Home বাণিজ্য ইইউতে পোশাক রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ

ইইউতে পোশাক রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ

ইকবাল হোসেন
৮৮ views

পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা অনিশ্চয়তার মধ্যে ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেশ কমেছিল। রপ্তানিকারকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। ফের আশার আলো দেখা গেছে অক্টোবরে। এ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান অফিসের (ইউরোস্ট্যাট) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ থেকে মোট ১৭৫ কোটি (১.৭৫ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক আমদানি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। এই অঙ্ক গত বছরের অক্টোবর মাসের চেয়ে প্রায় ৩৪ শতাংশ বেশি। এর আগে কখনই এক মাসে এই বাজারে এতো বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা যায়নি।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ইউরোপে পোশাক রপ্তানি করে ১৩০ কোটি (১.৩০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিলেন বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা।

সাতাশ দেশের জোট ইইউ বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশের মতো আসে এই বাজার থেকে।

ইউরোস্ট্যাট’র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালের প্রথম দশ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) ইউরোপের বাজারে ১ হাজার ৬৫২ কোটি ২৬ লাখ (১৬.৫২ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকরকরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।

২০২৩ সালের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে এই বাজারে ১ হাজার ৬২৮ কোটি ৯৫ লাখ (১৬.২৯ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।

অথচ ২০২৪ সালের প্রথম নয় মাসের হিসাবে অর্থাৎ জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে ইউরোপে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছিল ২ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ।  ওই নয় মাসে ইউরোপের বাজারে ১ হাজার ৪৯০ কোটি ৬৬ লাখ (১৪.৯০ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। ২০২৩ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ১৪ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট—আট মাসে ইইউতে বাংলাদেশ ১ হাজার ২৯১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৩৩৮ কোটি ডলার। সেই হিসাবে ওই আট মাসে রপ্তানি কমেছিল সাড়ে ৩ শতাংশ।

ইউরোস্ট্যাটের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) ইইউর কোম্পানিগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে ৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ৬৩ লাখ (৭৭.৭৭ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। এই আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি।

ইইউতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। চীন সবার শীর্ষে। তৃতীয় তুরস্ক।

চলতি বছরের জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে চীন ইউরোপের বাজারে ২১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩ সালের একই সময়ে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ২১ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার।

তবে এই বাজারে তুরস্কের রপ্তানি বেশ খানিকটা কমেছে; ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে তুরস্ক ইউরোপে ৮ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। ২০২৩ সালের এই দশ মাসে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৯ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।

ইউরোপে রপ্তানিতে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। জানুয়ারি-অক্টোবর সময়ে ভারত ইউরোপের বাজারে ৩ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেল প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক শূন্য এক শতাংশ।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় সংঘাতময় পরিস্থিতিতে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হয়। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়।

এর মধ্যে গাজীপুর ও ঢাকার সাভারে শ্রমিক অসন্তোষের বেশ কয়েক দিন অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে; উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এখনও স্বাভাবিক হয়নি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান এ খাতের কর্মকাণ্ড।

পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ গত ১৯ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অন্তত ৪০ কোটি ডলারের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‍্যাপিড ) এক গবেষণায় বলা হয়, ২০৩০ সালের মধ্যে ইইউর বাজারে বাংলাদেশের ৬৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব। পোশাকের বৈশ্বিক বাজারের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে এই পরিসংখ্যান দিয়েছে র‍্যাপিড। বর্তমান অবস্থায়ও ইইউতে বাড়তি ১৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ