Home সর্বশেষ আলিঙ্গনে কী কমে রক্তচাপ?

আলিঙ্গনে কী কমে রক্তচাপ?

তাসনিম তাবাসসুম
৪৮ views

প্রেমে পড়লে তার প্রভাব শুধু আমাদের মনের উপর পড়ে, এই ধারণাটি সত্যি নয়।  ভালোবাসা আমাদের শরীরের উপরও অপ্রত্যাশিত প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকে মনে করে প্রেম কেবল মনের আবেগ-অনুভূতির ব্যাপার, কিন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। 

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রেমে পড়লে আমাদের রক্তচাপের মাত্রায় পরিবর্তন আসতে পারে। যখন আমরা প্রেমে পড়ি, তখন আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার এবং হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। 

ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন ভার্জিনিয়ার গবেষকদের মতে, প্রেমে পড়ার এক সেকেন্ডের পাঁচ ভাগের এক ভাগ সময়ের মধ্যেই মস্তিষ্কের ১২টি অঞ্চলে কার্যকলাপ শুরু হয়ে যায়। এই সময় ডোপামিন নামক একটি রাসায়নিকের কার্যকলাপ বেড়ে যায়। 

ডোপামিন আমাদের প্রেরণা এবং আনন্দের অনুভূতি দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটিকে ‘ভালো লাগা’ নিউরোট্রান্সমিটার হিসাবে উল্লেখ করা হয়। চলুন জেনে নেই প্রেমে পড়লে আমাদের স্বাস্থ্যে আর কী ধরণের পরিবর্তন আসে। 

প্রেম ও রক্তচাপের সম্পর্ক
প্রেমে পড়ার সময় আমাদের মস্তিষ্কে ডোপামিন, অক্সিটোসিন এবং নরএপিনেফ্রিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসৃত হয়, যা আনন্দ, উত্তেজনা এবং নিরাপত্তার অনুভূতি সৃষ্টি করে। এই হরমোনগুলি স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে দেয়, ফলে রক্তচাপ হ্রাস পায়। 

অক্সিটোসিন, যাকে ‘কাডল হরমোন’ বা ‘আলিঙ্গন হরমোন’ বলা হয়, তার নিঃসরণ বাড়ে যা উদ্বেগের অনুভূতি কমাতে সহায়ক। ২০০৫ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ মিনিটের উষ্ণ আলিঙ্গন রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারী নারীদের মধ্যে যারা তাদের সঙ্গীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, তাদের রক্তচাপের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম ছিল।

সম্পর্কের সন্তুষ্টি ও হৃদয়স্বাস্থ্য
সম্পর্কের গুণগত মানও হৃদয়স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা তাদের সম্পর্ক নিয়ে সন্তুষ্ট, তাদের রক্তচাপের মাত্রা কম এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। অন্যদিকে, অশান্ত সম্পর্ক স্ট্রেস বাড়িয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে।

প্রেম ও ইমিউন সিস্টেম
প্রেমে পড়লে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতে পারে। ‘সাইকোনিউরোডোক্রিনোলজি’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে মহিলারা দুই বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন, তাদের শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রয়োজনীয় যৌগগুলির ঘনত্ব বেশি ছিল।

প্রেম ইমিউন সিস্টেমকেও শক্তিশালী করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রেমে পড়া নারীদের শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধী প্রোটিন ইন্টারফেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

প্রেম ও দীর্ঘায়ু
প্রেমময় সম্পর্ক দীর্ঘায়ুতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত ব্যক্তিরা অবিবাহিতদের তুলনায় হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম এবং তাদের আয়ু দীর্ঘ হয়।

এছাড়াও, ভালোবাসার স্পর্শ এবং সান্নিধ্য আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যারা তাদের সঙ্গীর কাছ থেকে নিয়মিত আলিঙ্গন পান, তাদের মধ্যে বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগের প্রবণতা কম দেখা যায়। 

প্রেমে পড়া আমাদের হৃদয়ের জন্য শুধু আবেগগত দিক থেকেই ভালো নয়, এটি আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা সবসময়ই জরুরি। 

সূত্র: হেলথ ডাইজেস্ট

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ