প্রখর রোদের নিচে একটানা চলাফেরা, অফিসে দীর্ঘ সময় কাটানো কিংবা যানজটে আটকে থাকলে গরমকালে ঘাম হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে এর সঙ্গে যে সমস্যাটি সবচেয়ে বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়, তা হলো দুর্গন্ধ। বিশেষ করে বগলের নিচে, পায়ের তালু কিংবা ঘাড়ের আশেপাশে এই দুর্গন্ধ বেশি হয়। যদিও ঘাম নিজে নির্গন্ধ, ত্বকে থাকা ব্যাকটেরিয়া ঘামের সঙ্গে মিশে গন্ধ সৃষ্টি করে।
বাজারে পাওয়া যায় নানা ধরনের ডিওডোরেন্ট ও পারফিউম, তবে এগুলো সবসময় ত্বকের জন্য উপযোগী নয়। দীর্ঘমেয়াদে কেমিক্যালযুক্ত এইসব পণ্যে ত্বকের এলার্জি, কালচে দাগ ও নানা সমস্যা হতে পারে। তাই ঘরের কাছে থাকা প্রাকৃতিক উপায়ই হতে পারে সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর সমাধান। আসুন জেনে নিই এমন কিছু উপায় যা ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করবে:
বেকিং সোডা ও কর্নফ্লাওয়ার মিশ্রণ
বেকিং সোডা ঘামের গন্ধ শোষণে অত্যন্ত কার্যকর। কর্নফ্লাওয়ার ত্বক শুকনো রাখতে সাহায্য করে। এক চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে এক চামচ কর্নফ্লাওয়ার মিশিয়ে বগলের নিচে ব্যবহার করুন। এটি প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্টের মতো কাজ করে। চাইলে এতে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল। এটি ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স করে এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমায়। তুলায় ভিনেগার নিয়ে বগলের নিচে মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন সকালে ব্যবহার করলে দুর্গন্ধ অনেকটাই কমে যাবে।

আপেল সিডার ভিনেগার প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, ছবি: ফ্রিপিক
লেবু ও গোলাপজল
লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ঘামের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। একটি লেবুর রসের সঙ্গে সামান্য গোলাপজল মিশিয়ে বগলের নিচে মাখান। ১০-১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণ প্রতিদিন ব্যবহার করলে ঘামের দুর্গন্ধ দূর হবে এবং ত্বকও উজ্জ্বল দেখাবে।

ঘামের দুর্গন্ধ আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়, ছবি: নালা কেয়ার
টি ট্রি অয়েল
টি ট্রি অয়েল একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক। এটি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং দীর্ঘস্থায়ী সতেজতা দেয়। কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল পানিতে মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে বগলের নিচে ব্যবহার করুন।
পুদিনা পাতার স্নান
পুদিনা পাতা ঠাণ্ডা রাখে এবং দেহের ঘামের দুর্গন্ধ কমায়। এক মুঠো পুদিনা পাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর থাকে সতেজ ও সুগন্ধময়।

টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করলে ঘামের দুর্গন্ধ অনেক কমে, ছবি: ফ্রিপিক
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পানি পান
প্রাকৃতিক উপায় শুধু বাহ্যিক নয়, অভ্যন্তরীণভাবেও পরিচ্ছন্নতা দরকার। অতিরিক্ত তেল, মসলা, পেঁয়াজ-রসুন জাতীয় খাবার ঘামের দুর্গন্ধ বাড়ায়। পরিবর্তে প্রচুর পানি, তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া উচিত। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে দেহের টক্সিন দূর হয়ে ঘামের দুর্গন্ধও অনেকটাই কমে যায়।
নিয়মিত পরিষ্কার পোশাক ব্যবহার
প্রাকৃতিক উপায় কাজে লাগাতে হলে পরিষ্কার পোশাক পরিধান করাও জরুরি। ঘামে ভেজা জামা-জুতা পরা যাবে না। বিশেষ করে তুলার তৈরি ঢিলেঢালা পোশাক শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে এবং ঘামের দুর্গন্ধও কমায়।
গরমের দিনে ঘামের দুর্গন্ধ যেমন বিব্রতকর, তেমনি আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। তবে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা আর প্রাকৃতিক উপায়ে যত্ন নিলে এই সমস্যা সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব। প্রাকৃতিক উপায়গুলো শুধু কার্যকর নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের জন্য নিরাপদও বটে।
তাই এবার থেকে বাজারচলতি পণ্যের চেয়ে নিজের ঘরের প্রাকৃতিক উপাদানেই খুঁজে নিন ঘামের দুর্গন্ধ দূর করার নির্ভরযোগ্য সমাধান।