বেঁচে থাকার লড়াইয়ে প্রকৃতিতে প্রতিদিনই ঘটে নানা বিস্ময়কর ঘটনা। তবে কিছু প্রাণি এই লড়াইয়ে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকে তাদের অসাধারণ এক কৌশলের জন্য। সেটি হলো ‘ক্যামোফ্লাজ’। সাধারণত সামরিক পোশাকের প্যাটার্নকে ক্যামোফ্লাজ বলা হয়। কারণ এটি সৈন্যদের এমনভাবে পরিবেশের সাথে মিশে থাকতে সাহায্য করে, যাতে তারা শত্রুর দৃষ্টিসীমা থেকে লুকিয়ে থাকতে পারে।
কিছু প্রাণি আছে, যারা নিজের গায়ের রং পরিবর্তন করতে পারে। এটি শুধু তাদের দৃষ্টিনন্দনই করে তোলে না, বরং বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হ্যালো বাংলাদেশ’র এই নিবন্ধে এমন কিছু প্রাণিদের সম্পর্কে জানানো হবে যারা ক্যামোফ্লাজের মতো অসাধারণ ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজেদের বৈরি পরিবেশে টিকিয়ে রাখে।
ক্যামেলিয়ন
রং পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ক্যামেলিয়ন। এই সরীসৃপটি মূলত শিকারির হাত থেকে বাঁচতে ক্যামোফ্লাজের মাধ্যমে নিমিষেই পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। ক্যামেলিয়নের রং বদল তাপমাত্রা ও আলোর প্রতিক্রিয়াতেও ঘটে। এমনকি বিভিন্ন আবেগে যেমন, উত্তেজিত হলে বা ভয় পেলেও তাদের গায়ের রং পরিবর্তিত হয়। ক্যামেলিয়ন ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় গাঢ় রং ধারণ করতে পারে। শীতকালে গাঢ় গায়ের রং সূর্যের তাপ শোষণে সাহায্য করে।

সেফালোপড অত্যন্ত দক্ষ ছদ্মবেশধারী প্রাণি, ছবি: বিবিসি
সেফালোপড
এবার আসি পানির ছদ্মবেশি এক প্রাণির কথায়। নাম তার সেফালোপড। ছদ্মবেশধারণে অত্যান্ত পটু এরা। সেফালোপড নিজের চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে মিশে যেতে দ্রুত রং পরিবর্তন করতে পারে। ফলে এরা খুব সহজে শিকারীদে নজর এড়িয়ে বা বিভ্রান্ত করে চলতে পারে।

সমুদ্রের তলদেশে বালু বা পাথরের সঙ্গে মিশে যায় ফ্লাউন্ডার ফিশ, ছবি: নিউ ইয়র্ক টাইমস
ফ্লাউন্ডার মাছ
আরেকটি জলজ ছদ্মবেশি প্রাণি হচ্ছে ফ্লাউন্ডার মাছ। ক্যামোফ্লাজ ক্ষমতা এদের সমুদ্রের তলদেশে বালু বা পাথরের সঙ্গে মিশে যেতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এই মাছটি শিকারিদের হাত থেকে বাঁচার জন্য নিজের গায়ের রং বদল করে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।

সঙ্গীকে আকর্ষণ করার জন্য রং রিবর্তন করে কাটলফিশ , ছবি: জোস গন ডাইভিং
কাটলফিশ
ছদ্মবেশি প্রাণিদের তালিকায় আরও আছে কাটলফিশ। এরা শিকারীদের হাত থেকে বাঁচতেই শুধু নয়, সঙ্গীকে আকর্ষণ করার জন্যও রং বদল করে। কাটলফিশের ত্বকের ক্রোমাটোফোরস কোষ আলোর প্রতিফলন ও শোষণ নিয়ন্ত্রণ করে, যা তাদের শরীরে বিচিত্র রঙের সৃষ্টি করে।

গরম ও ঠাণ্ডা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে রং বদল করে এই ব্যাঙ, ছবি: দ্য স্প্রুস পেটস
আফ্রিকান ট্রি ফ্রগ
কিছু ব্যাঙ যেমন আফ্রিকান ট্রি ফ্রগ (African tree frog) তাদের ত্বকের রঙ বদল করে গরম ও ঠাণ্ডা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। এদের একটি নির্দিষ্ট হরমোন রয়েছে, যা তাদের ত্বকের রঙ পরিবর্তনকারী কোষগুলোকে সক্রিয় করতে পারে।
যা বলছে বিজ্ঞান
ক্যামোফ্লাজ বা পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য করে শরীরের রং বদল প্রাণিদের বেঁচে থাকার একটি কৌশল। এটিকে শিকারিদের থেকে আত্মরক্ষা বা শিকার ধরার একটি উপায় বলা যায়। বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করে প্রাণিদের ক্যামোফ্লাজের অনেক রহস্য উদঘাটন করেছেন। ক্রোমাটোফোরস (Chromatophores) নামের বিশেষ কোষের মাধ্যমে কিছু প্রাণি রং বদল করতে পারে।
এই কোষগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পিগমেন্ট বা রঞ্জক, যা আলো শোষণ বা প্রতিফলিত করার মাধ্যমে গায়ের রঙের পরিবর্তন ঘটায়। এছাড়া কিছু প্রাণির ত্বকে ইরিডোফোরস (Iridophores) নামের কোষ থাকে, যা শুধু আলো প্রতিফলিত করেই শরীরে নতুন রং তৈরি করে। জলে-স্থলে অসংখ্য ক্যামোফ্লাজ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাণিদের বিচরণ করতে দেখা যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে–কিছু প্রজাতির গিরগিটি, অক্টোপাস ও মাছ।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া