এজন্য নিয়ম মেনে জীবনযাপন ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
ঝুঁকি এড়াতে করণীয়
বক্ষব্যাধি আক্রান্তদের কিছু অতিরিক্ত সতর্কতা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত ইনহেলার বা ওষুধ ব্যবহার নিশ্চিত করা। ধূমপান সম্পূর্ণ পরিহার করা। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফলো-আপ চেকআপ করা। জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং মাস্ক পরা। ঘরে পর্যাপ্ত বায়ুচলাচল নিশ্চিত করা। হাত নিয়মিত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করা।