Home মতামত টেকনোলজি ও টার্নিং পয়েন্ট: বাংলাদেশের প্রশাসন ও ভোটিং ব্যবস্থার উন্নয়ন

টেকনোলজি ও টার্নিং পয়েন্ট: বাংলাদেশের প্রশাসন ও ভোটিং ব্যবস্থার উন্নয়ন

জসীম মজুমদার
১৩৮ views

বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বিশ্বের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) একত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। তবে, অতীতে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য ব্যয়িত বিপুল অর্থের মধ্যে একাংশ দুর্নীতির শিকার হয়েছে। যেমন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পেছনে যে খরচ দেখানো হয়েছে, তার অর্ধেক টাকা স্বৈরশাসকরা আত্মসাৎ করেছে। এই রকম পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে, আমাদের দেশকে নতুন করে গড়তে প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর এখনই সময়।

এআইকে সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়ার দক্ষতা, বা এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘এআই লিটারেসি’ বলতে আমরা বুঝি এআই-এর কার্যপদ্ধতি বোঝা, এটি কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয় তা বুঝতে পারা, এবং এআই থেকে ফলাফলগুলো কীভাবে সঠিকভাবে যাচাই করা যায় সেই জ্ঞান। বর্তমানে মানুষের মধ্যে এই দক্ষতার মাত্রা সমাজের বিভিন্ন স্তরে ভিন্ন হতে পারে। একটি সাধারণ পর্যালোচনার ভিত্তিতে বলা যেতে পারে:

বর্তমান অবস্থান

• বিশেষজ্ঞদের মধ্যে (ডেভেলপার, বিজ্ঞানী, গবেষক): ৭০-৮০% দক্ষতা থাকতে পারে, কারণ এই শ্রেণির মানুষ এআই-এর প্রযুক্তিগত দিক, এর সীমাবদ্ধতা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন এবং একে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে পারে।

• প্রযুক্তিগত দক্ষ পেশাজীবী (ডেটা সায়েন্টিস্ট, ইঞ্জিনিয়ার, আইটি পেশাজীবী): ৫০-৬০% দক্ষতা থাকতে পারে, কারণ তারা এআই সিস্টেম ব্যবহারে যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ্য হলেও হয়তো প্রতিটি ক্ষেত্রে এর গভীরতর কাজকর্ম বোঝেন না।

• ব্যবসায়িক নেতা এবং ম্যানেজার: ৩০-৫০% এর মধ্যে দক্ষতা থাকতে পারে। তারা এআই-এর সুবিধাগুলি বোঝেন, তবে এর কাজ এবং সীমাবদ্ধতাগুলি পুরোপুরি বোঝার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। অনেকের জন্য এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে কৌশলগত প্রয়োগের দিকটি জটিল হতে পারে।

• সাধারণ মানুষ: ১০-৩০% এর মধ্যে দক্ষতা থাকতে পারে। সাধারণ জনগণ এআই-এর ব্যবহার (যেমন: স্মার্টফোন অ্যাপস, চ্যাটবট, অ্যালগরিদম ভিত্তিক সেবা) সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান রাখলেও এর কাজকর্মের গভীরতা, এর এথিকাল দিক এবং এর কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান খুব কমই থাকে।

সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ

১. অপর্যাপ্ত জ্ঞান: এআই কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয় বা ডেটা প্রক্রিয়া করে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি থাকে।

২. ডেটা ইন্টারপ্রিটেশন: এআই-এর সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা বা এর ফলাফল যাচাই করার জন্য ডেটা বিশ্লেষণ করার দক্ষতা সবার নেই।

৩. এথিকাল এবং সিকিউরিটি ইস্যু: এআই ব্যবহারের নৈতিকতা, গোপনীয়তা, এবং পক্ষপাতিত্ব বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার দক্ষতা তুলনামূলকভাবে কম।

সম্ভাবনা

যদিও মানুষের মধ্যে এআই ব্যবহারের দক্ষতা এখনো সীমিত, তবে শিক্ষার প্রসার এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এটি বৃদ্ধি পেতে পারে। এই দক্ষতা বাড়াতে প্রয়োজন:

• এআই-এর বেসিক ধারণা সম্পর্কে শিক্ষার প্রসার।

• ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ।

• নৈতিক এবং নিরাপত্তা দিক সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধি।

সামগ্রিকভাবে, হয়তো ২৫-৩০% মানুষ এআই সঠিকভাবে ব্যবহার এবং নির্দেশনা দিতে সক্ষম, তবে আরও প্রচেষ্টা ও শিক্ষা প্রয়োজন এর উন্নয়নে।

এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় স্যাটেলাইট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনের দুর্নীতি, একটি দুর্নীতিমুক্ত ভোট কেন্দ্র মনিটরিং, খাদ্যদ্রব্যের সিন্ডিকেট, সন্ত্রাস দমন, সীমান্ত পর্যবেক্ষণ, এবং পরীক্ষার হলে নকল নিয়ন্ত্রণে স্যাটেলাইট ও এআই ব্যবহারের মাধ্যমে নজরদারি ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

১. ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা

এআই-ভিত্তিক ট্রাফিক মনিটরিং

বাংলাদেশের বড় শহরগুলোর যানজট একটি বড় সমস্যা। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত রিয়েল-টাইম ভিডিও ও ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে এআই শহরের বিভিন্ন এলাকায় যানবাহনের প্রবাহ ও যানজট পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

• স্মার্ট ট্রাফিক সিগন্যাল: এআই দ্বারা ট্রাফিক সিগন্যালের সময়সূচি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যানবাহনের ঘনত্ব বুঝে সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করে যানজট কমানো যায়।

• গাড়ির আইন লঙ্ঘন সনাক্তকরণ: স্যাটেলাইট চিত্র এবং এআই ব্যবহার করে রাস্তায় আইন লঙ্ঘন করা যানবাহন সনাক্ত করা যায়। এতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।

২. প্রশাসনে দুর্নীতি মনিটরিং

এআই-ভিত্তিক গভর্নমেন্ট ট্রান্সপারেন্সি

সরকারি খাতে দুর্নীতি একটি প্রচলিত সমস্যা। এআই এবং স্যাটেলাইটের ব্যবহার প্রশাসনিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।

• সরকারি প্রকল্প মনিটরিং: স্যাটেলাইট থেকে রিয়েল-টাইম চিত্র এবং ডেটা ব্যবহার করে সরকারি প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি, সাইট পর্যবেক্ষণ, এবং ব্যয় বিশ্লেষণ করা সম্ভব। এর ফলে দুর্নীতি বা অনিয়ম সনাক্ত করা সহজ হবে।

• অডিট ও স্বয়ংক্রিয় রিপোর্টিং: প্রশাসনিক কার্যক্রম এআই ব্যবহার করে অটোমেটিক অডিট করা যায়, যা দুর্নীতির ঝুঁকি কমাবে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

৩. খাদ্যদ্রব্যের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ

সরবরাহ শৃঙ্খল পর্যবেক্ষণ

খাদ্যদ্রব্যের বাজারে সিন্ডিকেট এবং মজুদদারির কারণে ভোক্তারা ন্যায্য মূল্যে পণ্য পায় না। এআই ও স্যাটেলাইটের সাহায্যে সরবরাহ শৃঙ্খল মনিটরিং করে সিন্ডিকেট কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

• মজুদ পর্যবেক্ষণ: বিভিন্ন গুদাম এবং বাজারে খাদ্যদ্রব্যের মজুদ পরিস্থিতি স্যাটেলাইট থেকে পর্যবেক্ষণ করে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

• বাজার মূল্য বিশ্লেষণ: এআই বাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে অবৈধ মূল্য বৃদ্ধি বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টাকে চিহ্নিত করতে পারে।

৪. সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন

নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস

সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে স্যাটেলাইট ও এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। স্যাটেলাইট চিত্র ও এআই ব্যবহার করে সন্ত্রাসীদের গতিবিধি নজরদারি করা এবং সন্দেহজনক কার্যকলাপ চিহ্নিত করা সম্ভব।

• গোপন আস্তানা সনাক্তকরণ: স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করে সন্ত্রাসী আস্তানা, অস্ত্র বা অবৈধ কার্যক্রমের স্থান সনাক্ত করা যায়।

• অনুসন্ধান ও পূর্বাভাস: এআই ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার পূর্বাভাস দিতে সক্ষম, যা সুরক্ষা বাহিনীকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করবে।

৫. সীমান্ত পর্যবেক্ষণ ও বর্ডার গার্ডের কার্যক্রম

স্যাটেলাইট-ভিত্তিক সীমান্ত মনিটরিং

বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং চোরাচালান বা অবৈধ প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

• সীমান্ত পর্যবেক্ষণ: স্যাটেলাইট থেকে সরাসরি চিত্র এবং এআই-চালিত বিশ্লেষণ সীমান্ত এলাকার অবৈধ গতিবিধি এবং চোরাচালান চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।

• আগ্রাসন পূর্বাভাস: স্যাটেলাইট এবং এআই-এর সাহায্যে সীমান্তে সৈন্যদের গতিবিধি বা আগ্রাসনের পরিকল্পনা সনাক্ত করা সম্ভব, যা নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক করতে পারে।

৬. পরীক্ষার হলে নকল নিয়ন্ত্রণ

এআই-চালিত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা

শিক্ষাক্ষেত্রে নকল প্রতিরোধের জন্য স্যাটেলাইট ও এআই ব্যবহার করে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলো মনিটরিং করা সম্ভব।

• পরীক্ষার কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ: স্যাটেলাইট চিত্র ও এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষার হলের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা যাবে, যা নকলচক্রকে রোধ করতে সহায়ক হবে।

• ফেস রিকগনিশন: এআই ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীদের চেহারা সনাক্ত করে নকল বা জালিয়াতি চিহ্নিত করা সম্ভব।

সবশেষে

বর্তমানে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শতভাগ সুরক্ষা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, উন্নত নীতিমালা এবং জনগণের সচেতনতা প্রয়োজন। স্যাটেলাইট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভোটিং সিস্টেমকে আরও কার্যকর, নির্ভরযোগ্য ও স্বচ্ছ করা সম্ভব।

এক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ প্রস্তাব করা যেতে পারে, যা ভোট সিস্টেমকে শতভাগ সুরক্ষিত ও বিশ্বাসযোগ্য করতে সহায়ক হবে:

১. বায়োমেট্রিক ভোটার যাচাই ও ডিজিটাল ভোটার তালিকা

• বায়োমেট্রিক যাচাইকরণ: প্রতিটি ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করতে আঙুলের ছাপ বা আইরিস স্ক্যানের মতো বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করে তা যাচাই করা হবে। এতে ভুয়া ভোটার, ভোট জালিয়াতি, বা একাধিকবার ভোট দেওয়ার সুযোগ রোধ করা সম্ভব হবে।

• স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডেটাবেজ সুরক্ষা: ভোটার তালিকার সব বায়োমেট্রিক তথ্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সুরক্ষিত ডেটাসেন্টারে সংরক্ষণ করা যেতে পারে, যা ডেটা সুরক্ষার জন্য কার্যকর হবে।

২. ই-ভোটিং সিস্টেম

• এআই-চালিত ই-ভোটিং: ভোট প্রক্রিয়ার পুরো অংশটিই ডিজিটালভাবে সম্পন্ন করার জন্য একটি উন্নত ই-ভোটিং সিস্টেম চালু করা যেতে পারে, যা এআই-এর মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এতে প্রতিটি ভোট সঠিকভাবে গণনা ও সংরক্ষণ করা যাবে।

• এনক্রিপশন পদ্ধতি: ভোটের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ভোট এনক্রিপ্টেড থাকবে। এই পদ্ধতিতে ভোটারদের পরিচয় গোপন রেখে সিস্টেমকে সুরক্ষিত করা হবে।

৩. রিয়েল-টাইম মনিটরিং ও লাইভ ফলাফল সম্প্রচার

• সিসিটিভি ক্যামেরা ও সরাসরি সম্প্রচার: প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে তা সরাসরি সম্প্রচার করা সম্ভব, যাতে জনগণ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভোটের স্বচ্ছতা পর্যবেক্ষণ করতে পারে।

• স্যাটেলাইটের মাধ্যমে লাইভ মনিটরিং: স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র রিয়েল-টাইমে নজরদারি করা যাবে, যা অনিয়ম বা কারচুপি দ্রুত শনাক্ত করতে সহায়ক হবে।

৪. ব্লকচেইন ভিত্তিক ভোটিং সিস্টেম

• ব্লকচেইন প্রযুক্তি: ভোটিং সিস্টেমে ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে প্রতিটি ভোটের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা। ব্লকচেইন সিস্টেমে প্রতিটি ভোটের তথ্য একবার সংরক্ষণ হলে তা পরিবর্তন বা মুছে ফেলার কোনো সুযোগ থাকে না, ফলে সিস্টেম থাকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত।

• ফলাফল প্রকাশের স্বচ্ছতা: ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভোটের ফলাফল দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে প্রকাশ করা সম্ভব, যেখানে কোনো কারচুপির সম্ভাবনা থাকবে না।

৫. ডিজিটাল ভোটার কার্ড ও স্মার্ট প্রযুক্তি

• ডিজিটাল আইডি কার্ড: প্রতিটি ভোটারের জন্য উন্নত ডিজিটাল ভোটার কার্ড প্রদান করা যেতে পারে, যা বায়োমেট্রিক তথ্যের মাধ্যমে ভোটারদের পরিচয় নিশ্চিত করবে। এই কার্ডে ভোটারদের এনক্রিপ্টেড তথ্য সংরক্ষিত থাকবে, যা ভোটদানের সময় স্বয়ংক্রিয় যাচাই করবে।

৬. সাইবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা

• এআই-নির্ভর সাইবার নিরাপত্তা: এআই-এর মাধ্যমে ভোটিং সিস্টেমের নিরাপত্তা জোরদার করা যেতে পারে, যা সাইবার আক্রমণ থেকে সিস্টেমকে রক্ষা করবে। এটি হ্যাকিং প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

• ডেটা এনক্রিপশন: প্রতিটি ভোটের ডেটা এনক্রিপ্টেড রাখা হবে, যাতে কোনো তৃতীয় পক্ষ তা ভেদ করতে না পারে বা পরিবর্তন করতে না পারে। এই পদ্ধতি নিশ্চিত করবে ভোটের পূর্ণ নিরাপত্তা।

৭. জনসচেতনতা ও প্রশিক্ষণ

• ভোটার সচেতনতা বৃদ্ধি: ই-ভোটিং বা অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে জনগণকে সচেতন করা ও সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। এটি প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়াগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করবে এবং ভোটারদের আস্থা বৃদ্ধি করবে।

• কর্মী প্রশিক্ষণ: নির্বাচন পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে তারা প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত সকল দিক সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে।

সারমর্ম

বর্তমান প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে, বিশেষত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এর মাধ্যমে। এই উদ্যোগগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং এবং ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।

১. দুর্নীতি রোধ: এআই এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ব্যবহার সরকারি প্রকল্পগুলোর কার্যক্রমের স্বচ্ছতা বাড়াতে এবং ভোট জালিয়াতি রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।

২. নিরাপত্তা বৃদ্ধির সম্ভাবনা: সন্ত্রাসবাদ, চোরাচালান, এবং সীমান্ত নিরাপত্তার উন্নয়নে প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগ সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

৩. সুশাসন ও স্বচ্ছতা: প্রশাসনিক কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহার জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য করবে।

৪. জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: ডিজিটাল ভোটার কার্ড এবং ই-ভোটিং সিস্টেমের মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণ সহজতর হবে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে।

৫. সাইবার নিরাপত্তা উন্নয়ন: এআই-ভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তথ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং সাইবার আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

এভাবে, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করলে বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে এবং একটি উন্নত, আধুনিক সমাজ গড়ার পথে অগ্রসর হতে পারবে।

উপসংহার

এই সমস্ত পদক্ষেপের সমন্বিত বাস্তবায়ন বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ, নিরাপদ এবং আধুনিক ভোটিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। স্যাটেলাইট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শতভাগ সুরক্ষিত রাখা সম্ভব হবে, যা গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বাড়াবে।

আমি বিশ্বাস করি, স্যাটেলাইট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমন্বয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে নজরদারি, স্বচ্ছতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব। এসব প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে শুরু করে নিরাপত্তা, অর্থনীতি, এবং শিক্ষাব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ