Home লাইফস্টাইল মাল্টিটাস্কিং আসলে কতটা ভালো?

মাল্টিটাস্কিং আসলে কতটা ভালো?

ফাহমিদা বৃষ্টি
১৬৯ views

মাল্টিটাস্কিং হলো একই সময়ে একাধিক কাজ করা, একটা কাজে মনোযোগ স্থির না রেখে নানা দিকে বিক্ষিপ্ত করে দেওয়া। এটি কিন্তু নতুন কোনো ধারণা নয়। এক কাজের সাথে মিলিয়ে আরেক কাজ করার প্রচলন তো অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। কিন্তু বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এসে এ ধারণা প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। চাকরির সিভিতে অনেকে দক্ষতা হিসেবে এই বিষয়টিকে হাইলাইট করে।

অনেকেরই মনে এমন একটি ধারণা জন্মেছে যে, যে যত বেশি মাল্টিটাস্কিং করতে পারে, সে তত বেশি চৌকস ও দক্ষ। তবে গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। গবেষকদের মতে, মাল্টিটাস্কিং আমাদের দক্ষ বা চৌকস তো করেই না, বরং প্রোডাক্টিভিটি উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে দেয়। একসাথে অনেক কাজ করতে গেলে মনোযোগ হারিয়ে যায়, যা পরবর্তীতে মানসিক চাপ বা স্ট্রেসে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

multitasking 640x400 womens brai 1

বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এসে মাল্টিটাস্কিং প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ছবিঃ ওমেনস ব্রেইন হেলথ

মাল্টিটাস্কিংয়ের মন্দ দিক

আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা রিপোর্ট লিখতে বসেছেন কম্পিউটারে। তার সাথে ব্রাউজারে খোলা আছে অনেকগুলো ট্যাব, যার মধ্যে আছে আপনার মেইল, অনলাইন পত্রিকা, রিপোর্ট লেখার জন্য প্রয়োজনীয় আরও অনেকগুলো ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব ইত্যাদি। আবার পাশেই আছে স্মার্টফোনটা, যেখানে ওয়াইফাই বা মোবাইল ডাটা অন এবং টুংটাং ম্যাসেজ আর নোটিফিকেশনের আওয়াজ আসার সমূহ সম্ভাবনা। এরকম অবস্থায় ঠিক কতটুকু মনোযোগ দিয়ে আপনার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্টটি লেখা সম্ভব? আপনার মনে হতে পারে, সমস্যাটা কোথায়? আমার ‘মনোযোগ’ আমি আমার ইচ্ছামতো ভাগ করতেই পারি। আসলে সমস্যাটা এখানেই।

বর্তমান যুগে ‘অ্যাটেনশন স্প্যান’ এমনিতেই অনেক কমে গেছে। তার মধ্যে যদি মস্তিষ্ককে মাল্টিটাস্কিংয়ের বাড়তি পরিশ্রম করাই, তাহলে তার কাজ করার ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই অনেক কমে আসবে।

man sitting living room home sad

একসাথে অনেক কাজ করতে গেলে মনোযোগ হারিয়ে যায়, যা পরবর্তীতে মানসিক চাপ বা স্ট্রেসে পরিণত হয়

অনেক গবেষণায় এটাই উঠে এসেছে। এই নিয়ে এমআইটির (ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) অধ্যাপক ও গবেষক আর্ল মিলারের বলেন, মানুষ একবারে একটা জিনিসেই মনোযোগ দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, সাম্প্রতিক গবেষণা এ-ও বলে, মাল্টিটাস্কিং আমাদের কর্মদক্ষতাকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে।

আমরা মাল্টিটাস্কিংয়ের নামে যা করি, তা মূলত এক কাজ থেকে অন্য কাজে খুব দ্রুত ‘সুইচ’ করা। একে বলা চলে ‘টাস্ক সুইচিং’। এভাবে দ্রুতগতিতে এক কাজ থেকে অন্য কাজে বারবার চলে যাওয়ার ফলে কোনো কাজেই পূর্ণ মনোসংযোগ ধরে রাখা যায় না। ফলে কোনো কাজই সুসম্পন্ন হয় না। উপরন্তু, আমাদের মস্তিষ্কও এতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

businessman with many hands suit

মাল্টিটাস্কিং আমাদের কর্মদক্ষতাকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা মাল্টিটাস্কিং করে থাকে, তাদের কাজের মান তুলনামূলক খারাপ হয়। এর কারণ, অনেকগুলো কাজ একই সময়ে করতে থাকলে মস্তিষ্কে অনেক তথ্য এসে জড়ো হয়। সেই তথ্যের মধ্য থেকে মূল কাজটাকে বের করে আনার জন্য মস্তিষ্ককে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এতে কাজের মান ও গতি দুটোই কমে যায়।

মনঃসংযোগ ও একাগ্রতা সফলতার চাবিকাঠি

মনোবিজ্ঞানীরা বর্তমানে মাইন্ডফুলনেস তথা মনঃসংযোগ বৃদ্ধিতে জোর দেওয়ার কথা বলছেন। কারণ, গুরুত্বপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে সফলতার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো একাগ্রতা আর মনঃসংযোগ। এটি ধরে রাখতে চাইলে একবারে একটা কাজেই মন দিতে হবে। আমাদের যাপিত জীবনের কাজগুলো যদি আমরা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করি, তাহলে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ