গত ৩৪ বছরে দুই কোটির বেশি পরিবারের দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করেছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পিকেএসএফের প্রধান কাৰ্যালয়ে মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছর উপলক্ষে ‘টেকসই উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রতিষ্ঠানটি শীর্ষ কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেন পিকেএসএফের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থায়ন’ স্লোগানে আগামীকাল ১৩ নভেম্বর উদযাপন হতে যাচ্ছে পিকেএসএফ দিবস, ২০২৪। দেশের প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ পরিবারভুক্ত প্রায় সাত কোটি নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরী ও প্রবীণ ব্যক্তি পিকেএসএফের জীবিকায়ন, প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষা, আবাসন, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নানাবিধ আর্থিক ও অ-আর্থিক সেবার আওতায় আছেন। দুই শতাধিক সহযোগী সংস্থা মাঠ পর্যায়ে এসব সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল কাদের বলেন, এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতায় পিকেএসএফ ৩০টি প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। পিকেএসএফের আদলে বর্তমানে এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্য বিমোচন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে শুধু ঋণ কার্যক্রম দিয়ে শুরু করলেও গত তিন দশকে পিকেএসএফ একটি পরিবার ও মানবকেন্দ্রিক টেকসই উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, প্রতিটি মানুষের মান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা পিকেএসএফের মূল লক্ষ্য। ‘কাউকে বাদ দিয়ে নয়’— এটিই পিকেএসএফের উন্নয়ন দর্শন।
চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান জানান, দেশের প্রায় ২৫ লাখ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পিকেএসএফের আর্থিক ও কারিগরি প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন অ-আর্থিক সহায়তার আওতায় আছেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় গড়ে তোলা হয়েছে পিকেএসএফের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন ইউনিট। উপকূলে সুপেয় পানি সরবরাহ, বন্যা ও খরাপীড়িত উত্তরাঞ্চলে টেকসই প্রযুক্তি নিয়ে পিকেএসএফ ভুক্তভোগী মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। চরাঞ্চলে ভিটা উঁচুকরণসহ নানাবিধ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
পিকেএসএফের চেয়ারম্যান বলেন, ঋণ বা সহায়তার বিপরীতে সম্পদভিত্তি তৈরি না হলে দারিদ্র্য বিমোচন টেকসই হয় না। অত্যন্ত সীমিত সম্পদ নিয়ে নিজস্ব উদ্ভাবিত সমন্বিত পরিষেবার মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্যপীড়িত ও ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হাওর, চরাঞ্চল ও দুর্গম পাহাড়ি জনপদে পিকেএসএফ ক্রমান্বয়ে কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করে চলেছে। এ পথচলায় যুক্ত করা হয়েছে শিশু, কিশোর-কিশোরী, নারী, প্রবীণ এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের।
অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দিন জানান, সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে পিকেএসএফের সঙ্গে কাজ করছে। বর্তমানে ১২টি উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ ও অনুদান সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক, ইফাদ, জাইকা, যুক্তরাজ্য সরকারের এফসিডিও, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন।