সেলুনগুলো এই ইট পাথরের নগরীতে মানায় না। সেলুন এক শৈল্পিক জায়গা। শিল্প থাকবে সজীবতায়। প্রকৃতির নিকটে। মরা নয় ভরা নদীর কিনারায় হবে তার ঠিকানা।
কাঁঠাল গাছের গা ঘেঁষে তৈরি বাঁশের মাচাং এ বসে- দেশের অবনতি নিয়ে জৈষ্ঠ বক্তারা চুন মাখা লাল ঠোঁটে বিশেষ চিন্তাতত্ত্ব নির্গমন করবেন।
গঞ্জের একমাত্র পরোটার দোকানে যেভাবে খামির মাখানো হয় সেভাবেই শিল্পী দলাই মলাই করে দিবে শরীরের সর্ব অঞ্চল। চুলের প্রতিটি পাদদেশে অনুভূত হতে থাকবে শিল্পীর জাদুকরি।
টুক করে ঘাঁড়ের মোটকা ফাটিয়ে আঙ্গুল চালান করে দিবে শিরদাঁড় ধরে নিম্নভূমির খুব কাছাকাছি। আহারে!! সুখ।
ফুরফুর করে কানের পাশ দিয়ে বয়ে যাবে হীমশিতল বাতাস। সুখের স্রোতে ভরা নদীর কলকল ধ্বনি জলতরঙ্গ বোধ হবে। শরীর বলবে- শিল্পী এ কি সুখসাগরে আমায় তুমি ভাসিয়ে দিলে। তোমার দু’খানা হাততো খাঁটি সোনা দিয়ে বান্ধায়ে দিবো। আলবৎ দিবো।
সেলুনগুলো আসলে সেলুন না, শিল্পীর আখড়া। এই শিল্পীদের জন্য জাতীয় পুরষ্কারের ক্যাটাগরিতে বিশেষ ব্যবস্থা থাকা সময়ের দাবি। কি সুন্দর হবে দেখতে, সোনার মেডেল গলায় ঝুলিয়ে সেলুন শিল্পী ও তার ঝকঝকে হাসিমুখ।
গণ মিছিল হবে। রাজপথ স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠবে। তিনদিন দিবা রাত্রি রাষ্ট্রীয় খরচে ধারাবাহিকভাবে গণ উদরপূতির ব্যবস্থা হবে। ১লা শ্রাবণ ঘোষিত হবে রাষ্ট্রীয় ছুটি। সেদিন সারাদেশে একযোগে পালিত হবে সেলুন শিল্পী দিবস। সরকারি চাকুরি প্রত্যাশিদের জন্য হবে আরও কিছু নৈর্বত্তিক প্রশ্নের খোরাক। টানা মুখস্থ করে নিবে সব সেলুন তত্ত্ব।
কবির আবেগের অত্যাচারে রচিত হবে কবিতা। কণ্ঠশিল্পীর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে ধ্বনিত হবে সেলুন শিল্পীর শিল্পকর্ম। বিটিভিতে নিয়ম করে সেই উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালে তালে রিনঝিনঝিন নুপুর বাজিয়ে নৃত্য করবে নৃত্যশিল্পী। গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমায় প্রধান চরিত্রে সদর্পে দাপিয়ে বেড়াবে সেলুন শিল্পী।
চারিদিকে সেলুন শিল্পীর শিল্পকর্মের জো জো হয়ে যাবে। একদল হুমড়ি খেয়ে লেগে পড়বে এই শিল্পকর্ম সিদ্ধহস্ত করতে। কি চমৎকার হবেনা দেখতে, কি অদ্ভূত সুন্দর।