রমজানে দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার ফলে অনেকের শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয় ইফতারে প্রোটিনজাতীয় ও ভাজাপোড়া খাবার বেশি খেলেও এই সমস্যা হতে পারে। শরীরে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে বাতের ব্যথা, গাঁটের ব্যথা, পায়ের আঙুল ফুলে যাওয়া এবং কিডনির সমস্যার মতো জটিলতা দেখা দেয়। আগে কেবল বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যাগুলো দেখা গেলেও ইদানীং অনেক তরুণদের মধ্যেও ইউরিক এসিডজনিত ব্যথার পরিমাণ বাড়ছে। সব মিলিয়ে তাই রোজায় কীভাবে ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।
ইউরিক এসিড বাড়ার কারণ
- ইফতারে অতিরিক্ত মাংস, ভাজাপোড়া ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
- ডালজাতীয় খাবার বেশি খেলেও ইউরিক এসিড বাড়ে
- উচ্চমাত্রার পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার
- পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন)
- অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণ
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও তরল খাবার না খাওয়া
- অনিয়মিত ব্যায়াম

তরুণদের মধ্যেও ইউরিক এসিড বেড়ে গাঁটের ব্যথা হওয়ার পরিমাণ বাড়ছে, ছবি: অ্যাকো
ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে করণীয়
- রোজায় সেহরি ও ইফতারের মাঝে পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত ইউরিক এসিড বের করে দিতে সাহায্য করে।
- বেশি মিষ্টি ও কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার যেমন মিষ্টান্ন, সফট ড্রিংকস, জুস ইত্যাদি এড়িয়ে চলা উচিত।
- কোন ধরনের প্রসেসড ফুড যেমন সসেজ, সালামি, বিস্কুট, কেক, চিপস ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।
- হালকা ব্যায়াম ও হাঁটাচলা করলে শরীরের বিপাকক্রিয়া ঠিক থাকে, যা ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ইফতারে বেশি মাংস, ভাজাপোড়া বা গুরুপাক খাবার খাওয়ার পরিবর্তে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খান। যদি ইউরিক এসিডের সমস্যা থাকে, তবে অতিরিক্ত মাংস ও মাছ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খেলে ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে সেখানেও বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। সব শাকসবজি কিন্তু খাওয়া যাবে না। কিছু সবজি আছে যা ইউরিকের এসিড বাড়াতে পারে। এছাড়া পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
যে সবজিগুলো খাওয়া এড়িয়ে চলবেন :
- পালং শাক
- পুঁই শাক
- মাশরুম
- বাঁধাকপি (অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়াই ভালো)
- বেগুন
- টমেটো (অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়াই ভালো)
- অড়হর, মটরশুঁটি, চানা ও অন্যান্য ডালজাতীয় সবজি

বিভিন্ন ধরনের ডাল খেলে রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়ে, ছবি: ইন্ডিয়া টিভি নিউজ
উচ্চ পিউরিনসমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার (যা এড়িয়ে চলবেন):
- লাল মাংস (গরু, খাসি, ভেড়া)
- অন্ত্রের মাংস (কলিজা, কিডনি, মগজ)
- সামুদ্রিক খাবার (চিংড়ি, ইলিশ, টুনা, কাঁকড়া, স্কুইড, সার্ডিন)
- অ্যালকোহল (বিশেষ করে বিয়ার ও ওয়াইন)
- প্রসেসড ফুড (ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার, কোল্ড ড্রিংকস)
কম পিউরিন বা নিরাপদ সবজি (যা খেতে পারেন):
- লাউ
- শসা
- করলা
- গাজর
- বাঁধাকপি (সীমিত পরিমাণে)
- ফুলকপি
- শালগম
- ঢেঁড়স
পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে সমস্যা নাও হতে পারে, তবে যাদের ইউরিক এসিড বেশি থাকে, তাদের এসব খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।