Home প্রযুক্তি চীনের শিল্পবিপ্লবে মানবিক রোবট

চীনের শিল্পবিপ্লবে মানবিক রোবট

৪৯ views

কারখানার ভেতরে রোবটগুলো কোনোটি টি-শার্ট ভাঁজ করছে, কোনোটি স্যান্ডইউচ বানাচ্ছে আবার কোনোটি দরজা খুলে দিচ্ছে আবার বন্ধ করছে। ঠিক যেন মানুষের মতো কাজ করছে রোবটগুলো। এমন দৃশ্য দেখা যায় চীনের সাংহাই প্রদেশে। সেখানকার একটি রোবট কারখানায় কয়েক ডজন হিউম্যানোয়েড রোবট বা মানবিক রোবটকে ঠিক মানুষের মতো কাজ করতে দেখা যায়।

চীনের হিউম্যানোয়েড স্টার্টআপ কোম্পানি এজিআইবুট (AgiBot) প্রতিদিন প্রায় ১৭ ঘন্টার বেশি সময় ধরে রোবটগুলোর চিপ ও ডাটা নিয়ে গবেষণা করছে। রোবটগুলোকে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে, যাতে এই রোবটগুলো মানুষের মতো বসবাস করতে পারে, কাজ করতে পারে ও খেলাধূলায় অংশ নিতে পারে।

এই প্রসঙ্গে এজিআইবুটের অপারেটর ও ডেভলপার ইয়াও মাওকিং বলেন, আমাদের নিজস্ব রোবট কারখানায় একদিন আমাদের রোবটগুলো নিজেদের একত্রিত করে মানুষের মতো কাজ করবে। উৎপাদনে অংশ নিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।’

রোবট ১

এআই-চালিত হিউম্যানোয়েড রোবট উন্নত করছে চীন, ছবি: টেক এন এশিয়া

গত মাসে চীনের সাংহাইতে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এজিআইবুট-এর রোবট পরিদর্শন করেন, তখন বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বাণিজ্য বিরোধ, চীনের জনসংখ্যা হ্রাস ও ধীরগতির প্রবৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজতে মানবিক রোবটের গুরুত্বারোপ করেন।

পরিদর্শনের সময় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মজার ছলেই বলেছিলেন এই মেশিনগুলোকে একটি ফুটবল দলে খেলতে দেখতে পারলে আরও ভালো লাগতো।

এছাড়া চলতি বছরের শুরুর দিকে দেশটির আরেকটি হিউম্যানোয়েড রোবট কোম্পানি ইউনিট্রির কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বেসরকারি কোম্পানিকে চীনের অর্থনীতিতে অবদান রাখার আহবান জানান।

রোবট ২

মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে মানবিক রোবট, ছবি: ডেকান হেরাল্ড

মার্কিন কারখানায় কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে শুল্ক আরোপ করেছিলেন তা নিয়ে চীনের সাথে আলোচনার চলাকালেই বেইজিং একটি নতুন শিল্প বিপ্লবের লক্ষ্যে কাজ করছে। যেখানে অনেক কারখানার কাজ মানবিক রোবট দিয়ে হবে বলে জানা যায়।

চীনা প্রেসিডেন্টের রসিকতা করে রোবট ফুটবল টিমের কথা বলার পরপরই সাম্প্রতিক সময়ে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে রোবটদের সামার সল্ট পারফরম্যান্স করার পাশাপাশি ম্যারাথন দৌড় এমনকি ফুটবল খেলায় অংশ নিতে দেখা যায়। এরপর চীনের রোবট প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়।

এর আগে প্রথমবারের মতো কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে বাজিমাত করে চীনা কোম্পানি ডিপসিক। সরকারের ব্যাপক সমর্থনের ফলেই এআইয়ে ব্যাপক সফলতার পর মানবিক রোবট উন্নত করার কাজে মনোনিবেশ করেছে চীন। অর্থনীতিতে অবদান রাখার অংশ হিসেবেই রোবটের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার উন্নত করছে চীনা ডেভলপাররা।

রোবট ৩

মানবিক রোবটের চিপ ও ডাটা পরীক্ষা করছেন ডেভপলবাররা, ছবি: রয়টার্স

চীনের রোবট প্রস্তুতকারি, বিনিয়োগকারী, গ্রাহক ও বিশ্লেষকরা কীভাবে রোবট “মস্তিষ্ক” তৈরি করে এই ধাতব মেশিনগুলোকে উৎপাদনশীল ও প্রশিক্ষিত কর্মীতে রূপান্তরিত করা যায় তা নিয়ে কাজ করছেন, যা বিশ্বের উৎপাদন শক্তিতে বিপ্লব আনতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এরই অংশ হিসেবে ডেটা প্রশিক্ষণ ও এআই মডেলগুলোর পরিশীলিততার উপর মনোনিবেশ করে তার অবস্থান তৈরি করার লক্ষ্য রাখছে। কেউ কেউ বলেছে যে এই ক্ষেত্রে ডিপসিকের দক্ষতা অনেক সাহায্য করেছে। তবে ডিপসিক ও চীনা সরকার হিউম্যানোয়েড রোবট তৈরিতে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি।

কারখানার মেঝেতে এই হিউম্যানোয়েড রোবটগুলো উন্নত করার মধ্য দিয়ে চীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও তার উৎপাদন শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হবে, যার ফলে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।

রোবট ৪

মানুষের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করছে রোবট, ছবি: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

তবে রোবট দিয়ে কাজ করালেও কারখানার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ভীতি কীভাবে মোকাবেলা করবে সেদিকে বেইজিংয়ের অবস্থান স্পষ্ট নয়। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, শিল্প বিপ্লবের পরে মানুষ দীর্ঘমেয়াদে কাজ করার ফলে যতটা বিরক্ত হতো তবে এই রোবটের মাধ্যমেও দীর্ঘ সময়ে কাজ করানো যাবে তবে বিরক্ত কম লাগবে।

চীনা কর্তৃপক্ষ মানবিক রোবট তৈরির সংস্থাগুলোর জন্য ব্যাপক হারে ভর্তুকি দিচ্ছে। সরকারি এক ঘোষণায় দেখা যায়, গত এক বছরে এই খাতে ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। বেইজিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবোটিক্সের মতো ক্ষেত্রে স্টার্টআপগুলোকে সহায়তা করার জন্য এক ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৩৭ বিলিয়ন ডলার) তহবিল প্রতিষ্ঠা করছে।

উল্লেখ্য, মানবিক রোবট বা হিউম্যানোয়েড রোবট (Humanoid Robot) মানুষের শরীরের মতো নির্মিত রোবট। মানুষের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও পরিবেশের সব বিষয়ে তথ্য জানা, গবেষণা ও পরীক্ষামূলক ব্যবহারের জন্য এটি তৈরি করা হয়।

সূত্র: রয়টার্স ও টেক ইন এশিয়া

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ