ত্বকের যত্নের দুনিয়ায় “রেটিনয়েডস” এখন প্রায় এক ম্যাজিকের নাম। ব্রণ থেকে শুরু করে বয়সের ছাপ, রঙের তারতম্য, এমনকি সূর্যরশ্মিজনিত ক্ষতও — সবকিছুর জন্যই অনেকে রেটিনয়েডসকে ‘একক সমাধান’ মনে করেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রেটিনয়েডস কি আসলেই ত্বকের সব সমস্যার একমাত্র এবং চূড়ান্ত উত্তর?
রেটিনয়েডস কী?
রেটিনয়েডস হলো ভিটামিন A-এর ডেরিভেটিভ বা উপজাত, যা ত্বকের কোষের পুনর্গঠন ও কার্যকারিতায় সহায়তা করে। বাজারে দুই ধরনের রেটিনয়েড পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে প্রেসক্রিপশন রেটিনয়েডস (যেমন: Tretinoin, Adapalene) ; যা ডার্মাটোলজিস্টরা রোগীদের প্রেসক্রাইব করেন। অন্যটি হলো ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) রেটিনয়েডস (যেমন: Retinol, Retinaldehyde)- এগুলো যেকোনো বিউটি স্টোর বা ফার্মেসিতে পাওয়া যায়, ক্রিম বা সিরাম ফর্মূলায়।
রেটিনয়েডসের কার্যকারিতা
- বিজ্ঞানসম্মত গবেষণায় প্রমাণিত, রেটিনয়েডস একাধিক সমস্যায় কার্যকর:
- ব্রণ নিয়ন্ত্রণ: রোমকূপের ভেতর মরা কোষ জমা রোধ করে এবং প্রদাহ কমায়।
- বয়সের ছাপ কমানো: কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, ফলে বলিরেখা মসৃণ হয়।
- ত্বকের রঙ ও টেক্সচার উন্নতি: ত্বকের কালো দাগ ও রুক্ষতা হ্রাস করে।
- সূর্যের ক্ষতি মেরামত: ফাইন লাইনস ও রঙের অনিয়ম ঠিক করতে সাহায্য করে।

রেটিনয়েডস ত্বকের বড় বড় সমস্যার সমাধান করলেও এটি সবার জন্য নয়, ছবি: ড. নিকোল ডার্মাটোলজিস্ট
তবে সব সমস্যার সমাধান?
এখানে বলে রাখা ভালো, এই উপাদান ত্বকের বেশ বড় বড় সমস্যার সমাধান করতে পারলেও- ‘সামগ্রিক’ সমস্যার প্রতিকার এর হাতে নেই। আবার এটি সবার জন্যও নয়। রেটিনয়েডস যতটা প্রশংসিত, এর কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। ত্বকে সহনশীল হতে বেশ সময় লেগে যায়। ব্যবহারের পর ত্বকে লালচে ভাব, খোসা উঠা বা জ্বালাপোড়া হতে পারে, বিশেষ করে শুরুর দিকে। ফলাফল দেখাতে অন্তত ৮-১২ সপ্তাহ লাগতে পারে। রেটিনয়েডস সবার জন্য নয়। অতিমাত্রায় সংবেদনশীল ত্বক, গর্ভাবস্থা বা বিশেষ কিছু চর্মরোগ থাকলে রেটিনয়েডস ব্যবহার সতর্কতার সাথে করতে হয়।
কিভাবে রেটিনয়েড ব্যবহার করবেন?
- প্রথমে কম শক্তির (যেমন, 0.025% tretinoin বা retinol) দিয়ে শুরু করুন।
- সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করে ধীরে ধীরে বাড়ান।
- সঙ্গে অবশ্যই ভালো ময়েশ্চারাইজার এবং সকালে উচ্চ SPF যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
- কখনোই রেটিনয়েডসের সাথে স্ক্রাবার বা অ্যাসিডিক প্রোডাক্ট (যেমন BHA, AHA) একসাথে ব্যবহার করবেন না।
রেটিনয়েডস নিঃসন্দেহে ত্বকের এক অসাধারণ বন্ধু — তবে এটি কোনো “ম্যাজিক” নয়। ধারাবাহিকতা, সঠিক পদ্ধতি এবং ধৈর্যের সঙ্গে ব্যবহার করলে ত্বকে সত্যিকারের পরিবর্তন আনা সম্ভব। আর প্রয়োজনে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়াই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।