Home সর্বশেষ তেজগাঁও, তোমার বাবার সরকারি বাসা

তেজগাঁও, তোমার বাবার সরকারি বাসা

রায়হানুল ইসলাম
৮৮ views

এইতো কিছুদিন আগেই, অফিস শেষে বাসার দিকেই ফিরছিলাম। কিন্তু কোন আগ্রহ পাচ্ছিলাম না ঘরে ফেরার। অবশ্য ঘরে ফেরার বিশেষ কোন কারণওতো নেই।

কি যেন মনে করে তেজগাঁও এ তোমার বাবার সরকারি বাসাটার আশেপাশে পায়চারী করতে থাকলাম। এলোমেলো পাঁয়ে তিন রাস্তার মোড় থেকে তোমার বাসার প্রধান ফটক ধরে একটি হাঁটার বৃত্ত তৈরি করে নিলাম।

জ্যামিতিবিদ্যায় খুব একটা ভালো নই বলে জ্যামিতিক ব্যাখ্যা দিতে পারলাম না। আমি, খুবই দুঃখিত। দিয়ে দিতে পারলে হয়তো তোমার বু্ঝতে বেশ সুবিধেই হতো। কতটুকু এ্যাঙ্গেলে আমি কতবার করে তোমার বাসার সামনে দিয়ে ঘুরে এসেছি। কতবার তোমাদের ঐ ইয়া লম্বা দারোয়ানটা আমাকে গোয়েন্দার চোখে দেখেছে। অবশ্য চিত হয়ে শুয়ে থাকা কুকুরটা মনে হলো, বেশ মজাই পাচ্ছিলো। যখনই আমি তার কাছাকাছি এসে পড়ছিলাম তখনই সে তার জিহ্বামূল সমেত দাঁত বের করে দিচ্ছিলো। মনে হলো, আমার কর্মযজ্ঞ তার হাসির খোরাক হয়েছে। ছোটদের বোকামিতে বড়দের বুদ্ধিদীপ্ত হাসি যেমনটা হয়, ঠিক তেমন।

তার দীপ্ত বুদ্ধি আমাকে বেশ আন্দোলিত করলো। টেনশনে পড়ে গেলাম। তিন রাস্তার মোড়ে এসে খালার দোকানে এক কাপ চায়ের ফরমাশ করলাম, সাথে একটি ব্যান্সন এন্ড হ্যাজেস। প্রথম টান দিয়ে যখন ভাবতে শুরু করলাম, পাশে বসে থাকা চাচা পান চিবুতে চিবুতে উঠে যাওয়ার সময়, আমার পলিশ করা শু-তে পানের পিক ডেলিভার করে দিলেন। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই বলে উঠলেন, “বাবাজি, ইচ্ছা কইরা করি নাই। টেনশনে আছি। ভুল হয়েছে। মনে কিছু নিয়েন না।”

আমি কিছু বলার আগেই তিনি সটকে পড়লেন। তোমার বাড়ির আশেপাশে হাঁটবো বলে বিশ টাকা খরচ করে ডাবল পলিশ করিয়েছিলাম। চাচার অনিচ্ছাকৃত ভুল আমার আবেগে পানের পিক মাখিয়ে দিলো।

যাই হোক, কন্ডেন্সমিল্কের চায়ে চিনি ব্যবহার করায় মিষ্টি মাত্রাকে অতিক্রম করে ফেলেছে। এবং চাটা আর চায়ে সীমাবদ্ধ নেই। অন্য কিছু হয়ে গিয়েছে। ঐ চাকে আমি কোন নাম দিতে পারলাম না। ঠিক তোমাকে যেমনটা পারছিনা।

চায়ে প্রথম চুকুম দিয়েই, আবারও ভাবতে শুরু করলাম। তোমার প্রজ্ঞা এতোটাই প্রখর যে ঐ বোবা কুকুরও রেহাই পেল না। তুমি তাকেও অন্যমাত্রা দিয়ে দিলে। আর, আমিতো নেহায়েত মানুষ। তাও আবার এ্যকাডেমিক্যালি বরাবরই পুয়র। তোমার বাসার আশেপাশের টং দোকান, খুপরি ঘর, রাস্তার পাশের ভ্যানরিক্সা, লুঙ্গি পরা ফলের দোকানদার, তোমার বাসার ফটক জুড়ে লেপ্টে থাকা নব্য কোন রাজনৈতিক ব্যক্তির অর্ধ ছেড়া, পুরো ছেড়া রঙিন পোস্টারগুলো বেশ লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো কোন শিল্পী ছবি আঁকার আগে তার মঞ্চকে নিজ হাতে সাজিয়ে নিয়েছে।

তোমার বাসার ফটকের দশ গজ ভেতরে যে দু’টি বিশালকায় নারিকেল গাছ আছে, তারা ঠিক অবস্থানে নেই। তারা ফটকের দুপাশে নুঁয়ে থাকলে বেশ লাগতো। ঠিক তোমার মাথার মাঝখানের সিঁথি ধরে যেমন দু’পাশের চুলগুলো চোখের সামনে এসে পড়ে। চোখের পাপড়ি ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়।

তোমার অপেক্ষায় আছি। অফিস থেকে ফিরেতো তুমি এই ফটক পেরিয়েই অন্দরে যাবে। ভাবছি, আজ তোমার সাথে দেখা করেই ফেলবো। হঠাৎ, এসে শটান হয়ে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে যাবো। হকচকিয়ে দেবো তোমাকে।

এইতো তুমি, দৃষ্টি সীমানায় আছো। হন্তদন্ত হয়ে এগুচ্ছো ফটকের দিকে। একবারও পিছন ফিরে তাকাচ্ছ না। তাকালে হয়তো দেখতে পারতে বিশ টাকায় পলিশ করা আবেগে আমি অন্য জনের ভুল বয়ে বেড়াচ্ছি।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ