চলতি মাসের শুরুতে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর বনে একটি সারস পাখির দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন পশু গবেষক জেফারসন পেরেস। ভিডিওতে দেখা যায়, ২০০ মিলি ওজনের ফলের জুসের একটি প্লাস্টিক কাপ তার লম্বা গলায় আটকে আছে। কমলা রঙের ঠোঁট দিয়ে বারবার চেষ্টা করেও সেই প্লাস্টিকের কাপটিকে শরীর থেকে আলাদা করতে ব্যর্থ হয় সারসটি।
লম্বা গলায় প্লাস্টিকের কাপ আটকে থাকায় খেতে ও উড়তে কষ্ট হচ্ছিল সারসটির। প্লাস্টিকের কাপের কারণে একটি মাছ খাওয়ার পর পাখিটিকে বমি করতে দেখা গেছে। একই কারণে খাদ্যগ্রহণে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সারসটি দিনদিন ওজন হারিয়ে মৃত্যুর মুখে পড়েছিল।সামাজিক মাধ্যমে পেরেসের এমন পোস্ট ভাইরাল হয়। পরবর্তীতে ব্রাজিলের প্রথম সারির পত্রপত্রিকা ও অনলাইন ব্রডকাস্ট প্লাটফর্মে প্লাস্টিকের নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে সংবাদ প্রচার করা হয়।
বন্যপাখির এমন বিপর্যস্ত পরিণতি রোধের উদ্যোগ নেয় রিও ডি জেনিরোর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মীরা। এরপর সারসটিকে চিহ্নিত করে বন্দি করা হয়। প্লাস্টিক মুক্ত করলে পাখিটি মুক্ত আকাশে উড়তে সক্ষম হয়।
দুই সপ্তাহ পর জেফারসন পেরেস আরেকটি পোস্ট দিয়ে বলেন, দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি থেকে মুক্ত হয়েছে পাখিটি। এ জন্য কোনো ধরনের কাটাঁছেঁড়ার প্রয়োজন হয়নি। খাওয়া-দাওয়া না করতে পারায় খুবই ক্ষুধার্ত ছিল এটি।
সারস পাখিটি অবমুক্ত করার পর ব্রাজিলের পরিবেশবিদ ইসাবেলা ডি লোয়েস বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আমি পাখিটিকে এমন অবস্থার মধ্যে দেখছি। প্লাস্টিকের প্রভাব এখন সরাসরি পাখির ওপরও পড়ছে। এই সারসটির অবস্থা দেখেই তা অনুমান করা যাচ্ছে।

সারস পাখিটিকে অবমুক্ত করছেন বন্য পশু-পাখি চিকিৎসকদের একটি দল, ছবি: জিও নিউজ
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখিদের গুরুত্ব অপরিসীম। ফলের জুসের প্লাস্টিকের কাপটি সারসের শরীর থেকে সরানোর পরে তাকে আটকে রাখার প্রয়োজন হয়নি। যদিও দুই সপ্তাহ বন্দিদশা থেকে যখন খাঁচামুক্ত করা হয় তখন এটি আকাশে উড়বে কিনা তা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়ে যায়।
বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে ‘কোকাই হেরন’ বলা হয়। এটি লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রজাতির সারস। এই সারসগুলোর বৈশিষ্ট্য ‘নীল সারস’ প্রজাতির মতোই।
লাতিন আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে পানামা পর্যন্ত এসব পাখির আনাগোনা বেশি লক্ষ্য করা যায়। এই প্রজাতির পাখির ওজন ৩ কেজি বা তার বেশি হয়ে থাকে। এদের পাখার সাইজ ১৬ ইঞ্চির মতো হয়।
তথ্যসূত্র: জিও নিউজ