Home লাইফস্টাইল ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স: জীবনের সঠিক ছন্দ খুঁজে পাওয়ার গল্প

ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স: জীবনের সঠিক ছন্দ খুঁজে পাওয়ার গল্প

ফাহমিদা শিকদার
২২ views

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত এবং প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর একটি হলো ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স। আমরা যখন দিনের বেশিরভাগ সময় কাজের পেছনে ব্যয় করি, তখন ব্যক্তিগত জীবন ও সম্পর্কের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি। এই ভারসাম্য হারানো শুধু মানসিক চাপই বাড়ায় না, শারীরিক সুস্থতার উপরও প্রভাব ফেলে। তাই কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে একটা স্বাস্থ্যকর সীমারেখা টানা এখন সময়ের দাবি।

ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স কী?
ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স বলতে বোঝায় এমন একটি অবস্থা, যেখানে একজন ব্যক্তি তার পেশাগত ও ব্যক্তিগত দায়িত্বগুলোকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে। এর অর্থ এই নয় যে কাজের সময় কমিয়ে দেওয়া, বরং এমনভাবে সময় বণ্টন করা যাতে পেশাগত সফলতার পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত সময়ও উপভোগ করা যায়।

বর্তমান সময়ে এর প্রয়োজনীয়তা কেন এত বেশি?
প্রযুক্তির উন্নয়ন আমাদের জীবন যেমন সহজ করেছে, তেমনি কাজের জায়গায় আমাদের উপস্থিতি নিরবচ্ছিন্ন করে তুলেছে। অফিসের কাজ এখন আর অফিসেই সীমাবদ্ধ নয়—মোবাইল, ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা ২৪ ঘণ্টাই কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকি। এতে করে কাজ এবং বিশ্রামের সীমারেখা ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

representation person carrying b

ইন্টারনেটের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টাই কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে কাজ এবং বিশ্রামের সীমারেখা ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ছবি: ফ্রিপিক

বিশেষ করে কোভিড-পরবর্তী সময়ে হাইব্রিড বা রিমোট ওয়ার্কের সংস্কৃতি আমাদের ঘরের ভেতরেই অফিস বানিয়ে ফেলেছে। ফলে বাড়ি থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত সময়ের স্বাদ যেন ফিকে হয়ে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স না রাখলে জীবনে ক্লান্তি, অবসাদ এবং সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা দিতে পারে।

ভারসাম্য না থাকলে কী ক্ষতি হতে পারে?
মানসিক চাপ ও অবসাদ: কাজের অতিরিক্ত চাপ দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। ঘনঘন মুড সুইং, বিষণ্ণতা, এবং উদ্বেগ দেখা দিতে পারে।

  • শারীরিক অসুস্থতা: টানা বসে কাজ করা, বিশ্রামের অভাব, এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ও ঘুমের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।
  • পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়: সময়ের অভাবে পরিবার, বন্ধু কিংবা সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। যার ফলে একাকীত্ব এবং সম্পর্কজনিত সমস্যা দেখা দেয়।
work life balance 1

সময়ের অভাবে পরিবার, বন্ধু কিংবা সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়, ছবি: হ্যাপিনেস ইনডেক্স

কীভাবে ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স রক্ষা করা যায়?

  • সীমা নির্ধারণ করুন: অফিসের সময় ও ব্যক্তিগত সময়ের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট সীমা টানুন। অফিসের বাইরে ইমেইল বা কল এড়িয়ে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • সময় ব্যবস্থাপনা শিখুন: প্রতিদিনের কাজকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভাগ করুন। যেসব কাজ জরুরি নয়, তা পরবর্তী সময়ে সরিয়ে রাখা যেতে পারে।
  • ‘না’ বলতে শিখুন: অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে না পারলে বিনয়ের সঙ্গে না বলতে শিখুন। সবকিছু একা করার মানে দক্ষতা নয়।
  • বিশ্রাম ও অবসর উপভোগ করুন: প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন। বই পড়া, গান শোনা, হাঁটাহাঁটি কিংবা ধ্যান—যা আপনাকে প্রশান্তি দেয়, তা করুন।
  • শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখুন: সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং নিয়মিত ব্যায়াম শুধু শরীর নয়, মনের জন্যও উপকারী।
glad concentrated woman focused

প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় নিজের জন্য রাখুন, ছবি: ফ্রিপিক

প্রতিষ্ঠানগুলোর করণীয়
ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স শুধু ব্যক্তির দায়িত্ব নয়, প্রতিষ্ঠানগুলোরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠান যদি কর্মীদের জন্য নমনীয় সময়সূচি, রিমোট ওয়ার্কের সুযোগ, এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সহায়তা প্রদান করে, তাহলে কর্মক্ষেত্রে সন্তুষ্টি ও উৎপাদনশীলতা দুটোই বাড়ে।

বর্তমানে অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যেমন গুগল, মাইক্রোসফট ইত্যাদি ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্সে জোর দিচ্ছে। কর্মীদের মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতা, অবকাশকালীন ছুটি, এবং কাজের চাপ কমিয়ে আনা এখন সফল কর্মসংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ।

ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স মানে এক রুটিনে বাঁধা জীবন নয়, বরং নিজের প্রয়োজন ও ভালো থাকার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। এই ভারসাম্য রক্ষা করা মানে নিজেকে এবং নিজের কাছের মানুষদের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। জীবনের প্রকৃত অর্থ শুধুমাত্র কাজ নয়, বরং সেই কাজের মাঝেও নিজের জন্য সময় বের করে নেওয়া—সেটাই আজকের সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং অর্জন।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ