Home সর্বশেষ মাতামুহুরীতে দেখা মিলল বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ভালুকের

মাতামুহুরীতে দেখা মিলল বিশ্বের ক্ষুদ্রতম ভালুকের

তাসনিম তাবাসসুম
৬৫ views

পাহাড় ঘেরা নিভৃতে থাকা বনপথে বসানো একটি ক্যামেরা। তার সামনে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট আকৃতির ভালুক, মালয়ান সান বিয়ার (Helarctos malayanus) মাটিতে বসে নিঃসংকোচে প্রাকৃতিক কাজ সারছে।

বাংলাদেশের মাতামুহুরী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ক্যামেরা ট্র্যাপে ধরা পড়া এ দৃশ্য হয়তো কৌতূহল উদ্রেককারী, অনেকের কাছে হাস্যকরও বটে। কিন্তু, এর প্রতীকী মূল্য অনেক গভীর। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে বিপন্নপ্রায় প্রাণীটি এখনো বাংলাদেশের একটি মানব-আধিপত্যপূর্ণ ভূখণ্ডে বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ তাদের বসবাসের কথা মূলত গভীর অরণ্যে।

পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ভালুক প্রজাতি মালয়ান সান বিয়ার। ওজন গড়ে ২৫–৬৫ কেজি, উচ্চতা মাত্র ১২০–১৫০ সেন্টিমিটার। এই নিশাচর প্রাণী ফল, মধু, পোকামাকড় এবং গাছের বাকল খেয়ে বাঁচে। তাদের গলার অংশে দেখা যায় চাঁদের মতো অর্ধচন্দ্রাকৃতির একটি হলুদাভ দাগ। এই হলুদ দাগের কারণে এদের নাম ‘সান বিয়ার’।

আইইউসিএন রেড লিস্ট অনুযায়ী, এই প্রজাতিটি ‘ভালনারেবেল’ তালিকাভুক্ত, অর্থাৎ হুমকির মুখে। বন ধ্বংস, অবৈধ শিকার, এবং পাচার এদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলেছে।

এই ভালুকটির অবস্থান ছিল মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্টের একটি ‘ফ্র্যাগমেন্টেড’ বা খণ্ডিত অংশে, যেটি বন থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন। চারপাশে কৃষিজমি, গ্রাম এবং রাস্তাসহ এক মানব-প্রভাবিত ভূখণ্ড।

এমন এক প্রাকৃতিক পরিবেশে, যেখানে প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়ে বন্যপ্রাণ, সেখানে একটি মালয়ান সান বিয়ারের টিকে থাকা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সার্থকতা।

এই ছবির পেছনে ছিল অনেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। স্থানীয় ম্রো ও মারমা জনগোষ্ঠীর সদস্য ও অনেক তথ্যদাতাদের নিরলস সহযোগিতায় এই ছবি ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স (সিসিএ) দলের সদস্যরা প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে গেছেন প্রতিটি ধাপে।

বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের অগ্রণী প্রতিষ্ঠান সিসিএ পার্বত্য চট্টগ্রামের বন ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে কাজ করছে। এই অঞ্চলটি ইন্দো-বার্মা বায়োডাইভার্সিটি হটস্পট-এর অংশ — যেখানে জীবনের বৈচিত্র্য অসাধারণ, কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে তা আজ ধ্বংসের মুখে।

সিসিএ শুধু বন্যপ্রাণ নয়, স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জ্ঞান ও সংস্কৃতিকে সমান গুরুত্ব দেয়। তারা ‘সিটিজেন সায়েন্টিস্ট’ তৈরির মাধ্যমে জনগণকেই গবেষণা ও সংরক্ষণের অংশীদার করছে।

তথ্যসূত্র: সৌরভ চাকমার ফেসবুক থেকে নেওয়া

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ