Home লাইফস্টাইল গরমে শিশুদের সুরক্ষায় করণীয়

গরমে শিশুদের সুরক্ষায় করণীয়

ফাহমিদা শিকদার
৩৯ views

প্রচণ্ড গরমে প্রাপ্তবয়স্করাও হাঁসফাঁস করে ওঠেন, সেখানে শিশুদের অবস্থা কেমন হতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। শিশুরা সহজেই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে—জ্বর, ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোক বা ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই সময় বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি। আসুন জেনে নিই, কীভাবে গরমে শিশুর যত্ন নিতে হবে যাতে সে সুস্থ ও স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারে।

হাইড্রেশন বা পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করুন
গরমে শিশুর শরীরে পানি দ্রুত শুকিয়ে যায়। তাই নিয়মিত পানি পান করা খুব জরুরি। ছোট শিশু হলে তাকে মায়ের দুধ বা ফর্মুলা দুধ নিয়ম করে দিতে হবে। একটু বড় শিশুদের ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের শরবত বা ঘরের তৈরি ছাতুর শরবতের মতো পানীয় দেওয়া যেতে পারে। তবে রাস্তার ফাস্ট ফুড বা প্যাকেটজাত ঠান্ডা পানীয় একেবারেই দেওয়া উচিত নয়। এতে কেবল চিনি ও রাসায়নিক উপাদান থাকে, এগুলো পান করলে হিতে-বিপরীত হতে পারে।

হালকা, সুতির ও ঢিলেঢালা পোশাক দিন
শিশুরা অনেক নড়ে-চড়ে থাকে। গরমে যদি টাইট, সিনথেটিক কাপড় পরানো হয়, তাহলে ত্বকের সমস্যা বা ঘামাচি হতে পারে। তাই তাদের সুতির, হালকা রঙের ঢিলেঢালা জামা-কাপড় পরানো উচিত। বাইরে গেলে টুপি ও ছাতা ব্যবহার করানো ভালো। রোদে সরাসরি চলাফেরা করানো এড়িয়ে চলুন।

child drinks from plastic bottle

আপনার শিশু পর্যাপ্ত পানি পান করছে কিনা সেদিকে নজর রাখুন, ছবি: ফ্রিপিক

খাদ্যতালিকায় সতেজ ফলমূল ও হালকা খাবার রাখুন
গরমকালে ভারী বা তৈলাক্ত খাবার হজম করতে শিশুদের সমস্যা হয়। তাই খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে—ডাল-ভাত, সবজি, ফলমূল, দই ইত্যাদি। পাকা আম, তরমুজ, পেয়ারা, লিচু, বেল, জাম—এই সব গ্রীষ্মকালীন ফল শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে (বয়স অনুযায়ী সতর্কতা মেনে)। অতিরিক্ত মশলা বা তেলে ভাজা খাবার দেওয়া একেবারেই উচিত নয়।

পথের খাবারকে ‘না’ বলুন
ছোট শিশুদের ঝালমুড়ি, চটপটি, ফুচকা, আচার- এইসব খাবারের প্রতি প্রবল আকর্ষন থাকে। এই সময়ে এ ধরনের পথের খাবার একদম খাওয়া যাবে না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি খাবার থেকে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিসের মতো রোগ হতে পারে। যদি সম্ভব হয় এমন মুখরোচক খাবার ঘরে তৈরি করুন।

ঘর শীতল ও বায়ু চলাচলযোগ্য রাখুন
শিশুর থাকার ঘরে যেন পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। দরকারে ফ্যান বা কুলার ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে সরাসরি শিশুর গায়ে বাতাস না লাগানোই ভালো। এসি ব্যবহার করলে ঘর খুব ঠান্ডা করে ফেলা ঠিক নয়। বেশি তাপমাত্রা থেকে হঠাৎ ঠান্ডায় গেলে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা থাকে।

cheerful positive adorable small

এই সময়ে দিনে অন্তত ১-২ বার হালকা গরম পানি দিয়ে শিশুকে গোসল করাতে পারেন, ছবি: ফ্রিপিক

ঘনঘন গোসল বা স্পঞ্জিং করান
গরমে শিশুর শরীর ঠান্ডা রাখার অন্যতম উপায় হল গোসল। দিনে অন্তত ১-২ বার হালকা গরম পানি দিয়ে শিশুকে গোসল করাতে পারেন। বাইরে থেকে এলে অবশ্যই মুখ-হাত-পা ধুয়ে দেওয়া জরুরি। ছোট শিশু হলে হালকা কাপড়ে ভেজা তোয়ালে দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া (স্পঞ্জিং) করাতে পারেন।

রোদ এড়িয়ে চলুন
দুপুর ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সূর্যের তাপ তুঙ্গে থাকে। এই সময় শিশুদের বাইরে বের না করাই ভালো। যদি একান্ত বের হতেই হয়, তবে ছাতা, টুপি, সানস্ক্রিন (চিকিৎসকের পরামর্শে) ব্যবহার করতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে পানি, হালকা স্ন্যাকস এবং গা মুছে নেওয়ার জন্য ওয়েট ওয়াইপস।

রোগের উপসর্গে দেরি না করে চিকিৎসা নিন
শিশুর জ্বর, বমি, পাতলা পায়খানা, অস্বাভাবিক ঘেমে যাওয়া বা দুর্বলতা দেখা দিলে অবহেলা করবেন না। গরমে হিট এক্সজস্টশন বা হিট স্ট্রোক হতে পারে, যা মারাত্মক হতে পারে। তাই দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শিশুরা নিজের অসুবিধা বোঝাতে পারে না সবসময়। তাই বড়দের দায়িত্ব তার শরীরের ভাষা বুঝে সতর্ক থাকা। একটু বাড়তি যত্নেই শিশুর গ্রীষ্মকালটা হয়ে উঠতে পারে আরামদায়ক ও নিরাপদ।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ