মিশরের প্রাচীন শহর থিবসের কারনাকে সূর্য ও বাতাসের দেবতা ‘আমান’-এর মন্দির ছিল। সেই মন্দিরের পুরোহিত ছিলেন নেসিয়ামান নামের এক ব্যক্তি। প্রায় তিন হাজার বছর আগে মন্দিরেই মৃত্যু হয় তার। এরপর তাকে মমি করে রাখা হয়। ২০২০ সালেই তার মমি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন গবেষকরা। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে তার থ্রিডি স্ক্যান রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিজ্ঞানীরা।
তিন হাজার বছর আগে মৃত ব্যক্তিকে ‘বাঁচিয়ে’ তুলে তার শেষ ইচ্ছার কথাও শোনেন বিজ্ঞানীরা। এতো বছর পর ‘বেঁচে উঠে’ কী বললেন ওই পুরোহিত? আর কীভাবেই বা তা সম্ভব হলো এমন নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নেটে।
তার কণ্ঠ খুব ক্ষীণ ও অস্পষ্ট হওয়ায় শেষ ইচ্ছার কথা বিজ্ঞানীরা এখনও ভালো করে বুঝতে পারেননি। তবে তিনি কয়েকটি শব্দ উচ্চারণ করেছেন তা স্পষ্ট শুনেছেন বিজ্ঞানীরা। খুব তাড়াতাড়ি উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মৃত্যুকালে তিনি ঠিক কী বলতে চেয়েছিলেন, তা সম্পূর্ণ বাক্যের মাধ্যমে উদ্ধার করতে পারবেন তারা।
শেষ জীবনে মুখে সংক্রমণ হয়ে গিয়েছিল নেসিয়ামানের। মুখের সংক্রমণের জন্য শেষ জীবনে তিনি কথা বলতে পারতেন না। খুব কষ্টে কিছু উচ্চারণ করতে পারতেন মাত্র। সংক্রমণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে দাঁত, মাড়ি ক্ষয়ে যেতে শুরু করেছিল। এই সংক্রমণ থেকেই সারা শরীরে মারাত্মক আলার্জি হয়ে যায়। মাত্র ৫০ বছর বয়সে তিনি মারা যান। সেই দেহ মমি করে রাখা হয়।

ভোকাল ট্র্যাকের ডাইমেনশন থ্রিডি-প্রিন্টারে কপি করেন বিজ্ঞানীরা, ছবি: ইন্ডেপিডেন্ট ইউকে
মমিটি ১৮২৩ সালে উদ্ধার করে ব্রিটেনের লিডস সিটি মিউজিয়ামে দর্শকদের জন্য প্রদর্শন করে রাখা হয়। এই মমি নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা চালিয়েছেন। সে সময়ের মিশর সম্পর্কে অনেক তথ্য এই মমি থেকে মিলেছে। ব্যবচ্ছেদ ও এক্স-রে ব্যবহার করে তার রোগ সম্পর্কেও তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি সায়েন্টিফিক রিপোর্টস নামে এক জার্নালে মৃত্যুর তিন হাজার বছর পর ওই মমির কথা বলার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
জানা যায়, থ্রিডি প্রিন্টার ভোকাল বক্সের মাধ্যমে মমিকে কথা বলিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মানুষের ল্যারিংসে শব্দ তৈরি হয়। আর ভোকাল ট্র্যাক প্যাসেজে সেই শব্দ ফিল্টার হয়ে অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরি করে। এই পুরো বিষয়টাকে একসঙ্গে মানুষের ভয়েস বক্স বলা হয়।
তিন হাজার বছর আগে নেসিয়ামান শেষ যে কথাটা বলেছিলেন, তা জানার জন্য প্রথমে বিজ্ঞানীরা তার ভোকাল ট্র্যাকের ডাইমেনশন থ্রিডি-প্রিন্টারে কপি করেন। তবে এই পদ্ধতি তখনই সম্ভব, যদি মৃত ব্যক্তির ভোকাল ট্র্যাকের নরম কোষগুলো অক্ষত থাকে। এক্ষেত্রে তার ভোকাল ট্র্যাকের কোষগুলো অক্ষত রয়েছে।
ওই মমির ভোকাল ট্র্যাকের কপি করে ল্যারিংসে কৃত্রিমভাবে তার কণ্ঠস্বর তৈরি করা হয়। সেখানেই ক্ষীণ কণ্ঠে ‘বেড’ বা ‘ব্যাড’ জাতীয় কিছু শব্দ উচ্চারণ করতে শোনা গেছে তাকে। এটাই ছিল তার মৃত্যুর আগে শেষ কথা। এই কথার অর্থ জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। সবেমাত্র একটি শব্দ, তবে এভাবেই শেষ বাক্য জানারও চেষ্টা চলছে। তা সম্ভব হলে, মৃত্যুর তিন হাজার পর জানা যাবে ওই ব্যক্তির শেষ ইচ্ছে।
তথ্যসূত্র: সায়েন্টিফিক রিপোর্টস ও পপুলার সায়েন্স