প্রতিদিন আমরা যা খাই, তার অনেক উপাদানই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তবে কিছু খাবারকে বিশেষভাবে “সাদা বিষ” বলা হয়, কারণ এগুলো ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষতি করে, অথচ আমরা তা বুঝতেও পারি না। মূলত চারটি সাধারণ খাদ্যকে সাদা বিষ বলা হয়: চিনি, লবণ, ময়দা ও সাদা চাল। এগুলো খাদ্য তালিকায় নিয়মিত থাকলেও, মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ করলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
চিনি
চিনি যেকোনো খাবারকেই বেশ সুস্বাদু করে তোলে। তবে সাদা চিনি অনেক শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে ডায়াবেটিস, ওবেসিটি (মোটা হওয়া), হৃদরোগ ও দাঁতের সমস্যা হতে পারে। প্রসেসড চিনির পরিবর্তে মধু বা গুড় ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে।

সাদা চিনি শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর, ছবি: এনডিটিভি
লবণ
লবণ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় হলেও অতিরিক্ত গ্রহণ করলে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও কিডনির সমস্যার কারণ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দৈনিক ৫ গ্রামের বেশি লবণ গ্রহণ না করার পরামর্শ দেয়। প্রক্রিয়াজাত খাবারে (ফাস্টফুড, স্ন্যাকস) লবণের পরিমাণ বেশি থাকে, যা অজান্তেই শরীরের ক্ষতিসাধন করে।

ময়দার পরিবর্তে লাল আটা বা মাল্টিগ্রেইন রুটি বা ব্রেড গ্রহণ করুন, ছবি: কানাডিয়ান ফুড ফোকাস
ময়দা
পরিশোধিত ময়দা (রিফাইনড ফ্লাওয়ার) থেকে তৈরি রুটি, বিস্কুট, নুডলস, পাস্তার মতো উপাদান খাদ্য তালিকায় বেশ প্রচলিত। তবে ময়দা থেকে ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল অপসারণ করা হয়, ফলে এটি শরীরের জন্য কম উপকারী। এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, স্থূলতা ও হজমজনিত সমস্যার কারণ হতে পারে।

বেশি সাদা চাল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে, ছবি: ইন্সপায়ারড টেস্ট
সাদা চাল
সাদা চাল থেকে ফাইবার ও পুষ্টিগুণের বড় অংশ হারিয়ে যায়, ফলে এটি শুধু কার্বোহাইড্রেটের উৎস হয়ে দাঁড়ায়। বেশি সাদা চাল খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাদামি চাল বা হোল গ্রেইন চাল বেশি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে।
সাদা বিষ থেকে মুক্তির উপায়
- চিনির পরিবর্তে মধু, খেজুর বা গুড় ব্যবহার করুন।
- অতিরিক্ত লবণ খাওয়া এড়িয়ে চলুন, প্রাকৃতিকভাবে স্বাদযুক্ত খাবার খান।
- ময়দার পরিবর্তে লাল আটা বা মাল্টিগ্রেইন খাবার গ্রহণ করুন।
- সাদা চাল কমিয়ে বাদামি বা লাল চাল বেছে নিন।
সাদা বিষ থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ নয়, কারণ এগুলো দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের অংশ। তবে স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নিলে ধীরে ধীরে সুস্থ জীবনযাত্রার দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিবিদরা।