শেয়ারবাজারে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের রক্ষণাবেক্ষণ ফি ৩০০ টাকা কমছে। বর্তমান ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বালাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৫৬তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিশন সভা শেষে বিএসইসি পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, দেশের শেয়ারবাজারে বিও হিসাবের মেইনটেন্যান্স (রক্ষণাবেক্ষণ) ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কমিশন সভায়। এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিও হিসাবের রক্ষণাবেক্ষণ ফি কমানোর পাশাপাশি কমিশন সভায় আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলো এবং যেসব কোম্পানিতে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের যৌথভাবে ৩০ শতাংশের নিচে শেয়ার হোল্ডিং বিদ্যমান, সেসব কোম্পানি ‘কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড, ২০১৮’ পরিপালন করে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রস্তাবিত ‘চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (কমোডিটি ডেরিফেটিভস) রেজুলেশন, ২০২৫ প্রবিধানমালাটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রবিধানমালাটি অনুমোদনের ফলে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ কমোডিটি মার্কেট অপারেশন চালু করতে পারবে। ফলশ্রুতিতে দেশের পুঁজিবাজারে কমোডিটি ডেরিভেটিভ পণ্য লেনদেন শুরু হবে বলে আশা করা যায় যা
শেয়ারবাজারের বৈচিত্রায়নকে অধিকতর ত্বরান্বিত করবে। কমোডিটি মার্কেট অপারেশন চালুর মাধ্যমে দেশের শেয়ারবাজার ডেরিভেটিভ পণ্যের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে দেশের পুঁজিবাজারের জন্য একটি অনন্য মাইলফলক।
সমন্বিত গ্রাহক হিসাব (সিসিএ) থেকে অর্জিত সুদ আয়ের ২৫ শতাংশ স্টক এক্সচেঞ্জের ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ডে জমা দিয়ে বাকি অর্থ ব্রোকাররা ব্যবহার করতে পারবে।
বার্জার পেইন্টের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ২৭ লাখ ২৮ হাজার ১১১টি সাধারণ শেয়ার প্রতিটি ১ হাজার ১১০ টাকা মূল্যে (শেয়ার প্রতি ১ হাজার ১০০ টাকা হারে প্রিমিয়ামসহ) ১:১ হারে রাইটস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে (উদ্যোক্তা, পরিচালক ও ৫ শতাংশ বা তার অধিক শেয়ারধারকারী কর্তৃক রাইটস শেয়ার পরিত্যাগ করার পর) মোট ৩০২ কোটি লাখ ৮২ হাজার ৩ হাজার ২১০ টাকা মূলধন সংগ্রহের আবেদন কমিশন অনুমোদন করেছে। বার্জার পেইন্ট এই রাইটস শেয়ার ইস্যু থেকে সংগ্রহ করা অর্থ ন্যাশনাল স্পেশাল ইকোনোমিক জোনে তৃতীয় কারখানা স্থাপন ও রাইট ইস্যু সংক্রান্ত খরচ মেটানোর জন্য ব্যবহার করবে। আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমেটেড এক্ষেত্রে ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করছে।
দাখিল করা দলিলাদি সন্তোষজনক না হওয়ায় সার্বিক দিক বিবেচনায় জিপিএইচ ইস্পাতের রাইট শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব নামঞ্জুর করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ১৬ কোটি ১২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৮৫টি সাধারণ শেয়ার প্রতিটি ১৫ টাকা মূল্যে (শেয়ারপ্রতি ৫ টাকা হারে প্রিমিয়ামসহ) ১:৩ হারে রাইটস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মোট ২৪১ কোটি ৯৪ লাখ ১৭ হাজার ২৭৫ টাকা মূলধন সংগ্রহের আবেদন করে।
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ও বাজারের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিএসইসি কর্তৃক গঠিত ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ কর্তৃক সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলসের বিষয়ে পেশ করা চূড়ান্ত সুপারিশমালার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে। যার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি দুটি সংস্কারের আইনি প্রক্রিয়া শুরু হলো। ফলশ্রুতিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি পাবে এবং সর্বোপরি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। এই সংস্কারের ফলে আগামীতে ভালো ও মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে উৎসাহিত হবে এবং দেশের মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।