দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এতো দিন শুধু নানা ধরনের সংস্কার ও বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্কারোপ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার শুল্ক ছেড়ে যুদ্ধের হুঁঙ্কার দিলেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইয়েমেনের হুতিদের ওপর হামলার আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার নির্দেশের পর রোববার বিমান হামলায় প্রাণ গেছে ৩১ জনের।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সমর্থনপুষ্ট হুতিদের হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, এদের সময় শেষ। এই গোষ্ঠীকে কোনো ধরনের সহায়তা না করার জন্য ইরানকেও সতর্ক করেন তিনি। ইয়েমেনে গোষ্ঠীটির শক্ত ঘাঁটি উত্তরাঞ্চলের প্রদেশ সাদা ও রাজধানী সানায় বিমান হামলা করেছে মার্কিন সেনারা।

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পর সানার একটি এলাকায় ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা যায়, ছবি: গার্ডিয়ান
হামলার তীব্রতা বর্ণনা করে একজন বাসিন্দা জানান, বিমান হামলার বিস্ফোরণে ভূমিকম্পের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল শহরে। তারা আমাদের নারী ও শিশুদের আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। হুতির রাজনৈতিক ব্যুরো এই হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছে। এর জবাব দিতে ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী পুরোপুরি প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে ব্যুরো।
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্পের নির্দেশে এটাই মার্কিন বাহিনীর প্রথম হামলা। সর্বশেষ জো বাইডেনের আমলে গত ৮ জানুয়ারি গোষ্ঠীর ভূগর্ভস্থ দুটি অস্ত্রভর্তি বাঙ্কারে হামলা করে মার্কিনীরা। এতে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
হামলার ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প জানান, তারা (হুতি) দস্যুতা, সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদ করছে আমেরিকান ও অন্যদের সঙ্গে। পাশাপাশি লোহিত সাগরে হামলা করে জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। এজন্য লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই ভয়ঙ্কর বাহিনী নির্মূলে সর্বাত্মক আমরা ব্যবস্থা নেব।
হুতিদের ডজনখানেক স্থাপনায় হামলা চালায় মার্কিন বিমান। এর মধ্যে মিসাইল, রাডার্স, ড্রোন ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল। এই হামলার মাধ্যমে হুতিদের সংযত হওয়ার সঙ্গে ইরানকেও বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্প তার পোস্টে আরও বলেন, হুতিদের বলছি আপনাদের সময় শেষ। এখন হামলা বন্ধ করুন। আর এটা আজ থেকেই শুরু করুন। যদি না করেন, তবে এমন পরিস্থিতি হবে, যা আগে কখনো দেখননি।

হুতিদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালানো মার্কিন যুদ্ধবিমান, ছবি: এবিসি নিউজ
একই পোস্টে ইরানকে হুতিদের সহায়তা বন্ধ করতে হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ও প্রেসিডেন্টকে হুমকি দেবেন না। একইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী শিপিং লাইনের জন্যও হুমকি হবেন না। আর যদি তা হয়, তবে এর ফল ভালো হবে না।
এর জবাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, ইরানের পররাষ্ট্র নীতির বিষয়ে নাক গলানোর কোনো অধিকার নেই যুক্তরাষ্ট্রের। ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলার পর এক্সে তিনি আরও লেখেন, ইসরায়েলের গণহত্যা ও সন্ত্রাসবাদে সহায়তা থেকে বিরত থাকুন। পাশাপাশি বন্ধ করুন ইয়েমেনি মানুষ হত্যা।
ইয়েমেনের বেশির ভাগ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হুতি হচ্ছে সশস্ত্র গোষ্ঠী। চলতি মাসে ট্রাম্প প্রশাসন হুতিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ২০২৩ সালে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজাবাসীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করে সমুদ্রগামী বিভিন্ন জাহাজের ওপর হামলা চালায় গোষ্ঠীটি।
ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করতেই এই পথ বেছে নেয় হুতি। তবে গোষ্ঠীটির এমন কাণ্ডে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয় বিশ্ব বাণিজ্য। ২০২৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত গোষ্ঠীটি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ জাহাজের ওপর ১৭৪ বার ও বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর ওপর ১৪৫ বারের মতো হামলা চালিয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি ও এবিসি নিউজ