Home সর্বশেষ পর্যটকদের জন্য বাজেটবান্ধব আদর্শ গন্তব্য শ্রীলঙ্কা

পর্যটকদের জন্য বাজেটবান্ধব আদর্শ গন্তব্য শ্রীলঙ্কা

মোহাম্মদ রবিউল্লাহ
১৪৪ views

দীর্ঘদিন ধরেই আরব উপসাগরীয় পর্যটকদের পছন্দের গন্তব্য দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। ঐতিহাসিক স্থাপনা থেকে নৈসর্গিক সৈকত, রিসোর্ট, সহজ প্রবেশসহ সবকিছুই বাজেট-বান্ধব হওয়ায় আদর্শ অবকাশ গন্তব্য হিসেবে স্থান পাচ্ছে শ্রীলঙ্কা।

প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, সাংস্কৃতিক আবহ সমৃদ্ধ শ্রীলঙ্কা ভ্রমণের জন্য আরও একটি কারণ রয়েছে— গত মাসে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমানসহ ৩১টি দেশের নাগরিকদের ভিসা ছাড়াই শ্রীলঙ্কায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে দেশটির সরকার।

ক্যান্ডি ও এলার পাশাপাশি রাজধানী কলম্বো পর্যটকদের কাছে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে দেশটির মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের কম বসতিপূর্ণ এলাকাগুলোও মনে রাখার মতো।

সাধারণত বিদেশি পর্যটকরা শ্রীলঙ্কা সফর শুরু করেন নুওয়ারা এলিয়া অঞ্চলের হ্যাটন দিয়ে। এটি ‘লিটল ইংল্যান্ড’ নামে পরিচিত। এই অঞ্চলটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এখানে টিউডর-শৈলীর স্থাপত্য ও ব্রিটিশদের নামে চা বাগানের নামকরণ করা হয়েছে।

 

ভিলা

শ্রীলঙ্কার হ্যাটনের সামারভিল বাংলো, ছবি: আরব নিউজ

 

শ্রীলঙ্কার ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে চা। সিলন চায়ের আবাসভূমি শ্রীলঙ্কার মধ্যাঞ্চল। এই চায়ের কদর রয়েছে বিশ্বজুড়ে। এ জন্য দেশটির পূর্বের নাম সিলন বা সিংহল ছিল বলে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন।

সিলন ডিলমাহ গ্রুপের একটি পরিবারিক ব্যবসা। চা বাছাই ও প্যাক করা হয় এখানেই। এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের সিলন চায়ের ইতিহাসের ভেতরে নিয়ে যায়, যা আসলে ১৮ শতকে কফির বাগান দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল।

কিন্তু কফি পাতার রোগ সেই বাগানগুলোকে ধ্বংস করে দেয়, যার ফলে শ্রীলঙ্কায় কম সময়ের মধ্যে কফি শিল্পের অবসান ঘটে। ১৮৬৭ সালে জেমস টইলর নামের একজন স্কটিশ নাগরিক ক্যান্ডিতে প্রথম চা রোপণ করেছিলেন। ১৯ শতকের শেষের দিকে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছিল শ্রীলঙ্কা।

অরেঞ্জ পেকোসহ চায়ের স্বাদ নেওয়ার অভিজ্ঞতার জন্য অতিথিদের প্রতিনিয়ত হাতছানি দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা। এই অঞ্চলের একটি বিশেষ চা মিশ্রণ রয়েছে, যা মনপ্রাণ জুড়িয়ে দেয়।

 

সিলন

সিলন টি ট্রেইলের চারপাশে চা বাগানের সোপান, ছবি: আরব নিউজ

 

শ্রীলঙ্কার আকর্ষণীয় একটি জায়গা হচ্ছে সামারভিল। এটি দেশটির পাঁচটি প্রাসাদ বাংলোর মধ্যে একটি। এটি একসময় ইংরেজদের বাড়ি ছিল, তবে এখন সিলন টি ট্রেলস হোটেল। এটি সিলন গ্রুপের অধীনের একটি রিসোর্ট। প্রায় ৪০০০ ফুটের এই রিসোর্টটি ২০০০ হেক্টরজুড়ে বিস্তৃত। এখানকার বাংলোগুলো বিলাসবহুল অবকাশ সন্ধানকারী ও ভ্রমণ পিপাসুদের মনের মতো।

অতিথিরা বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে পাহাড়ের চূড়ার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। তাছাড়া বাংলোজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাউঞ্জ স্পেসগুলোতে বিশ্রাম নিতে পারেন। একই সাথে পাঁচ-কোর্সের ডিনারেও অংশ নিতে পারেন ভোজনরসিকরা। ইয়াটাওয়াত্তে চা, ইনফিউজড রোস্টেড চিকেন ও আর্ল গ্রে ফন্ড্যান্টের মতো পছন্দসই খাবারের আয়োজন রয়েছে রসনা ঘরে।

৪ থেকে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ চা ট্রেইলগুলো বিভিন্ন বাংলোকে সংযুক্ত করেছে। সংযুক্ত উপত্যকার মধ্য দিয়ে হাইকিংয়ের মনোরম ব্যবস্থা রয়েছে। যারা অ্যাডভেঞ্চার খুঁজছেন তাদের জন্য ২২ ধাপের ৩০০ কিলোমিটারের নতুন একটি পেকো ট্রেইল উদ্বোধন করা হয়েছে।

এই পেকো ট্রেইল পর্যটকদের জীববৈচিত্র্য অন্বেষণে সহায়তা করে। পায়ে হেঁটে বা রেলপথে এই দুইভাবে ট্রেইলটি উপভোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে।

ভ্রমণকারীরা দেশটির মধ্যাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার সময় পাহাড়ের চূড়া, আঁকাবাঁকা পথ, পাম গাছে আবৃত শীতল আবহাওয়া, পাহাড়ি যান তুক-তুকের দ্রুত চলা ও গ্রীষ্মমন্ডলীয় আবহাওয়ার পথ মনকে ফুরফুরে করে দেয়।

 

সুরক্ষিত বাড়ি

সুরক্ষিত ওয়াইল্ড কোস্ট টেন্টেড লজ, ছবি: আরব নিউজ

 

হাম্বানটোটা জেলায় ইয়ালা নামে একটি উদ্যান রয়েছে। এটি জেলার সবচেয়ে বড় ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতীয় উদ্যান। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় চিতা বাঘের সর্বোচ্চ বসবাস রয়েছে তার মধ্যে এটি উদ্যান একটি। ভোরবেলা বা বিকেলের গেম ড্রাইভে চিতাবাঘ, স্লথ ভাল্লুক, হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর বিচরণ দেখার সুযোগ রয়েছে।

ওয়াইল্ড কোস্ট টেন্টেড লজ নামে পর্যটকদের জন্য একটি সুরক্ষিত এলাকা রয়েছে। সাফারি পার্কের ভেতরে অবস্থিত এই লজটি সিলনের মালিকানাধীন একটি লজ। বিশেষভাবে নির্মিত বিলাসবহুল এই জায়গাটি বেড়াবিহীন।

বন্যপ্রাণীরা প্রায়ই সাফারি পার্ক থেকে এই লজের ভেতরের প্রাঙ্গনে ঘুরে বেড়ায়। এই দৃশ্য পর্যটকদের কখনও আনন্দদায়ক, আবার কখনও কখনও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা দেয়।

এই লজ নিজেই স্থাপত্যের আনন্দ দেয়। টেকসই নকশা ও বাঁশসহ জৈব উপকরণে নির্মিত এই লজ থেকে দৃষ্টি ফেরানো দায়। এতে ২৮টি ‘কোকুন’ বা শুঁটি জঙ্গল রয়েছে। অভ্যন্তরীণ অংশে কুপার হার্ডওয়্যার, একটি লেপার্ড-ক্ল বাথটাব ও ভিনটেজ চামড়ার আসবাবপত্রের মতো সৌখিন পণ্য রয়েছে।

এখানেই জঙ্গল ও ভারত মহাসাগর একে অপরের সাথে মিলিত হয়েছে। দুর্গম উপকূল বরাবর সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। তখন শ্রীলঙ্কার অবারিত প্রশান্তি দর্শনার্থী ও পর্যটকদের আন্দোলিত করে।

আরব নিউজ থেকে অনূদিত।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ