এ বছর পালন করা হচ্ছে মাওলানা জালালুদ্দিন রুমির ৭৫০তম ওরস। সুফি দরবেশদের তিরোভাবের দিনটিকে ‘ওরস’ বলা হয়। ‘ওরস’ একটি আরবি শব্দ, এর অর্থ ‘মিলন’ বা ‘বাসর’। ইহলোকের সাথে পারলৌকিক মিলন তথা ঈশ্বরের অখণ্ডতার মাঝে বিলীন হয়ে যাওয়ার বিষয়টাকে মহিমান্বিত করতেই এই নামকরণ। রুমি তার সঙ্গীত, কবিতা ও আধ্যাত্মিক চর্চার মাধ্যমে পৃথিবীজুড়ে অগণিত মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তার পার্থিব দেহাবসানকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর এই ওরস উদযাপন করা হয়, যা রুমির জীবন এবং আধ্যাত্নিক জ্ঞান উদযাপন করার জন্য পবিত্র একটি দিন।
বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বহু দর্শনার্থী ও অনুরাগী রুমির জন্মস্থান তুরস্কের কনিয়া শহরে সমবেত হচ্ছেন আজ। এখানে কয়েকদিন ধরে সাধুদের মিলনমেলা হয়। সারাদিন ধরে নানারকম আয়োজন থাকে তার মাঝে ঐতিহ্যবাহী সুফি নৃত্য ‘হোয়ির্লিং ডারভিশেস’ বা ‘ঘূর্ণনরত দরবেশ’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ওরস উদযাপনে সাফা প্রার্থনা, কবিতা পাঠ, সঙ্গীত পরিবেশন এবং দার্শনিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
ঈশ্বরের কাছে পৌঁছানোর অনেক পথের মাঝে রুমি প্রেমকে বেছে নিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে সুফিসাধকেরা ঈশ্বরের প্রতি প্রেমের প্রকাশ করতে বারবার তাই রুমির কাছে ফিরে আসেন। রুমির মাঝেই যেন তাদের প্রশ্নের উত্তর, রুমির মাঝেই শান্তি। ইসলামের প্রেমময় দিকটিকে আবিস্কার করে রুমি যেভাবে তার অনুভবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে এই প্রেমের চাইতে নিস্পাপ ও স্বর্গীয় আর কিছুই নেই।

মাওলানা স্কয়ার, কনিয়া, তুর্কি। ছবি: ডেইলি সাবাহ
সুফিভাবের লেখক তোরিফা নাজমিনা মণির অনুদিত রুমির কবিতা:
১.
যা হয়েছে বা যা হবে না
তা ভেবে জীবন দু:খময় করো না।
২.
কেবল আমিত্বকে ত্যাগ করো,
অখণ্ডের রহস্য জানতে এটুকু আত্মদানই যথেষ্ট।
৩.
শোক করো না
যা কিছু হারায়
তা ভিন্ন রূপে আসে।
৪.
যদি হৃদয়ে আলো থাকে,
আপন ঘরের পথ খোঁজো।
৫.
প্রেমিক সর্বদা একা।
এমন কি যখন তিনি লোকারণ্যে থাকেন।
তেল এবং জলের মতন,
তিনি একা রয়ে যান!

ঐতিহ্যবাহী সুফি নৃত্য ‘হোয়ির্লিং ডারভিশেস’। ছবি:সিজিটিএন
৬.
প্রদীপ ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু
আলোক একই।
৭.
ভালোবাসা মানবিক।
যাতনা অনুভব করা মানবিক।
ভালোবাসা সত্ত্বেও যাতনা
অনুভব করা দেবদূতপম।
৮.
যে ব্যক্তির একজন
উপকারী বন্ধু আছে তার
আয়নার প্রয়োজন নেই।
৯.
‘প্রেম কী?’
যখন ‘তুমি; ‘আমরা’ হবে তখনই জানবে।
১০.
যদি তোমার হৃদয়ে আলো থাকে
তবে আপন ঘরে ফেরার পথ খুঁজে পাবে।