শরীরচর্চা মানেই কি শুধুই জিম আর দৌড়ানো? একেবারেই নয়। আনন্দের সঙ্গে শরীর ও মনকে সতেজ রাখার অন্যতম উপায় হলো নাচ। এটি কেবল একটি শিল্প বা বিনোদন নয়; বরং একটি শক্তিশালী শারীরিক ও মানসিক ব্যায়াম, যা আমাদের সামগ্রিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শারীরিক স্বাস্থ্য
নাচ করার সময় পুরো শরীর সক্রিয়ভাবে কাজ করে। নিয়মিত নাচলে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পায়, রক্তসঞ্চালন উন্নত হয় এবং পেশির নমনীয়তা বাড়ে। বিভিন্ন নাচের ধরন, যেমন সালসা, হিপ-হপ, ভরতনাট্যম বা রবীন্দ্রনৃত্য—প্রতিটিই শরীরের বিভিন্ন অংশের মাংসপেশি মজবুত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাত্র ৩০ মিনিট নাচলে ২০০-৪০০ ক্যালরি পর্যন্ত খরচ হতে পারে। ফলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
এছাড়া, নাচে শরীরের সমন্বয় ক্ষমতা ও ভারসাম্য বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত নৃত্যচর্চা হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে, ফলে বার্ধক্যে হাড় ক্ষয়ের সম্ভাবনা কমে। শিশুকাল থেকে যদি নাচের অভ্যাস গড়ে ওঠে, তাহলে শারীরিক বিকাশও হয় সুন্দরভাবে।

নাচে শরীরের সমন্বয় ক্ষমতা ও ভারসাম্য বৃদ্ধি পায়, ছবি: ফ্রিপিক
মানসিক স্বাস্থ্য
শুধু শরীর নয়, মনও নাচের মাধ্যমে নতুন প্রাণ পায়। নাচের সময় শরীরে ‘এন্ডোরফিন’ নামক সুখের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। বিষণ্নতা বা হতাশার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নাচ হতে পারে এক চমৎকার ওষুধ।
নাচের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশের সুযোগ তৈরি হয়, যা আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। একটি দলগত নাচ বা পারফরম্যান্সের সময় সামাজিক মেলবন্ধনও ঘটে, ফলে একাকীত্বের অনুভূতি দূর হয়। বিশেষ করে ক্রিয়েটিভ নাচের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশ সহজ হয়, যা মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো স্মৃতিভ্রংশজনিত রোগ প্রতিরোধে নাচের ভূমিকা রয়েছে। কারণ নাচের সময় মনে রাখতে হয় বিভিন্ন স্টেপ, মিউজিকের ছন্দ—যা মস্তিষ্কের স্মৃতি ও মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।

আলঝেইমার বা ডিমেনশিয়ার মতো স্মৃতিভ্রংশজনিত রোগ প্রতিরোধে নাচের ভূমিকা রয়েছে, ছবি: ফ্রিপিক
নাচের ধরন নির্বাচন
নিজের পছন্দমতো নাচের ধরন নির্বাচন করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ জোরে ছন্দে নাচতে পছন্দ করেন, তবে হিপ-হপ বা সালসা উপযুক্ত হতে পারে। আবার যদি ধীর লয়ের নাচ ভালো লাগে, তবে ওয়াল্টজ বা শাস্ত্রীয় নৃত্যের অনুশীলন করতে পারেন। প্রতিটি নাচের নিজস্ব শারীরিক উপকারিতা রয়েছে। এছাড়া এখন অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ড্যান্স ওয়ার্কআউটের মাধ্যমে শরীরের ফিটনেস বজায় রাখছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ড্যান্স ওয়ার্কআউটগুলো হলো- জুম্বা, ব্যালে ফিটনেস, বলিউড ড্যান্স ওয়ার্কআউট, হিপ-হপ ড্যান্স ফিটনেস, ড্যান্স কার্ডিও।
জীবন যতই ব্যস্ত হোক না কেন, প্রতিদিনের রুটিনে অন্তত কিছুটা সময় নাচের জন্য রাখা উচিত। এটি শরীর ও মনকে সতেজ রাখার পাশাপাশি জীবনে নিয়ে আসে প্রাণবন্ত এক আনন্দের অনুভূতি। সুতরাং, আজ থেকেই তালমেলাতে শুরু করুন—নাচুন, প্রাণ খুলে বাঁচুন!