Home স্বাস্থ্য শীতে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা

শীতে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা

হ্যালো বাংলাদেশ ডেস্ক
১৫৯ views

শীতে শিশুর খাওয়া, ঘুম, পোশাক, গোসল সবকিছু নিয়েই শুরু হয় বাড়তি ভাবনা। শীতের সময় শিশুদের মধ্যে অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। বয়সভেদে এ সময় শিশুরা নানা ধরনের শারীরিক ও ত্বকের সমস্যার মুখোমুখি হয়। ঠান্ডা আবহাওয়া ও শুষ্ক পরিবেশ শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তবে সঠিক যত্ন এবং কিছু সতর্কতা মেনে চললে সহজেই এই সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব। চলুন জেনে নেই শীতকালে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কিছু প্রয়োজনীয় দিক। এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

নবজাতকের সুরক্ষা

ভূমিষ্ট হবার পর প্রথম ২৮ দিন পর্যন্ত একটি শিশু নবজাতক হিসেবে বিবেচিত হয়। মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীতে আসার এই সময়ে শিশুর যত্নে থাকা চাই বাড়তি সতর্কতা। আর শীত মৌসুম হলে তো কথাই নেই। পরিবারের সবাইকে ছোট্ট সোনামনির সুরক্ষার বিষয়ে হতে হবে সচেতন।

এ সময় নবজাতককে মায়ের শরীরের সংস্পর্শে রাখা ভীষণ জরুরি। নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে মায়ের বুকের কাছাকাছি একই কাপড়ে ভালোভাবে জড়িয়ে রাখতে হবে। এই কাজটি পরিবারের অন্য সদস্যরাও করতে পারেন। মোটকথা নবজাতককে ত্বকের সংস্পর্শে রাখতে হবে।

Newborn Baby 03

ঠান্ডা আবহাওয়া ও শুষ্ক পরিবেশ শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, ছবি: পিক্সেল ডটকম

নবজাতকের খাবার

নবজাতকের সুস্থতার জন্য বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এ সময় মাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। শীতের কারণে অনেক মা কম পানি পান করে থাকেন। অনেকে আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গরম পানি পান করেন। যা নবজাতকের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। মায়ের কম পানি পানের কারণে শিশুর বুকের দুধের প্রোটিন হজমে সমস্যা হয়। এর ফলে বাচ্চার পায়খানা বেশি আঠালো হয় এবং অনেক সময় পায়খানা শক্ত হয়। যা থেকে পরবর্তীতে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। পানি পানের ক্ষেত্রে গরম পানি এড়িয়ে চলুন।

নবজাতকের গোসল

অনেকেই ভেবে থাকেন নবজাতকের জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই গোসল করানো উচিত। এতে তার গায়ে লেগে থাকা নানা রোগজীবাণু বাসা বাঁধতে পারে না। তবে চিরচরিত এ ধারণাটি নবজাতকের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হতে পারে। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নবজাতককে গোসল করানো উচিত নয়।

সাধারণত স্বাভাবিক তাপমাত্রার সময় ৩ দিন পর্যন্ত নবজাতককে গোসল বা শরীর মোছানোর বিষয়ে চিকিৎসকরা নিষেধ করে থাকেন। কারণ জন্মের সময় নবজাতকের শরীরে ‘ভার্নিক্স কেজিওসা’ নামে এক ধরনের সাদাটে আবরণ থাকে যা মায়ের গর্ভ থেকে শিশু পেয়ে থাকে। এই আবরণের একটা বিশেষ প্রভাব বাচ্চার ওপর রয়েছে। যা তার শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অনেক গুণ বৃদ্ধি করে।

Newborn Baby 05

শীতকালে নবজাতককে ১ থেকে ২ দিন পরপর গোসল করাতে হবে, ছবি: পিক্সেল ডটকম

তাই সাধারণত গরমের সময় ৩ দিন পর্যন্ত আর শীতের দিনে ৫ দিন পর্যন্ত নবজাতককে কোনো ধরনের গোসল না দেয়াই ভালো। ৩ দিন অথবা ৫ দিন পর শিশুর শরীরকে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিতে হবে। এই কাজটি অবশ্যই দিনের মাঝামাঝি সময় সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে করতে হবে।

কারণ এ সময় প্রকৃতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যের আলো ও উত্তাপ থাকে যা বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই গোসলের কাজটি কম সময়ের মধ্যে শেষ করে বাচ্চাকে পরিষ্কার শুকনো কাপড় দিয়ে আবৃত করে দিতে হবে। যাতে বাচ্চা হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত না হয়। বেশি সময় ধরে গোসল করালে হাইপোথারমিয়া বা শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে শিশুর মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। এ থেকে নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শীতকালে নবজাতককে ১ থেকে ২ দিন পরপর গোসল করাতে হবে।

‘ইনফ্যান্ট’ শিশুর সুরক্ষা

২৮ দিন থেকে এক বছর বয়স পর্যন্ত হামাগুড়ি দেওয়া শিশুদেরকে সাধারণত ‘ইনফ্যান্ট’ বলা হয়। শীতের এই সময়টাতে এই বয়সী শিশুদেরকে ফ্লোরে বা ঠান্ডা জায়গায় রাখা যাবে না। ঠান্ডা জায়গায় খেলতে দেওয়াও যাবে না। সব ধরনের খেলনা যথাযথভাবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। কারণ ‘ইনফ্যান্ট’ বাচ্চারা খেলনা মুখে নেয়। অপরিষ্কার খেলনা থেকে রোগ সংক্রমণের ঝুকি থাকে। শিশুকে অবশ্যই আরামদায়ক গরম পোশাক পরাতে হবে। ঠান্ডা লাগা এড়াতে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। প্রয়োজনে মোজা পরিয়ে রাখুন।

খাবার ও গোসল

এই বয়সী বাচ্চারা মায়ের বুকের দুধের ওপর নির্ভরশীল। তাই মাকে বেশি পরিমাণে পানি ও সতেজ খাবার খেতে হবে। যাতে মায়ের মাধ্যমে বাচ্চার খাবারের চাহিদা পূরণ হয়। এই শিশুদের ইষদুষ্ণ গরম পানি দিয়ে একদিন পরপর গোসল করাতে হবে।

Newborn Baby 04

শিশুদেরকে প্রতিদিন নিয়ম করে একই সময়ে পায়খানা করানোর অভ্যাস করাতে হবে, ছবি: পিক্সেল ডটকম

৫ বছরের কম এবং স্কুলগামী শিশুদের সুরক্ষা

এই বয়সী শিশুদের সুরক্ষায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখতে হবে। সব পরিবেশে খেলতে দেওয়া যাবে না। বায়ুদূষণ কম এমন পরিবেশে খেলতে উৎসাহিত করুন। শিশুদেরকে প্রতিদিন নিয়ম করে একই সময়ে পায়খানা করানোর অভ্যাস করাতে হবে। শীতের কারণে যাতে এতে বিঘ্ন না ঘটে। এ সময় প্রয়োজনে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। স্কুলগামী বাচ্চারা কোনো কারণে অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় রেখে চিকিৎসা দিতে হবে।

খাবার ও গোসল

ঠান্ডাজনিত রোগবালাই থেকে বাচতে শিশুদেরকে ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার বেশি দিতে হবে। এ সময়ে পর্যাপ্ত পানি ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এবং শাক-সবজি খেতে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে বাইরের খাবার না খায়। রোদে খেলার সুযোগ করে দিতে হবে। এই বয়সী শিশুদের প্রতিদিন গোসল করাতে হবে।

Newborn Baby 06

ভালো ঘুম শরীরে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমায়, ছবি: পিক্সেল ডটকম

নজর রাখুন

শীতের এই সময়ে গোসলের স্থান হিসেবে কিছুটা রোদযুক্ত জায়গা বেছে নিতে পারেন। এতে শিশু গোসলের সময় যেমন আরাম পাবে তেমনি পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘ডি’ তার শরীরে পৌঁছাবে। গোসলের সময় শিশুর কানে যাতে পানি না ঢোকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শীতে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে। এতে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। খসখসে ভাব দেখা দেয়।

এজন্য ত্বক আর্দ্র রাখতে গোসল শেষে নরম তোয়ালে দিয়ে শিশুর শরীর মুছে দিতে হবে। এরপর ত্বক আর্দ্র থাকতেই গায়ে লোশন মাখিয়ে দিতে হবে। এতে শীতের শুষ্কতা থেকে রেহাই পাবে শিশুদের ত্বক। এরপর দ্রুত শিশুকে শীতের পোশাক পরাতে হবে। ত্বক শুষ্ক, ঠোঁট ফাটা বা হাতে-পায়ে-আঙুলের ফাঁকে চুলকানির মতো সমস্যা হচ্ছে কিনা- এসব দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

খেয়াল রাখতে হবে বয়স অনুযায়ী শিশুরা নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুমাচ্ছে কিনা। কারণ ভালো ঘুম শরীরে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমায়। শিশুর ঘরকে ধুলোমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং ভেজা কাপড় দিয়ে ধুলো মুছুন।

আরও যা পড়তে পারেন

কমেন্ট করুণ