Home সর্বশেষ আনক্লেইমড ব্যাগেজ : যেখানে হারানো জিনিস পায় নতুন জীবন

আনক্লেইমড ব্যাগেজ : যেখানে হারানো জিনিস পায় নতুন জীবন

তাওহীদ মাহমুদ
১৫৯ views

বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ শিল্প দ্রুত প্রসারিত হলেও, হারানো লাগেজের সমস্যা আজও অনেক ভ্রমণকারীকে ভোগায়। আর প্রতিটি হারানো লাগেজের সঙ্গে রয়েছে এক একটি গল্প, এক একটি অভিজ্ঞতা। তবে সেই হারানো লাগেজের কিছু সামগ্রী এক অদ্ভুত সংগ্রহশালায় পাওয়া যায়। যে সংগ্রহশালাটি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের আলাবামা রাজ্যের ছোট শহর স্কটসবোরো অবস্থিত। ‘আনক্লেইমড ব্যাগেজ’ নামের এই দোকানটি শুধুমাত্র হারানো লাগেজের জিনিসপত্র বিক্রির জন্য পরিচিত নয়, বরং এটি এক অদ্ভুত এবং বিরল সংগ্রহশালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখানে বিভিন্ন ভ্রমণকারীর হারানো লাগেজ থেকে প্রাপ্ত জিনিস রয়েছে। যার মধ্যে আছে অদ্ভুত, মজাদার এবং বিলাসবহুল আইটেম।

১৯৭০ সালে ‘আনক্লেইমড ব্যাগেজ’ দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেন ডয়েল ওন্স নামক এক ব্যক্তি। যিনি একদিন জানতে পারেন যে, ট্রেইলওয়ে বাস সার্ভিসে অসংখ্য হারানো লাগেজ জমে আছে এবং তা বিক্রির জন্য একটি জায়গা প্রয়োজন। তিনি ৩০০ ডলার ঋণ নিয়ে এবং একটি পুরানো পিকআপ ট্রাক নিয়ে হারানো লাগেজ সংগ্রহ করতে বের হন। তার উদ্যোগ এতটাই সফল হয়েছিল যে, তিনি শেষ পর্যন্ত নিজের ইন্স্যুরেন্স ব্যবসা ছেড়ে পুরোপুরি এই উদ্যোগে মনোযোগ দেন।

পরে ১৯৯৫ সালে ডয়েলের ছেলে ব্রায়ান ওন্স দোকানটি কিনে নেন এবং তার পর থেকে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এখন বছরে ‘আনক্লেইমড ব্যাগেজ’ নাম এই দোকানে ১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ আসেন। দোকানে প্রতিদিন গড়ে ৭,০০০ নতুন আইটেম যোগ হয়। যার মধ্যে থাকে পোশাক, গহনা, ইলেকট্রনিক পণ্য এবং অন্যান্য অনেক লাগজারি পণ্য। কিছু নতুন পণ্যও এখানে বিক্রি হয়, তবে ৯০% পণ্যই আসে হারানো লাগেজ থেকে।

এই দোকানে এমন কিছু বিলাসবহুল পণ্য পাওয়া গেছে, যা ভ্রমণকারীরা কখনও কল্পনাও করতে পারেননি। যেমন একটি গুচি (Gucci) ব্যাগ, যাতে ছিল মিশরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিস। এছাড়া, একবার নাসার কর্মীর হারানো স্পেস শাটল ক্যামেরাও পাওয়া গেছে। এসব আইটেমের মধ্যে অনেক কিছু বহু মূল্যবান এবং সংগ্রাহকদের কাছে অমূল্য। এসব পণ্য কেবল হারানো লাগেজের অংশ নয়, বরং ভ্রমণের সাথে সম্পর্কিত এক অদ্ভুত এবং রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। 

 

11

‘আনক্লেইমড ব্যাগেজ’ দোকানে পোশাক ডিজাইনার রেট টার্নারের ডিজাইন করা পোশাক, এই পোশাকগুলো ১৯৮০ এর দশকে হারানো স্যুটকেসে পাওয়া গিয়েছিল, ছবি: সিএনএন ট্রাভেল

 

এই দোকানটি ভ্রমণকারীদের জন্য শুধু কেনাকাটা করার জায়গা নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে সংগ্রাহকদের এক তীর্থস্থান। ৫৯ বছর বয়সী ওয়েড ডুবোস নাম এক ক্রেতা তিনি নিয়মিত এখানে আসেন এবং পছন্দসই পণ্য কিনে তা আবার তা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, “এটি এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চার, এখানে কখনই জানি না কী পাওয়া যাবে।” একদিন এক ভ্রমণকারী পুরানো লুই ভুইটন ডাফেল ব্যাগ কিনেছিলেন এই দোকান থেকে। যেটি সাধারণত হাজার হাজার ডলারে বিক্রি হয়, তবে তিনি মাত্র ৩৫০ ডলারে সেটি পেয়ে যান।

‘আনক্লেইমড ব্যাগেজ’ শুধু একটি দোকান নয়। এখানে হারানো লাগেজের প্রতিটি আইটেম যেন একটি নতুন জীবন পায়। ভ্রমণকারীদের হারানো জিনিসগুলো এখান থেকে নতুনভাবে বিক্রি হয়ে নতুন মালিকের কাছে পৌঁছে যায়। এবং সেই সাথে এটি বিশ্বের ভ্রমণকারীদের জন্য এক অনন্য আকর্ষণ হয়ে ওঠেছে। 

তথ্য সূত্র: সিএনএন ট্রাভেল

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ