Home স্বাস্থ্য চায়ের সঙ্গে ধূমপান, যা বলছে গবেষণা

চায়ের সঙ্গে ধূমপান, যা বলছে গবেষণা

উপমা ইসলাম রুপা
৭৬ views

সকালের চা আর একটানে ধোঁয়ার কুণ্ডলি অনেকের জীবনের প্রতিদিনকার অংশ। চা ও সিগারেটের এই যুগলবন্দি যেন এক অভ্যাসগত কম্বো। বিশেষ করে শহুরে ব্যস্ত জীবনে। কিন্তু গবেষণা বলছে, এই অভ্যাসটি শরীরের ওপর এক ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলছে, যা ধীরে ধীরে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।

এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এস এম হাসান মাহমুদ বলেন, চা ও ধূমপান এক সঙ্গে গ্রহণ করলে ক্যান্সার, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। চা-সিগারেটের এই যুগলবন্দি অভ্যাসের নানা ক্ষতিকর দিক নিয়ে তিনি কিছু পরামর্শ দেন।

চা-ধূমপানের যৌথ প্রভাব
ধূমপান যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি চায়ের সঙ্গে সিগারেট খেলে ক্ষতির মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যায়। গবেষণায় প্রমাণিত, চায়ের সঙ্গে ধূমপানের ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর যে প্রভাব পড়ে তা আরও দ্রুত ও গভীরতর হয়।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট নষ্ট করে দেয়

সবুজ বা কালো চা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা শরীরকে ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। কিন্তু ধূমপানের নিকোটিন ও টক্সিন উপাদান চায়ের এই উপকারী অ্যান্টি-অক্সিডেন্টকে নষ্ট করে দেয়। ফলে চায়ের উপকারিতা হারিয়ে উল্টো ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে।

হার্ট ও রক্তনালীর ওপর মারাত্মক চাপ

চা ও ধূমপান উভয়ই হৃদস্পন্দন বাড়ায়। দুটি একসঙ্গে গ্রহণ করলে এটি উচ্চ রক্তচাপ, অ্যারিথমিয়া ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। একটি চাইনিজ গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত চা ও ধূমপায়ীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার ২.৫ গুণ বেশি।

চা ধূমপান

নিয়মিত চা ও ধূমপায়ীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার ২.৫ গুণ বেশি, ছবি: নিউ ইয়র্ক পোস্ট

পাঁচনতন্ত্রের ওপর প্রভাব
চা ও নিকোটিন উভয়ই পাকস্থলির অ্যাসিড উৎপাদন বাড়িয়ে তোলে। একত্রে গ্রহণ করলে এটি গ্যাস্ট্রিক, আলসার এমনকি পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

মস্তিষ্কে আসক্তির চক্র তৈরি
চায়ে থাকা ক্যাফেইন ও সিগারেটে থাকা নিকোটিন, দুটি উপাদানই নিউরোট্রান্সমিটার ‘ডোপামিন’ বাড়িয়ে দেয়। ফলে একসঙ্গে গ্রহণ করলে মস্তিষ্কে তীব্র আসক্তির চক্র তৈরি হয়। যেটি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলে।

গবেষণাভিত্তিক প্রমাণ
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের এক গবেষণায় দেখা যায় , দিনে ৩ কাপের বেশি চা ও ১০টি সিগারেট খেলে ফুসফুস ও যকৃতের ক্ষয় ৪০% বেড়ে যায়। অন্যদিকে হার্বার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের তথ্য বলছে, চা ও ধূমপান একসঙ্গে করলে মুখ, গলা ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ হয়।

বিকল্প অভ্যাসের পরামর্শ

চায়ের সময় ধূমপান বর্জন করুন। চাইলে চায়ের সঙ্গে বাদাম, ফল বা হালকা নাস্তা রাখতে পারেন। ধূমপান ত্যাগের জন্য নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা কাউন্সেলিং গ্রহণ করতে পারেন। হেলথ অ্যাপস বা স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করে সিগারেট গ্রহণের সময় নজরদারি করুন ও ধীরে ধীরে কমান।

চায়ের সঙ্গে ধূমপানের যুগল অভ্যাস যতই আরামদায়ক হোক না কেন, এটি শরীরের জন্য একটি নিঃশব্দ ঘাতক। চা যদি সুস্থতা বয়ে আনে, তবে ধূমপান তার বিপরীত স্রোতে টেনে নিয়ে যায়। তাই এই অভ্যাসের ক্ষতিকর দিকগুলো বুঝে জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনা ভীষণ জরুরি।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ