Home লাইফস্টাইল নাছোড়বান্দা মেছতা দূর করার সহজ উপায়

নাছোড়বান্দা মেছতা দূর করার সহজ উপায়

ফাহমিদা শিকদার
১০৭ views

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে মেছতা অন্যতম। ইংলিশে একে Melasma (মেলাসমা) বলা হয়। মেছতা হলে গালে, কপাল, থুতনি, নাক, ঠোঁটের আশেপাশে, কখনো কখনো ঘাড়ে, বাহুর উপরিভাগে হালকা বা গাঢ় বাদামি, কালো অথবা লালচে ছোপ ছোপ দেখা যায়। সাধারণত নারীদের মধ্যে এই রোগ হওয়ার প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা মেছতায় বেশি আক্রান্ত হন।

তবে আমেরিকান কলেজ অব ডার্মাটোলজির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ শতাংশ পুরুষদের মধ্যেও এই রোগ দেখা দিতে পারে। এশিয়ার বাদামি ত্বকের অধিকারী পুরুষদেরও মেছতা বেশি হয়।

মেছতা হওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

  • সূর্যের ইউভি-এ ও ইউভি-বি রশ্মি মেলানিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা মেছতার অন্যতম প্রধান কারণ।
  • গর্ভাবস্থা, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ও হরমোন সংক্রান্ত ওষুধ গ্রহণের ফলে মেছতা দেখা দিতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এই রোগের জন্য দায়ী। 
  • পারিবারিক ইতিহাস থাকলে মেছতা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • ব্রণ বা অন্যান্য ত্বকের প্রদাহের কারণে মেলানিন উৎপাদন বেড়ে গিয়ে এই রোগ দেখা দিতে পারে।
  • এছাড়া ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানযুক্ত প্রসাধনী ত্বকের ক্ষতি করে মেছতা সৃষ্টি করতে পারে।
melasma 3

সূর্যের ইউভি-এ ও ইউভি-বি রশ্মি মেলানিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা মেছতার অন্যতম কারণ, ছবি: আয়ুর্বেদিক এক্সপার্ট

মূলত এপিডার্মাল, ডার্মাল ও মিশ্র মেছতা এই তিন ধরনের হয়ে থাকে:

এপিডার্মাল মেছতা: এটি ত্বকের উপরের স্তরে হয়। এটি হালকা বাদামি রঙের হয়।
ডার্মাল মেছতা: এটি ত্বকের গভীর স্তরে হয় এবং গাঢ় বাদামি বা কালো রঙের হয়।
মিশ্র মেছতা: এটি এপিডার্মাল ও ডার্মাল স্তরের সংমিশ্রণে গঠিত হয়। এর চিকিৎসা তুলনামূলক কঠিন। 

মেছতা দূর করার সবচেয়ে সহজ উপায়
মেছতার অনেক ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। যেমন- নির্দিষ্ট অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টযুক্ত টপিক্যাল ক্রিমের প্রয়োগ; কখনো কখনো ক্রিমের সঙ্গে অনেককে মুখে খাওয়ার ওষুধ সেবনের পরামর্শও দেওয়া হয়। এছাড়া প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বেশ কিছু আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। যেমন- কেমিক্যাল পিল, ডার্মাব্রাসন, মাইক্রোডার্মাব্রাসন, লেজার ট্রিটমেন্ট, মাইক্রোনিডলিং ইত্যাদি। তবে এসব চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। 

মেছতার দূর করার সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী উপায় হলো হাইড্রোকুইনন ক্রিম বা সিরাম ব্যবহার করা। হাইড্রোকুইনোন হলো এমন একধরনের একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস, যা ত্বকের মেলানিন উৎপাদন কমিয়ে ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করে। নাছোড়বান্দা মেছতা সারানোর ক্ষমতাও আছে এই হাইড্রোকুইনোনের। বেশি মাত্রায় এই উপাদান ব্যবহার করলে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টদের পরামর্শ নিতে হবে।

Melasma 2

নাছোড়বান্দা মেছতা সারানোর ক্ষমতা আছে হাইড্রোকুইনোনের, ছবি: ফ্রিপিক

তবে বাজারে এখন কম মাত্রার, বিশেষ করে ২ থেকে ৪ শতাংশ হাইড্রোকুইনোন সিরাম ও ক্রিম পাওয়া যাচ্ছে। এই ওভার দ্য কাউন্টার সিরাম বা ক্রিম চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াও ব্যবহার করা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
নিচে সর্তকতাগুলো বর্ণনা করা হলো-

  • নতুন ব্যবহারকারী হলে একদিন পরপর হাইড্রোকুইনোন সিরাম ব্যবহার করতে হবে। অভ্যস্ত হয়ে গেলে প্রতিদিন করা যাবে। 
  • শুধুমাত্র রাতে ব্যবহার করতে হবে। 
  • একটানা দুইমাস ব্যবহারের পর অবশ্যই একমাস বিরতি নিতে হবে। 
  • গর্ভাবস্থায় বা গর্ভ পরবর্তী সময় বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো হয় তখন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। 
  • হাইড্রোকুইনোন ব্যবহারকালীন সময়ে কোনভাবে সানস্ক্রিন, সানগ্লাস বা ছাতা ছাড়া রোদে যাওয়া যাবে না। 
  • চুলার পাশে দীর্ঘ সময় রান্না করলে, কিছুক্ষণ পরপর ঠাণ্ডা পানি ভেজানো কাপড় দিয়ে মুখ মুছতে হবে। 

এভাবে হাইড্রোকুইনোন ব্যবহার করলে কয়েকমাসের মধ্যে ত্বকে মেছতার পরিমাণ কমে আসবে। 

তথ্যসূত্রঃ হার্ভার্ড হেলথ, হেলথলাইন, সারা’স কোয়েস্ট। 

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ