Home সর্বশেষ ইতালিতে বাড়ছে বেকারত্ব, দেশ ছাড়ছে উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা

ইতালিতে বাড়ছে বেকারত্ব, দেশ ছাড়ছে উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
৪৪ views

ইতালিতে দিন দিন বেকারত্ব বাড়ছে। এ কারণে দেশ ছাড়ছেন হাজার হাজার উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণী। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছেন তারা। এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞেরা। খবর এএফপির 

সাম্প্রতিক সময়ে ‘ব্রেন ড্রেন’ বা ‘মস্তিষ্ক নির্গমন’ সমস্যায় ভুগছে ইতালি। রোম, ভেনিস, মিলান ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি দিচ্ছেন সেখানকার মেধাবী ছেলেমেয়েরা। মূলত আর্থিক কারণই এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ বছরে দেশত্যাগ করা ইতালীয়দের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। তাদের এক তৃতীয়াংশের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। শুধু তাই নয়, ২৭-২৮ বছর বয়সি ইতালিয় তরণ-তরুণীরা মনে করেন, দেশত্যাগ ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প নেই।

দক্ষিণ ইতালির ক্যালাব্রিয়া থেকে রোমে উচ্চশিক্ষার জন্য আসা ২৪ বছরের তরুণ বিলি ফুস্টোর কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে শান্ত জীবন পাওয়া বড়ই দুর্লভ হয়ে পড়ছে। সামান্য কিছু কেনাকাটার জন্য পকেটে ১৫ ইউরো রয়েছে কি না, সেটা নিয়েও চিন্তা করতে হচ্ছে।

এ বছরের অক্টোবরে ‘ব্রেন ড্রেন’ সংক্রান্ত একটি সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ করে ইতালির ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড লেবার’ (সিএনইএল)। সেখানে উঠে আসে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট রেনাটো ব্রুনেটা জানান, এই পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক নয়। ব্রেন ড্রেনের রক্তক্ষরণ কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না। সরকার নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুক, কেন এমনটা হচ্ছে। নইলে এর প্রতিকার সম্ভব নয়।

 

italy2

ছবি: এএফপি

 

দক্ষিণ ইতালির দারিদ্র চোখে পড়ার মতো। সেখানকার অনেকেই ভাগ্যান্বেষণে পাড়ি দেন দেশের উত্তর অংশে। গত দু’দশকে দক্ষিণের স্নাতক উত্তীর্ণদের নিজের এলাকা ছেড়ে উত্তরে চলে যাওয়ার প্রবণতা ১৮ থেকে বেড়ে ৫৮ শতাংশে পৌঁছেছে।

তবে আর্থিক দিক থেকে উত্তর ইতালির অবস্থা যে দুর্দান্ত, এমনটাও নয়। সেখানে শিল্প শহরের সংখ্যা বেশি। কিন্তু ইউরোপের অন্যান্য এলাকার তুলনায় উত্তর ইতালিতে মজুরি বেশ কম। ফলে বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়ছেন প্রতিভাবান ইতালীয় তরুণ-তরুণীরা।

৩৮টি দেশের সংগঠন ‘অর্গানাইজ়েশন অফ ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ বা ওইসিডির অন্যতম সদস্য হল ইতালি। ২০১৯ তুলনায় সেখানে প্রকৃত মজুরি কমেছে। ওইসিডিভুক্ত অন্য কোনও রাষ্ট্রে এই প্রবণতা দেখা যায়নি।

ইউরোপের গড় বেকারত্বের নিরিখে একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছে ইতালির নাম। এ বছরের অক্টোবরে ভূমধ্যসাগরের কোলের দেশটির বেকারত্বের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭.৭ শতাংশ। এই সংখ্যা ইউরোপীয় ইউনিয়নে ১৫.২ শতাংশ।

সমীক্ষকেরা জানিয়েছেন, দিন দিন ইতালির কর্মক্ষেত্র মেধাহীন হয়ে পড়ছে। জর্জিয়া মেলোনির সরকার কোনও জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঠিক করেননি। উচ্চশিক্ষার ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সেখানে প্রতি বছর বেতনবৃদ্ধির ব্যবস্থাও নেই।

এই ইস্যুতে এএফপির কাছে মুখ খুলেছেন ২৭ বছরের ইতালীয় তরুণী এলেনা পিকার্ডি। ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়েছিলেন তিনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর রোমে ফিরে আসেন পিকার্ডি। তিনি বলেছেন, এখানকার সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া প্রস্তাবের অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনও মজুরির কথা লেখা থাকে না। অথবা খুব কম মজুরিতে লোক নিয়োগ করতে চায় তারা।

বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মজুরি ভাল। সেখানে প্রতি মাসে কয়েকশো ডলার রোজগারের সুযোগ রয়েছে। এলেনা পিকার্ডির কথায়, আমাদের মতো তরুণ-তরুণীদের মধ্যে দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন রয়েছে। কিন্তু সেটা আমার যাবতীয় উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সম্ভাবনাকে শেষ করে নয়। ইউরোপের অন্য দেশে গেলে সম্মান ও অর্থ দু’দিক থেকে লাভের সুযোগ থাকবে।

নর্থ ইস্ট ফাউন্ডেশনের সমীক্ষকেরা জানিয়েছেন, ‘ব্রেন ড্রেন’-এর জেরে গত ১২ বছরে বিপুল অর্থ হারিয়েছে ইতালি। ২০১১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এর জন্য আনুমানিক ১৩ হাজার ৪০০ কোটি ইউরোর মূল্য দিয়েছে প্রাচীন ইউরোপীয় সভ্যতার দেশ।

দেশত্যাগীদের মধ্যে যারা ফিরে এসেছেন, তাদের সঙ্গেও কথা বলেছে সমীক্ষকদের দল। এই ইতালীয়দের যুক্তি, পরিবারের টানেই  ফিরতে হয়েছে তাদের। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার প্রয়োজনের তাগিদেও বাড়িতে থাকার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।

সমীক্ষক সংস্থা ‘ইউরোস্ট্যাট’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে দেশত্যাগী ইতালীয়দের গড় বয়স ছিল ৩০, স্পেন ও গ্রিসের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ানের মধ্যে যা ছিল সর্বাধিক। তবে দীর্ঘ দিন ধরেই বয়স্কদের তুলনায় তরুণ-তরুণীরা বেশি করে ইতালি ছাড়ছেন।

বর্তমানে ইতালিতে কর্মরত ও বেকার নাগরিকদের অনুপাত ৩:২। কিন্তু ২০৫০ সালের মধ্যে এই অনুপাত ১:১ গিয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ, দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেকই (৫০ শতাংশ) বেকারত্বের জ্বালায় ভুগবেন।

এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে প্রবাসী ইতালীয়দের দেশে ফেরানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মেলোনি। তাদের জন্য আয়করে বড় অঙ্কের ছাড়ের কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। সন্তানকে নিয়ে দেশে ফিরলে প্রবাসীদের আরও কিছু আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেবে রোম। এর পাশাপাশি, গত কয়েক বছর ধরে আরও একটি সমস্যায় ভুগছে ইতালি। সেটি হল জন্মহার অস্বাভাবিক কমে যাওয়া। ফলে ধীরে ধীরে বয়স্ক নাগরিকদের দেশে পরিণত হচ্ছে ইতালি। আর তাই আর্থিক লোভ দেখিয়ে নাগরিকদের সন্তান উৎপাদনের জন্য উৎসাহিত করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মেলোনি।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ