Home সর্বশেষ পশু পাখিরা কি অন্য প্রজাতির ‘ভাষা’ শিখতে পারে?

পশু পাখিরা কি অন্য প্রজাতির ‘ভাষা’ শিখতে পারে?

তাসনিম তাবাসসুম
৬৫ views

প্রকৃতিক জগতে প্রাণীদের মধ্যে যোগাযোগ শুধু শব্দ দিয়ে নয়, আচরণ, গন্ধ, ভঙ্গিমা এবং শরীরী ভাষার মাধ্যমেও ঘটে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এক প্রজাতির সংকেত কি অন্য প্রজাতি বুঝতে পারে? আর যদি পারে, তবে সেটা কিভাবে সম্ভব হয়?

প্রাণীরা কি মানুষের মতো ভাষা না হলেও, অন্য প্রজাতির ‘ভাষা’ বা যোগাযোগের সংকেত বুঝতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে গবেষকরা এমন কিছু উদাহরণ পেয়েছেন যা আমাদের অবাক করে দেয়। প্রাণীদের মধ্যে যে শুধু নিজেদের প্রজাতির মধ্যে নয়, বরং অন্য প্রজাতির সঙ্গে বোঝাপড়াও সম্ভব, সেটাই এখন বিজ্ঞানীদের গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে।

বানরের সতর্ক সংকেত ও পাখির প্রতিক্রিয়া
আফ্রিকার বনের মধ্যে বসবাসকারী পুট্টি নোজড বানর (putty-nosed monkey) যখন শিকারি প্রাণীর উপস্থিতি টের পায় তখন বিশেষ সংকেত দেয় । বানরের এই সতর্ক সংকেত তাদের নিজের দলের সদস্য ছাড়াও আশেপাশে থাকা অন্য প্রজাতির প্রাণীরাও বুঝে নিতে সক্ষম। একাধিক পাখি প্রজাতি যেমন ড্রঙ্গো পাখি এই সংকেত শুনেই বিপদ বুঝে সাবধান হয়ে যায় বা স্থান পরিবর্তন করে। 

2 9

ড্রঙ্গো পাখি ও পুট্টি নোজড বানর, ছবি: কোলাজমেকার

মজার ব্যাপার হলো, পাখিরা কখনও কখনও নিজেরাও বানরের মতো শব্দ করে অন্য প্রাণীদের সতর্ক করে, যদিও এতে অনেক সময় মিথ্যা সতর্কবার্তাও থাকে, যা তারা খাবার চুরি করার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে।

হাতি মানুষের ভাষা পার্থক্য বোঝে
আফ্রিকান হাতিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় দেখা গেছে, তারা মানুষের ভাষার পার্থক্য বুঝতে পারে। কেনিয়ার মাসাই ও কাম্বা জনগোষ্ঠীর ভাষার মধ্যে তারা পার্থক্য করতে পারে এবং তাদের প্রতিক্রিয়াও আলাদা হয়। মাসাই পুরুষরা সাধারণত হাতিদের আক্রমণ করে থাকে, আর কাম্বা সম্প্রদায় তুলনামূলকভাবে কম হুমকির।

গবেষকরা দেখতে পান, মাসাই ভাষা শুনলে হাতিরা বেশি উদ্বিগ্ন বা প্রতিরক্ষামূলক আচরণ করে। এতে বুঝা যায়, হাতিরা শুধু শব্দ নয়, শব্দের উৎস এবং প্রেক্ষাপট বুঝতে সক্ষম। এটা এক ধরনের ‘প্রাসঙ্গিক বোঝাপড়া’, যা প্রাণীদের মস্তিষ্কে দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে।

3 4

মাসাই ভাষা শুনলে হাতিরা বেশি উদ্বিগ্ন বা প্রতিরক্ষামূলক আচরণ করে, ছবি: দ্য এলিফ্যান্ট সোসাইটি

পাখিদের মধ্যে আন্তঃপ্রজাতিগত যোগাযোগ
উত্তর আমেরিকার জঙ্গলগুলোতে অনেক ধরনের পাখি একত্রে বসবাস করে, যেমন– চিকাডি, নাটহ্যাচ, টাইটমাউস প্রভৃতি। গবেষকরা লক্ষ্য করেছেন, একটি প্রজাতির পাখি যখন শিকারির সতর্ক সংকেত দেয়, তখন অন্যান্য প্রজাতির পাখিরাও সেই সংকেত বুঝে প্রতিক্রিয়া দেখায়। তারা আশপাশের গাছের আড়ালে সরে যায় বা শান্ত হয়ে যায়, যাতে শিকারির নজর না পড়ে।

কীভাবে এই বোঝাপড়া গড়ে ওঠে?
পশু পাখিদের মাঝে এই ধরনের বোঝাপড়াকে বলা হয় ‘ক্রস-স্পিসিজ সেমান্টিক বোঝাপড়া’। যদিও এটিকে ঠিক ভাষা শেখা বলা যায় না, তবুও এটি একটি উন্নত পর্যায়ের আচরণগত বুদ্ধিমত্তার নিদর্শন।

গবেষকদের মতে, প্রাণীরা ঠিক মানুষের মতো করে ভাষা শেখে না। তারা অভিজ্ঞতা, অনুশীলন এবং পরিবেশের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংকেত ও প্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক তৈরি করে। এটি অনেকটা শর্তাধীন শিক্ষার মতো যেখানে বারবার নির্দিষ্ট ধরণের শব্দ বা সংকেতের পর একটি ঘটনা ঘটতে দেখলে প্রাণীটি সেই সংকেতের মানে বুঝে নিতে পারে।

4

একটি প্রজাতির পাখি যখন শিকারির সতর্ক সংকেত দেয়, তখন অন্যান্য প্রজাতির পাখিরাও সেই সংকেত বুঝে প্রতিক্রিয়া দেখায়, ছবি: ওয়াইল্ড লাইফ এক্সপ্লেইনেড

এটি শুধুমাত্র শ্রবণ ক্ষমতা নয় বরং বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাশক্তির ইঙ্গিত দেয়। প্রাণীরা যদি বুঝতে পারে কোন শব্দ বিপদের সংকেত দেয় এবং সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানায়, তবে তা নিছক রিফ্লেক্স নয়, বরং সচেতন সিদ্ধান্ত।

প্রকৃতির প্রাণীরা হয়তো মানুষের মতো জটিল ভাষায় কথা বলে না, কিন্তু তারা নিজেদের মতো করে একটি নিখুঁত যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করেছে। বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মাঝে সংকেত, পরিবেশ ও অভিজ্ঞতা মিলে এক অপূর্ব বোঝাপড়ার জগৎ সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র: লাইভ সাইন্স

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ