Home সর্বশেষ ৪০০ বছর বৃষ্টি হয়নি যে স্থানে

৪০০ বছর বৃষ্টি হয়নি যে স্থানে

মোহাম্মদ রবিউল্লাহ
১০২ views

বৈচিত্রময় এই পৃথিবীর অনেক কিছুই এখনও অজানা। এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানে এখনও মানুষ পৌঁছাতেও পারেনি। এমন জায়গা রয়েছে যেখানে এখনও সূর্যের আলো পড়েনি। আবার অন্যদিকে খরা, বন্য বা তুষারপাতে বিপর্যস্ত অনেক দেশ। এত কিছুর মাঝে পৃথিবীতে এমন একটি স্থান রয়েছে যেখানে টানা ৪০০ বছরেও এক ফোঁটা বৃষ্টি হয়নি।

বিস্ময়কর এই স্থানের নাম হচ্ছে আতাকামা মরুভূমি। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির উত্তরে অবস্থিত একটি শীতল, শুষ্ক ও বৃষ্টিহীন অঞ্চল এটি। ৪০ হাজার বর্গমাইলের বেশি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত আতাকামা মরুভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন শুষ্কতম মরুভূমি হিসেবে পরিচিত।

মঙ্গলে অভিযানের পরীক্ষা

এটি একমাত্র প্রকৃত মরুভূমি যেখানে মেরু অঞ্চলের মরুভূমিগুলোর চেয়েও কম বৃষ্টিপাত হয়। আতাকামা মরুভূমি লবণের স্তর, বায়ু দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত শিলা, ফেলসিক লাভা, বিশাল বালির টিলা দ্বারা গঠিত। যার ফলে এর ভূ-প্রাকৃতিক দৃশ্য সবাইকে আকর্ষণ করে। বিশেষ করে টিলা ও শুষ্ক মরুভূমির কিছু কিছু অংশ মঙ্গল গ্রহের মতো দেখায়।

মঙ্গল গ্রহে অভিযানের জন্য পৃথিবীতে পরীক্ষামূলক সাইট হিসেবে ব্যবহৃত হয় আতাকামা। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা এখানকার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের জন্যই এই স্থানকে মঙ্গলযান রোভারগুলোর পরীক্ষামূলক সাইট হিসেবে ব্যবহার করছে। মঙ্গলে অভিযান করার আগে এখানকার মাটি নিয়ে পরীক্ষা করে।

মরুভূমি

১৫৭০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ৪০০ বছরে আতাকামায় এক ফোঁটা বৃষ্টিও পড়েনি, ছবি: সিএনএন

বৃষ্টিহীন ৪০০ বছর

১৫৭০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ৪০০ বছরে এই আতাকামা মরুভূমিতে এক ফোঁটা বৃষ্টিও পড়েনি। গবেষণায় উঠে এসেছে, পরিমাণ মতো বৃষ্টি না হওয়ায় কিছু নদীর তলদেশ ১২০ হাজার বছর ধরে শুকিয়ে রয়েছে। যদিও এই বৃষ্টি না হওয়ার পেছনে রয়েছে উত্তরে প্রবাহিত হামবোল্ট সাগরের স্রোত ও শক্তিশালী প্রশান্ত মহাসাগরীয় অ্যান্টিসাইক্লোনের উপস্থিতি।

চারশ বছর পর ১৯৭১ সালে এখানে বৃষ্টি হয়। এরপর আতাকামা মরুভূমির ফুল ফোটার ঘটনা সবাইকে অবাক করে দেয়। জানা যায়, সেই সময় হঠাৎ বৃষ্টির ফলে মরুভূমি নানাপ্রান্তজুড়ে রঙিন ফুল ফোটার মতো ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞানীরা বলেন, এল নিনোর কারণে যখনই আতাকামা মরুভূমিতে বৃষ্টি হয়, তখনই মরুভূমি ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। এমনকি চলতি বছর জুলাই মাসে বৃষ্টি হয়েছিল, আর সেই সময়ও একই রকমের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। যা সবাইকে আন্দোলিত করেছিল।

বিস্ময়কর আতাকামা

বছরের পর বছর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এখানকার পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা। মাইলের পর মাইল হেঁটে গেলেও দেখা মেলে না কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণির। তবে এই মরুভুমির যেসব স্থানে বৃষ্টি হয় সেখানে ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। মরুভুমির বালির নিচে সুপ্ত অবস্থায় থাকে লাখ লাখ ফুলের বীজ, বৃষ্টির পানি বালির নিচে প্রবেশ করে এসব বীজগুলোতে প্রাণের সঞ্চার করে। ধীরে ধীরে গাছগুলো বেড়ে ওঠে এবং বিভিন্ন রঙের ফুল ফুটতে থাকে। একে সুপার ব্লুম বলা হয়।

মরুর ফুল

মরুভুমির বালির নিচে সুপ্ত অবস্থায় থাকে লাখ লাখ ফুলের বীজ, ছবি: সিএনএন

মে মাসের দিকে বৃষ্টি হয় আর সেপ্টেম্বর-নভেম্বরের দিকে মরুভূমির মাঝে ফুলের দেখা মিলে। এই ফুলের গাছ ছাড়া আতাকামা মরুভূমিতে আর কোনো প্রকার বৃক্ষের খোঁজ পাওয়া যায় না। এই মরুভূমির অধিকাংশ জায়গায় পাথুরে ভূমি, ধুসর বালি, লবণ হ্রদ এবং ফেলসিক লাভা দিয়ে ঢাকা।

খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার

এর নিচে রয়েছে খনিজ সম্পদের এক বিশাল ভাণ্ডার। এই মরুভূমির অনেক অংশে ঘন লবণ সঞ্চিত হয়ে আছে যা কয়েক মাইল বিস্তৃত ও প্রায় অর্ধ মিটার পুরু হয়। এখানে ৪৩৫ মাইল লম্বা ও ১২ মাইল প্রশস্ত একটি স্তর আছে যা নাইট্র্রেট বেল্ট নামে পরিচিত। রাসায়নিক সার ও বিস্ফোরক তৈরিতে এর ব্যবহার করা হয়।

আতাকামা মরুভূমির কিছু অংশ প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর ধরে শুষ্ক অবস্থায় রয়েছে। আতাকামা এতটাই শুষ্ক যে ৬০০০ মিটার উঁচু অংশটাও হিমবাহ থেকে মুক্ত। শুধু সর্বোচ্চ চূড়া ওজোস দেল সালাডো, মন্টে পিসিস ও লুল্লাইলাকোতে কিছু স্থায়ী তুষার রয়েছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিবাহক

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত চিলি এই মরুভুমি থেকে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করতো এবং চিলির সম্পদের এক বিরাট অংশের যোগান দেয় এই মরুভূমি। একসময় বিশ্বের নাইট্রেট ব্যবসায় চিলির ছিল একক আধিপত্য। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কৃত্রিম নাইট্রেটের উদ্ভাবন আতাকামা থেকে নাইট্রেট নিষ্কাশনে ভাটার সৃষ্টি করে এবং চিলি নাইট্রেটের একটি আঞ্চলিক বাজারে পরিণত হয়। ফলে চিলি সরকার তামার খনি শিল্পে মনোযোগ দেয়।

ফ্লেমিং বার্ড

চিলির বৃহত্তম লবণভূমি, সালার দে আতাকামা থেকে ফ্লেমিঙ্গো পাখি দেখা যায়, ছবি: ট্রাভেল এন্ড লেইজার

বর্তমান হালচাল

বর্তমানে এই তামার খনিগুলোই অঞ্চলটির মূল আয়ের উৎস। এছাড়া আছে লিথিয়াম, তামা ও আয়োডিন। আতাকামা মরুভুমি পৃথিবীতে কয়েকটি স্থানের মধ্যে একটি যেখানে বছরের অধিকাংশ দিনই মেঘমুক্ত পরিষ্কার আকাশ দেখতে পাওয়া যায়। এই মরুভূমি আকাশের তারা দেখার জন্য বিখ্যাত, মহাকাশ বিষয়ক গবেষণার জন্য বিশ্বের সেরা স্থান।

এখানে আছে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, পূর্ব এশিয়া ও চিলি প্রজাতন্ত্রের আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায় পরিচালিত বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ৬৬টি বেতার দূরবীনের শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক।

চন্দ্রপৃষ্ঠের হাতছানি

এখানে ‘ভ্যালি অফ ডেথ’ নামে একটি স্থান আছে যেখানে ৪০০ ফুট উঁচু বালিয়াড়ি আছে, যা স্যান্ডবোর্ডিংয়ের জন্য উপযুক্ত। আছে ভ্যালি ডি লা লুনা বা চাঁদের উপত্যকা। এর চারিদিকে তাকালে মনে হবে আপনি চন্দ্রপৃষ্ঠে আছেন। এই মরুভূমির আরেক অনন্য নিদর্শন হলো ‘হ্যান্ড অফ ডেজার্ট’। চিলির প্রখ্যাত ভাস্করশিল্পী মারিও ইররাজাবালার তৈরি এই ভাস্কর্য দেখতে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন।

আতাকামা মরুভূমি চিলি

আতাকামার নিচে রয়েছে খনিজ সম্পদের এক বিশাল ভাণ্ডার, ছবি: সিএনএন

পৃথিবীর বিরলতম স্থান

আতাকামা শুষ্ক হলেও এখানে এল টাটিও নামের একটি বিস্ময়কর স্থান রয়েছে। এটি মূলত গরম পানির ঝর্ণা বলেই পরিচিত। সূর্যোদয়ের সময় মাটি থেকে গরম পানি নির্গত হতে থাকে। শুধু তাই নয়, ভ্রমণের জন্য এই স্থানকে শ্রেষ্ঠ স্থান বলে মনে করা হয়। এমনকি এখানে থাকা চিলির বৃহত্তম লবণভূমি, সালার দে আতাকামা থেকে ফ্লেমিঙ্গো পাখি দেখা যায়। সব মিলিয়ে আতাকামা মরুভূমি পৃথিবীর বিরলতম স্থান।

স্থান, পণ্য, প্রোগ্রামিং, জীবনমান, সমৃদ্ধি এবং প্রচার- এই ৬টি মানদণ্ডে র‌্যাংকিংটি করা হয়েছে। ‘রিয়েল এস্টেট ও ট্যুরিজম কনসালটেন্সি ফার্ম রেজোন্যান্স’ এর উদ্যোগে এটি পরিচালিত হয়। আর্থিক ও ব্যবসায়িক বিষয়গুলোকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে তারা এই তালিকা করে।

১১ মিলিয়ন জনসংখ্যার শহরটি তার বৈচিত্র্যপূর্ণ রেস্তোরাঁগুলোর জন্য বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। এছাড়াও শহরটির বিলাসবহুল সম্পত্তি ও বিশ্বের ধনীদের ব্যাপক আকর্ষণও এই র‌্যাংকিংয়ে বিশেষভাবে মূল্যায়িত হয়।

 

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ