Home সাহিত্য মাইকেলেঞ্জেলো ও সিস্টিন চ্যাপেলের স্বর্গীয় সিলিং

মাইকেলেঞ্জেলো ও সিস্টিন চ্যাপেলের স্বর্গীয় সিলিং

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫৯ views

ক্যাথলিক বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র স্থানগুলির একটিতে সিলিং-এ আঁকার প্রস্তাব যে কোনো শিল্পীর জন্যই অতি সম্মানের। সেই প্রস্তাবই কিনা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ইতালির বিখ্যাত চিত্রশিল্পী মাইকেলেঞ্জেলো। পোপ জুলিয়াস দ্যা সেকেন্ড, মাইকেলেঞ্জেলোর কাছে একটি প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন যা ভবিষ্যতে শিল্প ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়। কিন্তু এঞ্জেলো প্রথমে এই কাজটি করতে রাজিই ছিলেন না।  কারণ তখন তিনি ভাস্কর হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তাঁর  দুটি বিখ্যাত ভাস্কর্য হলো ‘পিয়েটা’, এবং ‘ডেভিড’। ডেভিড -এর বর্তমান অবস্থান ফ্লোরেন্সের অ্যাকাডেমিয়া গ্যালারি আর সেন্ট পিটার’স ব্যাসিলিকা, ভ্যাটিকান সিটিতে সংরক্ষিত আছে পিয়েতা।  

পোপ জুলিয়াস দ্যা সেকেন্ড, সিস্টিন চ্যাপেল পুনর্নির্মাণ করতে দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিলেন। তিনি মাইকেলেঞ্জেলোর অবিশ্বাস্য প্রতিভা দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চ্যাপেলটিকে একটি নতুন রূপ দেয়ার জন্য তিনিই হবেন সবচেয়ে যোগ্য শিল্পী। পরবর্তীতে পোপের অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়েই মাইকেলেঞ্জেলো তৈরি করেন পৃথিবীর সবচেয়ে  বিখ্যাত ফ্রেস্কো আর্ট।

article italy florence accademia david closeup Rick Steve europe 1
ছবি: ভাস্কর্য ডেভিড

“ফ্রেস্কো” হল প্রাকৃতিক রং দিয়ে দেয়ালে এক বিশেষ ধরনের প্লাস্টারের উপর আঁকা ছবি। প্লাস্টার আর্দ্র থাকা অবস্থাতেই ছবি আঁকে  ফেলতে হয় এতে ছবিটি দেয়ালে স্থায়ী হয়ে যায়।  ফ্রেস্কো আর্টের জন্য সুনিপুণ শৈল্পিক দক্ষতার প্রয়োজন, কারণ প্লাস্টার একবার শুকিয়ে গেলে ছবির কোনো ভুল ত্রুটি আর সংশোধন করা যায় না!  

মাইকেলেঞ্জেলোর সিস্টিন চ্যাপেলের সিলিং সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্ময়কর শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে একটি। ১৫০৮ থেকে ১৫১২ সালের মধ্যে আঁকা এই অবিস্মরণীয় ফ্রেস্কোটি ‘বুক অফ জেনেসিস’, ‘দ্যা ক্রিয়েশন অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড’, ‘দ্যা লাইফ অফ ক্রাইস্ট’ বইগুলো থেকে চিত্রিত করা দৃশ্য। সিলিং-এর সবচেয়ে বিখ্যাত দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি হলো, ‘দ্যা ক্রিয়েশন অফ এডাম।’ ছবিতে দেখা যায় ঈশ্বর, সৃষ্টির প্রথম মানুষের হাত স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়াচ্ছে। এই ছবিটি মানুষ ও ঈশ্বরের মাঝে সংযোগের প্রতীক হয়ে আছে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য দৃশ্যগুলির মধ্যে ‘দা ক্রিয়েশন অফ ইভ’, ‘দ্যা ফল অফ ম্যান’ ও ‘দ্যা ফ্লাড’ অন্যতম। লম্বা সাদা চুল-দাড়ি ওয়ালা একজন জ্ঞানী বৃদ্ধ হিসাবে ঈশ্বরের ছবি চ্যাপেলের ছাদেই  প্রথম দেখতে পাওয়া যায়। মাইকেলেঞ্জেলোর আগে, ঈশ্বরকে সাধারণত মেঘ থেকে নেমে আসা একটি হাত হিসাবে চিত্রিত করা হতো। তিনিই প্রথম ঈশ্বরকে এমন অবয়ব দিয়েছেন।

God Touching Adam Painting art in context
ছবি: দ্যা ক্রিয়েশন অফ এডাম

অনেকেই মনে করেন যে, মাইকেলেঞ্জেলো তার পিঠে শুয়ে সিস্টিন চ্যাপেলের সিলিং এঁকেছিলেন। কিন্তু মাইকেলেঞ্জেলো আসলে একটি বেদির উপর দাঁড়িয়ে কাজ করতেন, যা তিনি নিজেই তৈরি করেছিলেন। সিস্টিন চ্যাপেলে আঁকার সময় তিনি পিঠের ব্যথায় ভুগছিলেন এমনকি এই বিষয় নিয়ে তিনি একটি কবিতাও লিখেছিলেন। কবিতায় তিনি বলেন, এই ছবি আঁকার সময়টা তিনি মোটেও উপভোগ করেননি। 

মাইকেলেঞ্জেলো চার বছর ধরে এই চ্যাপেলের দেয়ালে কাজ করেছেন। এর সৌন্দর্য, জটিলতা এবং ধর্মীয় তাৎপর্য এটিকে ভ্যাটিকান সিটি পরিদর্শনকারী যে কারো জন্য একটি মনোমুগ্ধকর দর্শনীয় স্থান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ