Home লাইফস্টাইল ‘টক্সিক রিলেশনশিপ’ আপনাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে না তো?

‘টক্সিক রিলেশনশিপ’ আপনাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে না তো?

ফাহমিদা শিকদার
৩০ views

সম্পর্ক মানেই ভালোবাসা, সম্মান ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার জায়গা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি সব সম্পর্ক ইতিবাচক হয় না। টক্সিক রিলেশনশিপ বা বিষাক্ত সম্পর্ক এমন এক মানসিক অবস্থার জন্ম দেয়, যা শারীরিক ও মানসিক—দুই দিক থেকেই বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

‘টক্সিক রিলেশনশিপ’ আসলে কি?

‘টক্সিক রিলেশনশিপ’ এটি এমন একটি সম্পর্ক যেখানে একজন মানুষ আরেকজনকে বারবার কষ্ট দেয়, সন্দেহ করে, অবমূল্যায়ন করে, মানসিক চাপে রাখে কিংবা দোষারোপ করে। এই সম্পর্ক দীর্ঘদিন চললে তা শরীরের ভেতরে ভিতরে ক্ষয় শুরু করে দেয়।

কিভাবে বুঝবেন আপনি টক্সিক রিলেশনশিপে আছেন?

সব সম্পর্কেই ওঠানামা থাকে, কিন্তু টক্সিক রিলেশনশিপে সেই ওঠানামা রীতিমতো যন্ত্রণার রূপ নেয়। অনেক সময় আমরা বুঝতেই পারি না, সম্পর্কটা আমাদের মানসিক ও শারীরিকভাবে ধ্বংস করছে। নিচের লক্ষণগুলো দেখলেই বোঝা যাবে আপনি কি টক্সিক রিলেশনশিপে আছেন:

  • অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ: আপনার পার্টনার যদি আপনার কী পরবেন, কার সঙ্গে কথা বলবেন, কোথায় যাবেন—সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে সেটি একটি সতর্ক সংকেত।
  • নিজেকে দোষী ভাবা: সবসময় যদি আপনি নিজেকে ভুল ভাবেন, এমনকি অপর পক্ষের ভুলের জন্যও নিজেকে দায়ী করেন, তাহলে সেটা টক্সিক সম্পর্কের চিহ্ন।
  • সম্মানের অভাব: যদি আপনার কথা, অনুভূতি বা সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব না দিয়ে বারবার উপেক্ষা করা হয়, তা হলে সেই সম্পর্কে সম্মানের অভাব রয়েছে।
  • নেতিবাচক মন্তব্য ও অপমান: ‘তুমি কিছুই পারো না’, ‘তুমি বাজে মানুষ’—এমন কথা যদি নিয়মিত শুনতে হয়, তাহলে সেটা স্পষ্ট মানসিক নির্যাতন।
displeased woman refusing talkin

অপর পক্ষ কোনো সমঝোতা করছে না—এটা ভারসাম্যহীন সম্পর্কের লক্ষণ, ছবি: ফ্রিপিক

  • ভয় আর আতঙ্কে থাকা: যদি সবসময় ভয়ে থাকেন কখন রাগ করবে, চিৎকার করবে বা অপমান করবে, তাহলে আপনি এক অসুস্থ মানসিক পরিবেশে আছেন।
  • একতরফা আত্মত্যাগ: আপনি সবকিছু ছাড় দিয়ে সম্পর্কটা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন, কিন্তু অপর পক্ষ কোনো সমঝোতা করছে না—এটা ভারসাম্যহীন সম্পর্কের লক্ষণ।
  • বিশ্বাসঘাতকতা ও মিথ্যা কথা: বারবার ধরা পড়া মিথ্যে কথা, প্রতারণা কিংবা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ—সবই সম্পর্কের বিষাক্ততার প্রমাণ।
  • আত্মমর্যাদার ক্ষয়: আপনি আগের মতো আত্মবিশ্বাসী নন, নিজেকে তুচ্ছ মনে হচ্ছে, জীবনের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে—এটা টক্সিক রিলেশনশিপের গভীর প্রভাব।

টক্সিক রিলেশনশিপের ক্ষতিকর দিক

মানসিক স্বাস্থ্য সবচেয়ে আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টক্সিক পার্টনারের অবিরাম নেতিবাচক মন্তব্য, অবিশ্বাস বা নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা একজনকে মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং কখনো কখনো আত্মহত্যার চিন্তার দিকে ঠেলে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ব্রেনের নিউরোকেমিক্যাল ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, যা হতাশা এবং দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ।

শুধু মানসিক নয়, শরীরের ওপরেও এর প্রভাব পড়ে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা রক্তচাপ বৃদ্ধি, হৃদরোগ, হজমে সমস্যা এবং অনিদ্রার কারণ হতে পারে। অনেকেই টক্সিক রিলেশনশিপের চাপ কাটাতে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া, মদ্যপান কিংবা ধূমপানের মতো ক্ষতিকর অভ্যাসে জড়িয়ে পড়েন, যা শরীরকে আরও দুর্বল করে দেয়।

couple having communication prob

টক্সিক রিলেশনশিপের কারণে মানুষের সামাজিক জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ছবি: ফ্রিপিক

এছাড়াও, টক্সিক রিলেশনশিপের কারণে মানুষের সামাজিক জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষ ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়, এবং একাকীত্বের অনুভূতি জন্ম নেয়, যা মানসিক চাপকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

এই ধরণের সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়, কিন্তু জরুরি। আত্মমর্যাদার কথা চিন্তা করে নিজের মনের কথা বলতে শিখতে হবে। প্রয়োজনে কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে—ভালোবাসা কখনোই কষ্টের মাধ্যমে প্রকাশ পায় না।

সুস্থ থাকতে চাইলে শুধু শরীর নয়, মনকেও গুরুত্ব দিতে হবে। আর সেই মন ভালো রাখার অন্যতম শর্ত—একটি স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ